বিজ্ঞপ্তিই সার, পিকনিক স্পটে উড়ছে থার্মোকল, প্লাস্টিক

প্রশাসনের তরফে প্লাস্টিক ও থার্মোকল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেও শুশুনিয়ার ছবিটা বদলানো গেল না।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:১৮
Share:

শুশুনিয়ায় নিষেধ উড়িয়ে থার্মোকলের দেদার ব্যবহার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

পর্যটন কেন্দ্র দূষণমুক্ত রাখতে দুই জেলা প্রশাসনই কড় মনোভাব নিয়েছে। কিন্তু, বড়দিনের পিকনিকে কি রোখা গেল থার্মোকল, প্লাস্টিকের ব্যবহার? সাইন্ড বক্সের দাপটে কি রাশ পড়ল? খোঁজ নিল আনন্দবাজার

Advertisement

শুশুনিয়া

প্রশাসনের তরফে প্লাস্টিক ও থার্মোকল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেও শুশুনিয়ার ছবিটা বদলানো গেল না। বড়দিনে এই পাহাড়ের কোলে বহু মানুষ পিকনিক করতে এসেছিলেন। দেখা গেল, তাঁরা দিব্যি থার্মোকলের থালা, বাটি ব্যবহার করছেন। ছড়িয়ে রয়েছে প্লাস্টিকও।

Advertisement

গত নভেম্বরেই বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে প্লাস্টিক ও থার্মোকল মুক্ত করতে প্রচারে নামে। কিন্তু, শুশুনিয়ায় তার প্রভাব পড়েনি। থার্মোকল ও প্লাস্টিকের ব্যবহার আটকাতে এ দিন পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে কাউকেই এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। তবে আশার কথা, এ বার পুলিশের সক্রিয়তায় কমেছে সাউন্ডবক্সের দাপাদাপি। যানজটও বিশেষ ভোগায়নি। শুশুনিয়ায় সপরিবারে বেড়াতে যাওয়া বাঁকুড়ার বাসিন্দা সৌমিত্র পাঠক বলেন, “আগে পিকনিকে আসা লোকজনের সাউন্ড বক্সের দাপটে কান ঝালাপালা হয়ে যেত। এ বার দেখছি কিছুটা কম। তবে, দূষণ এড়াতে পারল না শুশুনিয়া।’’ থার্মোকলের ব্যবহার এড়ানো গেল না কেন? মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) সুদীপ্ত দাস বলেন, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। পর্যটনস্থলে থার্মোকল ও প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে নজরদারি চালানোর কথা। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব।’’

মুকুটমণিপুর

গত বছর থেকেই মুকুটমণিপুরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে তৎপর প্রশাসন। মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথোরিটির উদ্যোগে এখানে নিয়মিত সাফাই করা হয়। নিষিদ্ধ হয়েছে প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার। এ বারও কড়া প্রশাসন। বড়দিনের ছুটিতে এ বারও পিকনিক করতে আসা মানুষজনের ভিড় উপচে পড়েছিল। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন জানাচ্ছেন, পিকনিক করতে যাওয়ার সময়েই আবর্জনা ফেলার জন্য প্রথমেই একটি ব্যাগ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাতেই আবর্জনা রাখছেন লোকজন। গত বছর থেকেই সাউন্ড বক্স বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে এখানে। এ বারও সেই নিয়ম জারি রয়েছে। এ দিন মুকুটমণিপুরে পিকনিক করতে যাওয়া সিমলাপালের বাসিন্দা গৌরাঙ্গ লাহা বলেন, “নিয়মের কড়াকড়ি রয়েছে। এখানে প্রকাশ্যে ধূমপানও করা যাচ্ছে না। তবে, কড়াকড়িতে মুকুটমণিপুরের পরিবেশ রক্ষা পেয়েছে।’’

গড় পঞ্চকোট

গত বছরই প্রশাসন নিতুড়িয়ার গড় পঞ্চকোট পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় ‘এলাকাটি প্লাস্টিক ও মাইক বর্জিত’ বলে বোর্ড সাঁটিয়েছিল। জানানো হয়েছিল, পাহাড়ে আর্বজনা ফেললে জরিমানা নেওয়া হবে। দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সিভিক কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের। তার ফল মিলল এ বার। বড়দিনে গড় পঞ্চকোট পাহাড়ের মন্দিরক্ষেত্রে এলাকায় বাজল না সাউন্ড বক্স। শালপাতার থালা, বাটিতেই পিকনিক সারলেন অনেকে। এ দিন মন্দির ক্ষেত্র এলাকা ঘুরে অন্য বারের মতো আর্বজনার স্তূপ দেকা যায়নি। কিছু জায়গায় অবশ্য শালপাতার থালা, বাটি পড়েছিল। নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদব জানান, সর্তকতা ও সচেতনতামূলক বোর্ড লাগানো-সহ ‘ধারা উন্নয়ন কমিটি’র স্বেচ্ছাসেবকদের প্রচারে পরিবেশ দূষণ অনেকটাই বন্ধ হয়েছে। পাহাড়ে ঘুরতে আসা কলকাতার বাসিন্দা অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় ও বাঁকুড়ার বাসিন্দা কনকলতা সিংহ বলেন, ‘‘পরিবেশ বাঁচলেই পর্যটন কেন্দ্র কত মনোরম হয়ে ওঠে।’’

গড় পঞ্চকোটে নোটিসে কিছুটা কাজ হয়েছে।—নিজস্ব চিত্র

জয়চণ্ডী

থার্মোকলের থালা, বাটির ব্যবহার বন্ধ করা গেল না জয়চণ্ডী পাহাড়ে। সেই সঙ্গে বাজল বড় বড় সাউন্ড বক্স। মাসখানেক আগেই জেলা প্রশাসন দূষণমুক্ত পর্যটনকেন্দ্র গড়তে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তা অমান্য করা হলে জরিমানার কথাও জানানো হয়। যদিও এখানে সে রকম কোনও নোটিস বোর্ড দেখা যায়নি বলেই পিকনিকে আসা লোকজনের দাবি। এমন নিষেধাজ্ঞার কথা জানা নেই বলে এ দিন দাবি করেন কাশীপুরের মণিহারা থেকে পিকনিক করতে আসা সৌমেন রজক, বেলা রজক। সাউন্ড বক্স বাজিয়ে পিকনিক করা আসানসোলের যুবক রীতেশ সিংহেরও দাবি, ‘‘কেউ বক্স বাজাতে বারণ করেননি। নোটিসও দেখিনি।’’ রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় জানান, শীঘ্রই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া বোর্ড জয়চণ্ডী পাহাড়ে ঢোকার রাস্তা ও বিভিন্ন এলাকায় তাঁরা লাগাবেন।

কাঁসাইয়ের তীর

পুরুলিয়া শহর লাগোয়া কাঁসাই নদীর তীরে তেলেডি ও শিমুলিয়া ঘাটে এ দিনও পিকনিকে তারস্বরে সাউন্ড বক্স বাজাতে দেখা গিয়েছে। তবে, থার্মোকলের বদলে শালপাতার ব্যবহার দেখা গিয়েছে। এখানে উল্টে লোকজন প্রশাসন কেন ডাস্টবিন দেয়নি, সেই অভিযোগ তুলেছেন।

মুরগুমা

মুরগুমায় পুলিশের সামনেই সাউন্ড বক্স বাজানো হয় বলে পিকনিকে যাওয়া লোকজনের দাবি। এখানে থার্মোকলের ব্যবহার চোখে পড়েছে। প্রশাসন জানিয়েছিল, স্বনির্ভর গোষ্ঠী পিকনিক স্পটগুলিতে শালপাতার থালা বিক্রি করবে। কিন্তু, এখানে তা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।

অযোধ্যাপাহাড়

অযোধ্যাপাহাড়ের লোয়ারড্যামের কাছে লহরিয়া শিবমন্দিরের কাছে শালপাতা বিক্রির ব্যবস্থা ছিল। এখানে শালপাতার ব্যবহারও বেশি পরিমাণে দেখা গিয়েছে। সাউন্ড বক্স বাজানো হলেও, দাপট সে ভাবে ছিল না। পুলিশের সক্রিয়তাও নজরে এসেছে। পর্যটকেরা জানাচ্ছেন, এ বার গাড়ি রাখার ব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রিত ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন