বিক্ষোভ চলছে বাড়ির সামনে। —নিজস্ব চিত্র।
পাহাড় এবং ডুয়ার্স থেকে পড়তে আসা পাঁচ ছাত্রীকে নানা রকম কটূক্তি করার অভিযোগে উত্তেজনা ছড়াল শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ায়। ওই ছাত্রীরা শিলিগুড়িতে থেকে কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। হাকিমপাড়া এলাকায় পঙ্কজ ঠাকুর নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে এক মাসের ভাড়া নিয়েছেন পাহাড় ও ডুয়ার্স থেকে আসা পাঁচ ছাত্রী। ওই বাড়িরই প্রথম এবং দ্বিতীয় তলে লীলা দত্ত এবং তাঁর বোন রুবি দত্ত ভাড়া থাকেন। অভিযোগ, ওই ছাত্রীরা ভাড়া আসার পর থেকেই তাঁদের নানা ভাবে বিরক্ত করতে থাকেন।
ছাত্রীদের আরও অভিযোগ, এর আগেও বহু বার নানা ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। কিন্তু বাড়ির মালিক প্রতি বারই হস্তক্ষেপ করে সেই সমস্যা মিটিয়েছেন। কিন্তু সোমবার অশান্তি মাত্রা ছাড়ায়। অভিযোগ, লীলা এবং রুবি ওই ছাত্রীদের উপর চড়াও হন। বাড়ির মালিকের কোনও অনুমতি না-নিয়েই কাঠমিস্ত্রিকে ডেকে এনে ঘরের জানলা বাইরে থেকে স্থায়ী ভাবে বন্ধ করার ব্যবস্থা করেন। আর এখান থেকেই অশান্তি চরম আকার নেয়। ছাত্রীদের অভিযোগ, তাঁরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তাঁদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন লীলা এবং রুবি। ছাত্রীদের ‘বহিরাগত’ বলেও আক্রমণ করা হয়। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দায় সরব হয় পাহাড়ের সমস্ত মহল।
সোমবারের এই ঘটনার রেশ মঙ্গলবারও দেখা গিয়েছে। সকালে ওই বাড়িটি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী এবং ওই ছাত্রীদের আত্মীয়েরা। পরিস্থিতি ক্রমে উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিলি সিন্হা, কাউন্সিলর শোভা সুব্বা-সহ অনেকে। তাঁরা অভিযুক্ত মহিলাদের ক্ষমা চাইতে বলেন। কিন্তু অভিযোগ, ওই মহিলারা আবার চড়াও হন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শিলিগুড়ি থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে অভিযুক্ত মহিলাদের থানায় নিয়ে যায়।
এই বিষয়ে দিশা থাপা নামে এক আবাসিক বলেন, ‘‘আমরা এখানে পড়তে এসেছি। ঘর ভাড়া নেওয়ার পর থেকে আমাদের নানা ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। এর আগেও বাড়ির মালিককে অভিযোগ জানিয়েছি। তার পরেও ওই ভাড়াটে মহিলাদের অত্যাচার কমেনি। এমন হাবভাব করতেন যেন ওঁরাই বাড়ির মালিক।’’ ওই ছাত্রীর অভিযোগ, ‘‘আমাদের জানলা খুলতে দেন না। ছাদ ব্যবহার করতে দেন না। প্রতিবাদ করলে কুরুচিকর মন্তব্য করেন। আমাদের উপর আক্রমণ করা হয়। আমরা চাই ওঁদের শাস্তি হোক।’’
তবে সমস্ত অভিযোগ খণ্ডন করেছেন অভিযুক্ত দুই মহিলা। তাঁদের মধ্যে এক অভিযুক্ত মহিলা লীলা বলেন, ‘‘আমরা কোনও আক্রমণ করিনি। বরং আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে।’’
আইজিএসএফ নেতা আয়ুষ অধিকারী বলেন, ‘‘এই ধরনের লোকজনের জন্যই সমাজের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। এই ধরনের মন্তব্যের জন্য জাতিবিবাদের মতো ঘটনার জন্ম নেয়। কড়া শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’
কাউন্সিলার মিলি সিন্হা বলেন, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। হওয়া উচিত ছিল না। তবে গোটা বিষয় নিয়ে বাড়ির মালিক ও পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’’
সহকারী পুলিশ কমিশনার রবীন থাপা বলেন, ‘‘অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’