সুসময়: তখনও পাশাপাশি অনুপম হাজরা, শতাব্দী রায়। ফাইল চিত্র
এক জন একই লোকসভা কেন্দ্র বীরভূম থেকে তৃতীয় বারের প্রার্থী। অন্য জন দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে বিজেপির প্রতীকে কলকাতার যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়েছেন। গত লোকসভা নির্বাচনে বীরভূম ও বোলপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী যথাক্রমে শতাব্দী রায় ও অনুপম হাজরার বর্তমান অবস্থান গত দূরত্ব যতটা, বিদায়ী সাংসদ হিসেবে নিজের এলাকায় বরাদ্দ টাকা খরচের নিরিখেও ব্যবধানও ততটাই। তথ্য অনুযায়ী, শতাব্দী যেখানে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত বরাদ্দ ২৫ কোটি টাকাই আনতে পেরেছেন। সেখানে অনুপম হাজরা আনতে পেরেছেন অর্ধেক, ১২.৫ কোটি।
বীরভূম জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সাংসদ কোটায় উন্নয়ন প্রকল্পে টাকা খরচে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছেন বীরভূমের বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, শতাব্দী রায় গত পাঁচ বছরে মোট ৭৭৫টি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। অনুমোদিত হয়েছে ৭৩৬টি প্রকল্প। প্রায় ৯৩ শতাংশ কাজের ইসি (ইউটিলাজেশন সার্টিফিকেট) দেওয়া হয়েছে। বাকি কাজও চলছে। অন্য দিকে, অনুপম হাজরা জমা দিয়েছিলেন ১৭২টি প্রকল্প। তার মধ্যে অনুমোদন পেয়েছে ১৪৪টি। সে কাজ অবশ্য সম্পন্ন হয়েছে।
শতাব্দী বলছেন, ‘‘প্রশাসনের সহযোগিতা পেয়েছি দারুণ ভাবে। সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছের জন্যই এত প্রকল্প রূপায়ন সম্ভব হয়েছে।’’ সোমবার নলহাটির সভায় সেই প্রসঙ্গ ছুঁয়েও যান। শতাব্দীর একেবারে উল্টো প্রতিক্রিয়া মিলেছে অনুপম থেকে। তিনি বলছেন, ‘‘দলে থাকলেও আমায় কোনও কাজ করতে দেওয়া হয়নি। প্রস্তাব দেওয়ার দায়িত্ব আমার। অনুমোদন দেওয়ার দায়িত্ব জেলাশাসকের। প্রশাসনের তরফে কোনও সহযোগিতা পাইনি। যা হয়েছে বোলপুরে অনুব্রত মণ্ডলের ইচ্ছে ও নির্দেশে হয়েছে। ফলে কী কাজ হয়েছে তা নিয়ে আমি নিজেই অন্ধকারে।’’
জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু এ ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। প্রতিক্রিয়া মেলেনি জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলেরও। তবে প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, প্রথমত, বিদায়ী সাংসদ ঠিক সময়ে ঠিক ভাবে প্রস্তাব দেননি। দ্বিতীয়ত, এমন কিছু প্রস্তাব এসেছিল যেগুলি রূপায়নে আগ্রহী হয়নি চিহ্নিত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি। সে কথা তারা চিঠি দিয়ে প্রশাসনকে জানিয়ে দেয়। এতগুলি টাকা ফেরত যাবে বলে নতুন প্রস্তাব দেওয়ার জন্য অনুপমের কাছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল বলেও প্রশাসনের ওই সূত্রের দাবি। কিন্তু, সাড়া পাওয়া যায়নি। যদিও প্রশাসনের এই দাবি মানেননি অনুপম।
রাজনৈতিক দলের মত, যে দলের টিকিটে অনুপম সাংসদ হয়েছিলেন, সেই দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ও টানাপড়েনই এর জন্য দায়ী। তাঁদের অনেকেই বলছেন, ‘‘বোলপুর কেন্দ্র থেকে জেতার কিছু দিন পর থেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জেলা তৃণমূল ও জেলা সভাপতির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল। বিভিন্ন সময় তার বহিঃপ্রকাশও দেখা গিয়েছে। বেশ কয়েক বার নিজের সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট থেকে ‘সরব’ ছিলেন অনুপম।’’ শেষ পর্যন্ত ‘দলবিরোধী’ কাজের জন্য মাস দু’য়েক আগে অনুপমকে বহিস্কার করে তৃণমূল। কিছু দিন আগে বিজেপিতে যোগ দেন। বহিস্কৃত সাংসদ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেয়নি তৃণমূলও।
তবে দলে থেকেও জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে সংঘাতের জন্যই নিজের কাজ করতে পারেননি বলে মনে করছে বিজেপি। বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলছেন, ‘‘শুনেছি দলের সঙ্গে দূরত্ব ও রাজনৈতিক টানাপড়েনের জন্যই বরাদ্দ টাকা আনতে এবং কাজ করতে পারেননি।’’ ভিন্ন সুর সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদার। তাঁর কথায়, ‘‘আসলে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা না থাকলে এমন হয়।’’ বরাদ্দ এতগুলো টাকা অনুপম খরচ করতে না পারায় আক্ষেপ ঝরে পড়েছে শতাব্দী রায়ের গলায়। তিনি বলছেন, ‘‘ইসস! এতগুলো টাকায় অনেক উন্নয়ন হতে পারত। মানুষের কাজে লাগত। যিনিই সাংসদ থাকুন, তাঁর অন্তত এই বিষয়টা খেয়াল রাখা উচিত। টাকাটা মানুষের।’’