রুদ্ধ-পথ (১)

রেলসেতুতে দম আটকে সাঁইথিয়ার

নানা দিক থেকে উন্নত হয়েছে শহর। কিন্তু সাঁইথিয়া শহরের পথের রোগ কাটল না হাজারো উন্নয়নের পরেও। যানজট আর বেনিয়মে চলা যানবাহনের রাশ টানতে পারেনি প্রশাসনও। সরেজমিনে দেখল আনন্দবাজার। নানা দিক থেকে উন্নত হয়েছে শহর। কিন্তু সাঁইথিয়া শহরের পথের রোগ কাটল না হাজারো উন্নয়নের পরেও। যানজট আর বেনিয়মে চলা যানবাহনের রাশ টানতে পারেনি প্রশাসনও। সরেজমিনে দেখল আনন্দবাজার।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩২
Share:

সার: এমনই অবস্থা হয় রেলব্রিজে। ছবি: কল্যাণ আচার্য

সরু পথ। সঙ্গে দিন দিন বেড়ে চলা যানবাহন। এবং একটি রেলসেতু। এই ত্র্যহস্পর্শে যানজটের নাগপাশে আটকে রয়েছে সাঁইথিয়া। রোজ পথে বেরিয়ে যানজটের কবলে পড়ে নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা স্থানীয় বাসিন্দাদের। যানজট উপশমের উপায় খুঁজছে পুরসভা থেকে জেলা প্রশাসন। কিন্তু রোগ মুক্তি আর ঘটছে না। শহরবাসীর দাবি, প্রশাসনের চেষ্টা থাকলেও পরিকল্পনার অভাব এবং ভৌগলিক কারণে যানজট তো এড়ানো যায়ইনি, উল্টে বেড়ে চলেছে।

Advertisement

এক সময় ইউনিয়ন বোর্ডের অধীনে থাকা সাঁইথিয়ায় পুরসভা গড়ে ওঠার আগে তা নোটিফায়েড এরিয়া ছিল। পুরসভা সংলগ্ন এলাকাটি এখনও ইউনিয়ন বোর্ড মোড় হিসেবে পরিচিত। ইউনিয়ন বোর্ড থাকাকালীন স্থানীয়দের তৈরি দাতব্য চিকিৎসালয়ই ছিল এলাকার বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসা। স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নত হয়েছে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। কিন্তু যানজটের সমস্যা ক্রমশ জটিল আকার নিয়েছে।

প্রশাসনের দাবি, ভৌগলিক অবস্থানই সাঁইথিয়ার যানজটের অন্যতম কারণ। শহরকে নন্দিকেশ্বরী মন্দিরের কাছে কার্যত দ্বিখণ্ডিত করে দিয়েছে হাওড়া-রামপুরহাট রেলপথ। তার সঙ্গে অণ্ডাল-সাঁইথিয়া রেলপথও মিশেছে। ওই রেলপথের উপরে নির্মিত একটি সেতুই এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে প্রশাসনের একাংশের দাবি। রেললাইনের এক দিকে রয়েছে নন্দিকেশ্বরী মন্দির, থানা, হাসপাতাল, কলেজ, একাধিক স্কুল-সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। রয়েছে সাঁইথিয়ায় ব্যবসার কেন্দ্রস্থল মহাজনপট্টিও। সেখানেই যাবতীয় পাইকারি দোকান, আড়ৎ, তেলকল, হিমঘর। অন্য দিকে রয়েছে ডাকঘর, টেলিফোন দফতর, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, পুরভবন-সহ বড় বাজার। সেই সুবাদে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে ওই রেলসেতু দিয়েই পারাপার করতে হয়। জেলার অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র হওয়ায় প্রতিদিন পণ্যবাহী ভারী গাড়িও যাতায়াত করে।

Advertisement

ওই রেলসেতুই যুক্ত করেছে সাঁইথিয়া-বোলপুর এবং সাঁইথিয়া-লাভপুর সড়ককে। এমনিতেই শহরের বেশির ভাগ পথ যানবাহনের ভিড়ের তুলনায় অপ্রশস্ত। তার উপরে ওই রেলসেতুটি দুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, রেললাইনের দু’দিকের রাস্তা সংযোগকারী সেতুটি গাড়ির ভিড়ের তুলনায় নেহাতই সরু। তাই সেখানে সারা দিন যানজট লেগে থাকে। দীর্ঘদিন আগেই সেতুটি বিপজ্জনক বলে ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে রেল দফতর। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেই নিষেধের তোয়াক্কা করে না কেউ। বারবার রেল দফতরের দৃষ্টি আর্কষণ করেও কোনও লাভ হয়নি। এর ফলে যানজটের পাশাপাশি বিপদের ঝুঁকি নিয়েই ওই সেতু পারাপার করতে হয় পথচারীদের।

সাঁইথিয়া হাইস্কুলের শিক্ষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মুখলেসুর রহমান বলেন, ‘‘প্রতিদিন রাস্তায় বেরোলেই যানজটে নাকাল হতে হয়। বিপজ্জনক ওই রেলসেতু পারাপার করা তো আমাদের কাছে আতঙ্কের! কিন্তু কিছু করারও নেই। ওই পথই ভরসা।’’ বোলপুর ও লাভপুর রুটের বাস চালক সুনীল দাস এবং রহমত আলিরাও বিরক্ত নিত্য যানজটের ঝঞ্ঝাট নিয়ে। তাঁদের ক্ষোভ, ওই সেতু পার হতে গিয়েই সবথেকে বেশি সমস্যা পোহাতে হয়। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বিকল্প রাস্তা না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয়।

সরু রেলসেতুটি যে সাঁইথিয়ার যানজটের অন্যতম কারণ, তা মানছেন এলাকার বিধায়ক নীলাবতি সাহাও। তিনি বলেন, ‘‘বারবার সেতু সম্প্রসারণের জন্য পূর্ব রেলের কলকাতার সদর দফতরে জানিয়েছি। আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি এত বছরেও।’’

সাঁইথিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান বিপ্লব দত্ত বলেন, ‘‘ওই সেতুটি বিপজ্জনক বলে দীর্ঘদিন আগেই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রেল দফতর। পুরসভার পক্ষ থেকেও বারবার সেতু সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়েছে। বছরখানেক আগেই রেল, পুরসভা এবং পূর্ত দফতরের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সেতু সম্প্রসারণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যায়। নকশাও অনুমোদন হয়ে যায়। তার পরেও কেন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হল না তা এখনও অজানাই।’’ এই বিষয়ে পূর্ব রেলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নকশা-সহ সেতু সম্প্রসারণের প্রস্তাব রেলমন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে। সম্মতি মিললেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আপাতত সেই সম্মতির ভরসাতেই রেলসেতু পেরোচ্ছেন সাঁইথিয়ার মানুষ। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন