প্রতীকী ছবি।
এ বার ওলা-উব্রের মতো মোবাইল অ্যাপ-নির্ভর অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। সেই অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে রোগীর কাছাকাছি ক’টি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে এবং কতক্ষণের মধ্যে তা পাওয়া যাবে।
সময় মতো অ্যাম্বুল্যান্স না পাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অনেক সময়ে তার জেরে মৃত্যুও হয় রোগীর। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের চালু হওয়া ‘পথদিশা’ অ্যাপ সার্ভিসে এই পরিষেবা ঢোকানো হতে চলেছে।
কোন বাস, কখন নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডে আসবে শুধু তা-ই জানা যেত পথদিশায়।
মাস চারেক আগের ঘটনা। পেটে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে ছটফট করছিলেন বজবজের মধ্য চল্লিশের গৃহবধূ অমৃতা পালধি। বজবজ ইএসআই হাসপাতালে যোগাযোগ করে অ্যাম্বুল্যান্স পাননি আত্মীয়েরা। স্থানীয় পুরসভায় তিন-চারটি অ্যাম্বুল্যান্স রাখা থাকে। কিন্তু সেই ভোরে কোনও চালককে পাওয়া যায়নি। ট্যাক্সি করে কলকাতার হাসপাতালে যাওয়ার পথে সব শেষ। অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে মৃত্যু হয়েছিল অমৃতার।
ক্রিক রো-এর বাসিন্দা স্যামুয়েল গোমস কিন্তু স্থানীয় ক্লাব থেকে সময় মতো অ্যাম্বুল্যান্স পেয়েছিলেন, কিন্তু রাস্তার যানজট ঠেলে সেই অ্যাম্বুল্যান্স ঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছতে পারেনি। হৃদরোগে আক্রান্ত স্যামুয়েলকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স যখন হাসপাতালে ঢোকে ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
রাত-বিরেতে অ্যাম্বুল্যান্স চালকের বেঁকে বসা, রোগীর পরিবারের থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা বা কমিশনের জন্য রোগীর পরিজনদের ভুল বুঝিয়ে এক হাসপাতালের বদলে অন্য হাসপাতালে নিয়ে ঢোকানোর মতো অসংখ্য ঘটনা ঘটে চলছে। অনেকে জানেনও না বিপদে পড়লে কোথায় অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া যাবে। এ সবের জেরে দিশাহারা হয়ে যান অনেক রোগীর পরিবার।
সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতেই এই উদ্যোগ। এমনকী সঙ্কটজনক রোগীর ক্ষেত্রে অ্যাম্বুল্যান্সটিকে বার করতে শহরে ‘গ্রিন করিডর’ করবে পুলিশ। ফলে ট্র্যাফিকে আটকে মূল্যবান সময় নষ্ট হবে না।
চলতি সপ্তাহেই হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটে পাইলট ভিত্তিতে এই অ্যাপ-নির্ভর অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালু হচ্ছে। পুজোর আগে কলকাতায় তা চালু হওয়ার কথা। এই পরিষেবার আওতায় হাওড়ার জন্য আপাতত কমিশনারেটের ছ’টি ও বেসরকারি ন’টি অ্যাম্বুল্যান্স থাকছে। কলকাতায় থাকছে সরকারি ৪০টি ট্রমাকেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স এবং ১৭টি বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স। ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নারায়ণস্বরূপ নিগমের কথায়, ‘‘প্রস্তুতি শেষ। পরিষেবা শুরুর তারিখ নিয়ে আলোচনা চলছে।’’
বিশ্ব ব্যাঙ্কের টাকায় শুরু হতে চলা এই পরিষেবায় সরকারকে সাহায্য করছে একটি বেসরকারি সংস্থা। তার কর্ণধার সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অ্যাপের মাধ্যমে যদি গ্রাহক সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পান তা হলে তাঁকে কোনও টাকা দিতে হবে না। বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পেলে টাকা দিতে হবে। তবে অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ দিতে হবে না।’’ প্রাথমিক পর্যায়ে উত্তর শহরতলির ব্যারাকপুর থেকে দক্ষিণের ঠাকুরপুকুর ও গড়িয়া পর্যন্ত এই পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা আছে।