জেল থেকে হুমকি, ‘পদ বলছি, টাকাটা তৈরি রাখিস কিন্তু’

অচেনা নম্বর, তা-ও রাত ন’টায়। সাড়া দেননি মাঝবয়সি প্রোমোটার। মিনিটখানেক পরে একই নম্বর থেকে ফের ফোন। এ বার ‘হ্যালো’ বলতেই হাড় হিম প্রোমোটারের। উল্টো দিকে সেই বাজখাঁই গলা— ‘‘কী রে চিনতে পারছিস?’’

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৭ ০২:৪০
Share:

প্রদীপ দেব ওরফে পদ।

অচেনা নম্বর, তা-ও রাত ন’টায়। সাড়া দেননি মাঝবয়সি প্রোমোটার। মিনিটখানেক পরে একই নম্বর থেকে ফের ফোন। এ বার ‘হ্যালো’ বলতেই হাড় হিম প্রোমোটারের। উল্টো দিকে সেই বাজখাঁই গলা— ‘‘কী রে চিনতে পারছিস?’’

Advertisement

চিনতে ভুল হওয়ার কথা নয়। তবুও জানতে চেয়েছিলেন, ‘‘কে বলছেন?’’

উত্তর এসেছিল, ‘‘পদ, আমি পদ।’’

Advertisement

সরাসরি কাজের কথায় ঢুকে পড়েছিল পদ ওরফে প্রদীপ দেব। ওই প্রোমোটার কোথায়, কবে নতুন কাজ শুরু করেছেন, সবই তার জানা। পদ বলেছিল, তার প্রাপ্য টাকাটা যেন তৈরি থাকে। তার লোকেরা গিয়ে নিয়ে আসবে। আর টাকা না দিলে...

২০১৫-র ৭ মে সন্ধেয় মধ্যমগ্রাম উড়ালপুলে ফিল্মি কায়দায় একটা গাড়ি আটকে দুই মাফিয়াকে গুলি করে মেরেছিল একদল দুষ্কৃতী। সেই অপারেশনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ পদ এখন দমদম সেন্ট্রাল জেলে বন্দি। অভিযোগ, সেখান থেকেই মধ্যমগ্রামের অধিকাংশ প্রোমোটারকে ফোন করে তোলা চাইছে সে। স্থানীয়দের বক্তব্য, পদর কারবার থেমে নেই। তার টিমই তামাম মধ্যমগ্রামে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক। তাদের কাছ থেকে, তাদেরই শর্তে নির্মাণ সামগ্রী কিনতে বাধ্য প্রোমোটারেরা।

গত দিন কুড়ি ধরে একই নম্বর (৭৪৪৯৫৯৩৭৩৫) থেকে রাতে প্রোমোটারদের ফোন করছে পদ। বক্তব্য মোটামুটি এক। এক প্রোমোটার জানালেন, ঠান্ডা গলায় প্রথমেই পদ বলছে, ‘‘কী রে, ভুলে যাসনি তো আমাকে? দিন সব সময়ে সমান যায় না। খুব তাড়াতাড়ি জেল থেকে ছাড়া পাব। কোথায় কত কাজ হচ্ছে, সব খবরই পাচ্ছি। ৩০ লাখ তৈরি রাখিস।’’

আরও খবর
টাকা কি দলেই ঢালতেন সুদীপ

জেলে বসে ফোন করে হুমকি! ভয়ে প্রোমোটারেরা কেউ পুলিশের দ্বারস্থ হননি। তাঁদের আশঙ্কা, সেই খবরও নাকি পৌঁছে যাবে পদর কাছে!

কে এই পদ? এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মধ্যমগ্রাম ও বারাসতের একটা বড় অংশের অপরাধ জগতের নিয়ন্তা। লেকটাউনের পিনাকীর হাত ধরে নয়ের দশকে তার উত্থান। ২০০১-এ মধ্যমগ্রামের বঙ্কিমপল্লিতে এক জনকে খুনের অভিযোগ ওঠে পদর বিরুদ্ধে। পুলিশের খাতায় সেটাই তার প্রথম খুন। তার পরেও
একাধিক খুনে নাম জড়িয়েছে পদর। জেলও খেটেছে। জেলে বসে তোলাবাজির অভিযোগও নতুন নয়। বাম জমানায় পদর মাথায় হাত
ছিল বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতার। রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের বিধানসভা এলাকায় ভোটের সময়ে ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে।

পালাবদলের পরে কিছু তৃণমূল নেতার আস্থা অর্জন করলেও, মোটের ওপর শাসক দলের সঙ্গে পদর সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর। জামিনের জন্য তার দলবল স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও লাভ হয়নি। একাধিক বার জামিনের আবেদন নাকচ হয়েছে তার। তবু পুলিশের কিছু অফিসার বলছেন, ‘‘পদর যেন অদৃশ্য কোনও সমর্থক রয়েছে। প্রতিটা শুনানির দিন মনে হয়, এই বুঝি জামিন হয়ে গেল।’’ এ বার গ্রেফতার হওয়ার পরে প্রথমে ব্যারাকপুর জেলে ছিল সে। মাস দুয়েক আগে পাঠানো হয় দমদমে। ইদানীং ঘনিষ্ঠ মহলে পদ বলেছে, গরমের ছুটির সময়ে আদালতে বিচারক বদল হবে। তখন সে নাকি জামিন পাবে।

উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাঁরা এমন হুমকি-ফোন পেয়েছেন, তাঁরা যদি আমাদের কাছে আসেন, নিশ্চয়ই সাহায্য পাবেন।’’ চমকে গিয়েছেন কারামন্ত্রী অবনীমোহন জোয়ারদার। বলেছেন, ‘‘এ তো মারাত্মক অভিযোগ! এর আগেও দমদম সেন্ট্রাল জেলে এমন ঘটনা ঘটেছে। খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’ বিধানসভায় সরকারি মুখ্য সচেতক তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘এই ঘটনায় দলের কেউ জড়ালে দায় তাঁর নিজের। প্রশাসনকে বলব আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন