যানজট, বেহাল নিকাশিতে নাকাল রায়গঞ্জ

রায়গঞ্জ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়! গত বছর পুজোর মুখে সত্যিই রায়গঞ্জ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়ার আগে সত্যিই কেউ বিশ্বাস করতেন না সে কথা। শহরের প্রবীণ বাসিন্দারা কিন্তু জানাচ্ছেন, বেশ কয়েক বছর আগে রায়গঞ্জ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়া কোনও নতুন কথা ছিল না। পরিবেশ বিজ্ঞানীরাও আশ্চর্য হননি। কারণ, একটা সময়ে আকাশে মেঘ না থাকলে রায়গঞ্জ থেকে মাঝে মধ্যেই কাঞ্চনজঙ্ঘার সোনালি শৃঙ্গ দেখা যেত।

Advertisement

গৌর আচার্য

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৪ ০২:০১
Share:

রায়গঞ্জে গজিয়ে উঠছে বহুতল।

রায়গঞ্জ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়!

Advertisement

গত বছর পুজোর মুখে সত্যিই রায়গঞ্জ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়ার আগে সত্যিই কেউ বিশ্বাস করতেন না সে কথা। শহরের প্রবীণ বাসিন্দারা কিন্তু জানাচ্ছেন, বেশ কয়েক বছর আগে রায়গঞ্জ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়া কোনও নতুন কথা ছিল না। পরিবেশ বিজ্ঞানীরাও আশ্চর্য হননি। কারণ, একটা সময়ে আকাশে মেঘ না থাকলে রায়গঞ্জ থেকে মাঝে মধ্যেই কাঞ্চনজঙ্ঘার সোনালি শৃঙ্গ দেখা যেত। তখন রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড় এলাকার বিএসএনএল-এর টাওয়ারের উচ্চতা থেকে যতদূর চোখ যেত শুধুই সবুজে সবুজ দৃশ্য। হাতে গোনা কয়েকটি পাকা বাড়ির দেখা মিলত। জনসংখ্যার চাপে ক্রমশ বসতি বেড়ে চলায় সে সবই এখন অনেকটাই অতীত। এখন রায়গঞ্জ অনেক দিক থেকেই উত্তরবঙ্গের যে কোনও বড় মাপের শহরের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। শিক্ষা, পুর পরিষেবার পরিকাঠামো আগের তুলনায় এখন অনেকটাই আধুনিক।

অবশ্য রায়গঞ্জের আধুনিক হওয়ার পথটা অতটা মসৃণ ছিল না। প্রবীণ বাসিন্দারা মনে করেন, দীর্ঘ লড়াইয়ের ফসল হিসেবেই গড়ে উঠেছে হালফিলের শহর। রায়গঞ্জবাসীর দীর্ঘ আন্দোলনের জেরে ১৯৯২ সালের ১ এপ্রিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার পশ্চিম দিনাজপুর জেলা ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গঠন করে। উত্তর দিনাজপুরের জেলা সদর হিসেবে রায়গঞ্জ স্বীকৃতি পায়। তার আগে রায়গঞ্জ পশ্চিম দিনাজপুর জেলার মহকুমা শহর ছিল।

Advertisement

জেলা ভাগের পর রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় বিভিন্ন সরকারি দফতর মহকুমা স্তর থেকে জেলা স্তরে উন্নীত হয়। সেই থেকেই ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে রায়গঞ্জ। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের কয়েকজনের মতে, দেশভাগের আগে রায়গঞ্জের নাম রাইগঞ্জ ছিল। কারণ, তখন এলাকায় প্রচুর পরিমাণে রাই শস্যের চাষ হতো। সেই কারণে এলাকার নাম রাইগঞ্জ হয়। দেশভাগের পর রায় জনগোষ্ঠীর তরফে রাইগঞ্জের নামকরণ রায়গঞ্জ করা হয় বলেও আর একটি মত রয়েছে। এ ছাড়াও রায়গঞ্জ নামকরণ নিয়ে আরও নানা মতও শোনা যায়।

পুরসভার নথিতে অবশ্য শহরের নামকরণ সংক্রান্ত কোনও নথি মেলে না। তবে শহরের জনঘনত্ব কী ভাবে বদলাচ্ছে তার একটা ধারণা মেলে ফ্ল্যাট গড়ার প্রবণতা কতটা বেড়েছে সেই হিসেব থেকে। পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় দশকে রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড় থেকে কসবা পর্যন্ত রাস্তার ধারে ও বিভিন্ন পাড়ায় ১০০টিরও বেশি ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরি হয়েছে। অনুষ্ঠানের জন্য ভবন তৈরি হয়েছে ৮টি। শহরের ২৫টি ওয়ার্ডের অধিকাংশে ঠাসাঠাসি নির্মাণ। যেমন, মিলনপাড়া, মোহনবাটী, বিধাননগর, রবীন্দ্রপল্লি, সুদর্শনপুর, দেবীনগর, কসবা, উকিলপাড়া, কলেজপাড়া, বীরনগর, রাসবিহারী মার্কেট, অশোকপল্লি, সুদর্শনপুর সহ শহরের সর্বত্রই নজরে পড়ে বহুতল। শিলিগুড়ি মোড় থেকে কসবা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকার রাস্তার ধারে তৈরি হয়েছে একাধিক বহুতল শপিং কমপ্লেক্স। অশোকপল্লি, মিলনপাড়া, রমেন্দ্রপল্লি, হাইরোড, রবীন্দ্রপল্লি, তুলসিতলা সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেআইনিভাবে জলাশয় বুজিয়ে বাড়ি তৈরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ।


যানজটে রাস্তা দিয়ে চলা দায়।

তবে রাস্তাঘাট পাকা হলেও নিকাশির হাল কিন্তু সর্বত্র ফেরেনি। তাই এখনও মিলনপাড়া, মোহনবাটী, রবীন্দ্রপল্লি, অশোকপল্লি, শক্তিনগর সহ শহরের একাধিক ওয়ার্ডে ভারি বৃষ্টি হলেই জল জমে যায়। শক্তিনগর এলাকার বাসিন্দা পেশায় সবজি ব্যবসায়ী রামচন্দ্র সাহা ও অশোকপল্লি এলাকার বাসিন্দা কলেজ ছাত্রী মণিকা সরকাররা আলাদা ভাবে হলেও একই সুরে দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন। তাঁদের কথায়, “এক ঘন্টা জোর বৃষ্টি হলেই আমাদের পাড়ার বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট জলের নীচে চলে যায়। যাতায়াতে সমস্যা হয়।” শহরের একাধিক ওয়ার্ডে নিকাশির সমস্যা নিয়ে জেরবার বাসিন্দারা। রায়গঞ্জ পুরসভার তৃণমূলের বিরোধী দলনেতা প্রিয়তোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “জল জমে যাওয়া রুখতে নিয়মিত নিকাশি নালা সাফাই হওয়া জরুরি।”

বড় রাস্তাগুলিতে সমস্যা আবার অন্য রকম। সেখানে যথেচ্ছ পার্কিংয়ের জেরে রাস্তায় হাঁটার উপায় নেই। রোজই যানজটে ভোগান্তির একশেষ বাসিন্দারা। শিলিগুড়ি মোড় থেকে কসবা মোড়ে যানজটের অন্যতম কারণই হল বেআইনি পার্কিং। অন্তত ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি তেমনই মনে করে। উত্তর দিনাজপুর বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্লাবন প্রামানিক বলেন, “শিলিগুড়ি মোড় থেকে কসবা মোড় পর্যন্ত পার্কিংয়ের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় বাসিন্দারা ছোট গাড়ি ও মোটরবাইক রাস্তার ধারে পার্কিং করতে বাধ্য হন। ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় পথচারীরা রাস্তার উপর দিয়ে হাঁটেন। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।” পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রণজকুমার দাস জানান, শহরে জায়গার অভাবে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন বলে তিনি দাবি করেছেন।

(চলবে)
ছবি: তরুণ দেবনাথ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন