বাসস্ট্যান্ড না বাসস্টপ, বুঝতে পারেন না যাত্রীরা

রাজ্য সড়কের একপাশে গু’টি কয়েক বাস দাঁড়ানোর জায়গা। পাশে একটি যাত্রী প্রতীক্ষালয়। কিন্তু রাস্তার অন্য পাশে আরও কয়েকটি বাস দাঁড়ানোর জায়গা তৈরি করা হলেও যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি করা হয়নি। নেই অন্যান্য পরিষেবাও। ফলে ওই অংশে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে কষ্ট করে যাত্রীদের বাসের অপেক্ষায় থাকতে হয়।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০২:০৬
Share:

এমনই হাল বাসস্ট্যান্ডের। না আছে ছাউনি, না আছে যাত্রী সুবিধায় অন্য ব্যবস্থা। ছবি: সুজিত মাহাতো।

রাজ্য সড়কের একপাশে গু’টি কয়েক বাস দাঁড়ানোর জায়গা। পাশে একটি যাত্রী প্রতীক্ষালয়। কিন্তু রাস্তার অন্য পাশে আরও কয়েকটি বাস দাঁড়ানোর জায়গা তৈরি করা হলেও যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি করা হয়নি। নেই অন্যান্য পরিষেবাও। ফলে ওই অংশে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে কষ্ট করে যাত্রীদের বাসের অপেক্ষায় থাকতে হয়। এমনই দুরাবস্থা রঘুনাথপুর বাসস্ট্যান্ডের। তাই বাসস্ট্যান্ডের এই অব্যবস্থায় ক্ষুদ্ধ যাত্রীদের প্রশ্ন, এটা বাসস্ট্যান্ড না বাসস্টপ? পুরভোটের মুখে বাসস্ট্যান্ডের এই হাল নিয়ে পুরসভার ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।

Advertisement

বস্তুত পক্ষে মহকুমা সদরের স্বীকৃতি পেলেও কখনই এখানে পুরোদস্তুর বাসস্ট্যান্ড তৈরি করা হয়নি। পুরুলিয়া-বরাকর রাজ সড়কের দু’পাক্ষের জমি নিয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে এই বাসস্ট্যান্ড তৈরি হয়েছে। রঘুনাথপুর বা আসানসোল থেকে পুরুলিয়ার দিকে যাওয়ার পথে রাস্তার বাঁ দিকে অল্প কয়েকটি বাস দাঁড়ানোর জায়গা রয়েছে। সেখানে একটি প্রতীক্ষালয় আছে। কিন্তু রাস্তার উল্টোদিকে অথাত্‌ রঘুনাথপুর বা আসানসোলগামী বাস যেখানে দাঁড়ায়, সেখানে যাত্রী প্রতীক্ষালয় নেই। ফলে ওই রুটের যাত্রীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। ক’দিন আগে বরাকরগামী একটি বাস ধরতে এ প্রান্তের যাত্রী প্রতীক্ষালয় থেকে পড়িমড়ি করে তিন বছরের শিশুকে নিয়ে রাস্তার অন্য প্রান্তে দৌড়ে যাচ্ছিলেন নিতুড়িয়ার পাহাড়পুর গ্রামের বধূ রেখা হাঁসদা। অল্পের জন্য ডাম্পারের সামনে পড়তে পড়তে তিনি রক্ষা পান। যাত্রীদের অভিযোগ, এমনটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মাঝে মধ্যেই এই রকম ঘটনা ঘটছে। কপাল জোরে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়ে যাচ্ছেন যাত্রীরা।

প্রথম দিকে শহরের বাসস্ট্যান্ড ছিল থানা ও আদালত লাগোয়া এলাকায়। শহরের মধ্যে ওই জনবহুল এলাকায় প্রচুর বাস দাঁড়ানোয় যানজট ও অন্যান্য সমস্যা তৈরি হচ্ছিল। ১৯৯৪ সালে রঘুনাথপুরকে মহকুমা হিসাবে ঘোষণা করার পরেই অন্যত্র একটি আধুনীক মানের বাসস্ট্যান্ড তৈরির দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। দীর্ঘ টালবাহানার পরে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল শহরের প্রান্তে আদ্রা মোড়ে বাসস্ট্যান্ডের শিলান্যাস করেন তত্‌কালীন পরিবহণ মন্ত্রী প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তী। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে বাসস্ট্যান্ড চালু হতে আরও ছ’-সাত বছর গড়িয়ে যায়। ধাপে ধাপে পরিবহণ দফতরের কাছ থেকে পাওয়া ১৯ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও পুরোদস্তুর বাসস্ট্যান্ড যে গড়ে ওঠেনি প্রতিদিন তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন যাত্রীরা।

Advertisement

যাত্রীদের অভিযোগ, এখানে ন্যূনতম যাত্রী পরিষেবা মেলে না। বাসস্ট্যান্ডে.নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা, নেই পর্যাপ্ত যাত্রী প্রতীক্ষালয়। পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের দু’পাশে ৮ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এই বাসস্ট্যান্ড তৈরি হয়েছে। এক অংশের বাসস্ট্যান্ডে আবার এখনও ঢালাই করা হয়নি। বৃষ্টির হলে কাদা পেরিয়ে যাত্রীদের বাস ধরতে যেতে হয়। রাস্তার পাশেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অটো, ট্রেকার। ওই সব ছোট গাড়ির এখনও স্ট্যান্ড তৈরি হয়নি। ফলে ব্যস্ত রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওই সব গাড়িতে ওঠানামা করতে গিয়ে দুর্ঘটনারও আশঙ্কা থাকে। বাসস্ট্যান্ড কমিটিরই এক সদস্যের কথায়, “৮২টি বাস, প্রায় ২০০টি অটো ও ১০টি ট্রেকার চলে রঘুনাথপুর থেকে। এত গাড়ির জন্য যে ভাবে পরিকল্পনামাফিক বাসস্ট্যান্ড তৈরি করা দরকার ছিল, তা করা হয়নি। একে বাসস্ট্যান্ডের পরিবর্তে বাসস্টপ বলাটাই বোধহয় বাঞ্ছনীয়।” ঠিক হয়েছিল বাসস্ট্যান্ডে দোকান, যাত্রী প্রতীক্ষালয়, লজ তৈরি করা হবে। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি।

এই বাসস্ট্যান্ডের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ১৬ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। কমিটির সভাপতি খোদ মহকুমাশাসক, সহসভাপতি রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান, সম্পাদক পুরসভার সহকারী বাস্তুকার। কমিটিতে আছেন মহকুমা প্রশাসনের এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, এসডিপিও, বিডিও, এসডিএলআরও, পূর্ত দফতরের প্রতিনিধি, পরিবহণ দফতরের প্রতিনিধি, থানার ওসি, সিআই, বিদ্যুত্‌ সরবরাহ দফতরের আধিকারিক-সহ পরিবহন কর্মী সংগঠনের নেতারা। প্রতি মাসে একবার করে আলোচনায় বসে কমিটি। সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত দু’টি সভার কার্যবিবরণীতেই একগুচ্ছ কাজের কথা করণীয় হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে জরুরি ভিত্তিতে সার্বিক পরিকাঠামোর উন্নয়ন, আরও বেশি সংখ্যায় যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি, বাসস্ট্যান্ডে পানীয়জলের ব্যবস্থা করা, পরিচ্ছন্নতা, রাতে আলোর ব্যবস্থা করা, সুলভ শৌচালয়টি ঠিকভাবে চালানো ও পৃথক অটো স্ট্যান্ড তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলি। কিন্তু বাস্তবে কাজ এগোচ্ছে না।

কমিটির বর্তমান সম্পাদক বিজয়কুমার মনি বলেন, “মূল সমস্যা হল জমি ও অর্থ। পূর্ত দফতরের জমির উপরে তৈরি হয়েছে বাসস্ট্যান্ডটি। কিন্তু সেই জমি কমিটির নামে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া এখনও শুরুই হয়নি।” মাত্র একমাস আগে বাসস্ট্যান্ডের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। ফলে সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গোড়াতেই গলদ রয়ে গিয়েছে।

কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক তথা সিটু নেতা লোকনাথ হালদার বলেন, “বাসস্ট্যান্ডের অদূরে বি-টিম গ্রাউন্ডে সরকারি জমির উপরে বাস টার্মিনাস করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে ওই এলাকায় সরকারি জমির পরিমাণ কতটা, তা জানতে চেয়েও রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।”

শাসকদলের পরিবহণ কর্মী সংগঠনের নেতা তথা এই কমিটির সদস্য মৃত্যুঞ্জয় পরামানিক জানিয়েছেন, বিধায়ক, সাংসদ ও পুরসভার কাছে বাসস্ট্যান্ডের উন্নয়নে তাদের তহবিল থেকে অর্থ চাওয়া হয়েছে। তবে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অজয় সেনগুপ্তের আশ্বাস, “ইন্দো-জার্মান প্রকল্প থেকে বাসস্ট্যান্ডে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অটোগুলিকে স্ট্যান্ড থেকে নিরাপদ দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন