আরজি কর-কাণ্ডের পরে যখন আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে দাবানলের মতো, তখন নানা ক্ষেত্রের নানা ‘মুখ’ উঠে এসেছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন কারণে তাঁরা সকলে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছিলেন। কেউ ‘সঠিক’ কারণে। কেউ ‘বেঠিক’ কারণে। কেউ ‘খ্যাত’ হয়েছিলেন। কারও কপালে জুটেছিল ‘কুখ্যাতি’। কেউ আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার তো কেউ জুনিয়রদের পাশে দাঁড়ানো সিনিয়র চিকিৎসক। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ‘থ্রেট কালচার’ (হুমকি সংস্কৃতি) চালানোর তো কেউ রাতারাতি খ্যাতি পেয়েছিলেন রাত দখলের ডাক দিয়ে। কেউ পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিক, যাঁরা সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছিলেন। কাউকে সরে যেতে হয়েছে পদ থেকে। কেউ আবার বহাল রয়েছেন স্বপদে।
এঁদের সঙ্গেই নিত্য আলোচনায় ছিলেন ওই ঘটনায় অভিযুক্ত এবং ঘটনার পরদিনই ধৃত কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়।
এক বছর পরে এঁরা কোথায়?
সরকারি হাসপাতালের ভিতরে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা যেমন সরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল, তেমনই সমান্তরাল ভাবে প্রকাশ্যে এসেছিল সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগ। আরজি কর হাসপাতালও তা থেকে মুক্ত ছিল না। সেই পর্বেই আলোচিত হয়েছিল সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ‘নর্থবেঙ্গল লবি’র (উত্তরবঙ্গ গোষ্ঠী) আধিপত্য এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। যা শাসক তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকদের মধ্যেও বিভাজন তৈরি করে দিয়েছিল। প্রসঙ্গত, আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষও সেই সূত্রে ছিলেন ‘নর্থবেঙ্গল লবি’ভুক্ত। যিনি দুর্নীতি মামলাতেই গ্রেফতার হয়ে আপাতত কারাবন্দি।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছিল কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। আন্দোলনের চাপে কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে লালবাজার থেকে সরাতে বাধ্য হয়েছিল নবান্ন। যদিও বিনীতের নেতৃত্বাধীন কলকাতা পুলিশ যে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়কে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করেছিল, সিবিআই তার বাইরে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে একদম প্রথমে সঞ্জয়ের সিভিক ভলান্টিয়ার পরিচয় বলতে অস্বীকার করা এবং তার পরে নির্যাতিতার নাম প্রকাশ্যে বলে দেওয়ার মতো একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত।
এক বছর আগে আন্দোলন পর্বে জুনিয়র চিকিৎসকদের একাধিক ‘মুখ’ নিছক চিকিৎসক থেকে ‘নেতা’ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদের ডাকে মিছিল, সভা এমনকি, ভরা পুজোর সময়ে অনশন মণ্ডপ ঘিরে জনস্রোতে ভেসে গিয়েছিল ধর্মতলা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্তিমিত হয়ে গিয়েছে আন্দোলন।
সেই সব অজস্র মুখের ভিড় থেকে আনন্দবাজার ডট কম বেছে নিয়েছে সেই সময়ের ১১টি মুখ। তাঁরা এখন কোথায়, কী করছেন, তার হদিস রইল ‘সেই একাদশ, এখন’ শীর্ষক গ্রাফিকে।
(তথ্য: সারমিন বেগম ও শোভন চক্রবর্তী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ)