মাঠেই চাষিদের নোট পাল্টে দিল ডাকঘর

খুচরোর অভাবে ধান কাটা সঙ্কটে। গ্রামে খুচরো টাকা দিলেন ডাকবিভাগের সুপার। মাঠে ধান পেকে গিয়েছে। এ বার সেই ফসল কেটে ঘরে তোলার পালা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৬
Share:

খুচরোর অভাবে ধান কাটা সঙ্কটে। গ্রামে খুচরো টাকা দিলেন ডাকবিভাগের সুপার।

খুচরোর অভাবে ধান কাটা সঙ্কটে। গ্রামে খুচরো টাকা দিলেন ডাকবিভাগের সুপার।

Advertisement

মাঠে ধান পেকে গিয়েছে। এ বার সেই ফসল কেটে ঘরে তোলার পালা। কিন্তু, অচল পাঁচশো-হাজারের নোটের ধাক্কায় সেই ধান তোলার শ্রমিক পর্যন্ত নিয়োগ করতে পারেননি পুরুলিয়া ১ ব্লকের কোটলই গ্রামের দম্পতি মীরাবালা মাঝি ও নিধিরাম মাঝি। ঘরে কিছু টাকা থাকলেও বেশির ভাগই পুরনো পাঁচশো-হাজার। নোট বাতিলের ঘোষণা হওয়ার পরে ব্যাঙ্কের লাইনেও দাঁড়িয়েছেন ওই দম্পতি। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থেকেও টাকা বদলের সুযোগ হয়নি। মজুর লাগাতে না পেরে স্বামী-স্ত্রী নিজেরাই অল্প অল্প করে ধান কাটার কাজ শুরু করেছেন।

ঘটনা হল, শুধু মাঝি দম্পতিই নন, পুরনো পাঁচশো ও হাজারের নোট বাতিলের জেরে এমন সমস্যায় পড়েছেন রাজ্যেরই বহু মানুষ। কাছেপিঠে ব্যাঙ্ক না থাকায় অসংখ্য গ্রামবাসী পুরনো নোট এখনও জমা করে উঠতে পারেননি। এই ধরনের ভুক্তভোগী মানুষজনের কথা মাথায় রেখে গ্রামে গিয়েই বাসিন্দাদের টাকা বদলের পরিষেবা পৌঁছে দিল পুরুলিয়া ডাকবিভাগ। ডাক-কর্তারা জানিয়েছেন, গ্রামের চাষিরা ধানকাটার মরসুমে নগদ সচল টাকার অভাবে সমস্যায় পড়েছেন। সেই সমস্যা সমাধানেই এই উদ্যোগ।

Advertisement

এর আগে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে গিয়েও রোগীদের পুরনো টাকা বদলে দিয়েছিল ডাকবিভাগ। বৃহস্পতিবার কংসাবতী নদীর ধারে, কোটলই গ্রামে পৌঁছন ডাকবিভাগের কর্মীরা। সঙ্গে ছিলেন ডাকবিভাগের সুপার তপন চক্রবর্তীও। কর্মীরা সরাসরি গ্রামে ঢোকার মুখে ধানখেতে হাজির হন। গ্রামবাসীরা সেখানেই নিজেদের পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি জমা দিয়ে বাতিল হয়ে যাওয়া পাঁচশো-হাজারের নোট বদলানোর সুযোগ পাবেন এ কথা স্থানীয় ডাকঘরের কর্মীরা গ্রামবাসীদের আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। সেই মতো গ্রামের মানুষ পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি ও নোট সঙ্গে রেখেছিলেন।

ডাকঘরের উদ্যোগে খুশি গ্রামবাসীরাও। তাঁদেরই এক জন বিশ্বজিৎ সেন বলেন, ‘‘আমি টোটো চালাই ও টিউশনি করি। আমার কাছে খুবই কম পুরনো নোট ছিল। কিন্তু তা-ও বদলানোর সুযোগ পাচ্ছিলাম না। সারাটা দিন লাইনে দাঁড়ালে তো সওয়ারি মিলবে না। গ্রামেই নোট বদলানোর সুযোগ পেয়ে ভাল হল।’’ খেতমজুর সুনীল মাহাতোর কথায়, ‘‘কাজ না করলে খাব কী! তাই ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়াতে পারিনি। বড্ড অসুবিধায় পড়েছিলাম। ডাকঘর খুব সুবিধা করে দিল।’’ একই সুরে কৃষিজীবী অরূপ সেন, উপেন রক্ষিত, মধু সেনরা জানালেন, অচল নোট শ্রমিকেরা নিচ্ছে না। ধার-দেনা করে সংসার চলছে।

কোটলই শাখা ডাকঘরের পোস্টমাস্টার শ্যামাপদ সেন জানান, হেড অফিস থেকে যখন জানলাম, এই গ্রামে বাসিন্দাদের টাকা বদলের পরিষেবা দেওয়া হবে, তখনই তিনি তাঁদের পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি সঙ্গে রাখতে বলে দিয়েছিলেন। ডাক-সুপার তপনবাবু বলেন, ‘‘বিভিন্ন সূত্রে আমাদের কাছে খবর আসছে, গ্রামে ধান কাটতে গিয়ে কৃষকেরা শ্রমিকদের মজুরি দিতে সমস্যায় পড়েছেন। শ্রমিকেরাও কাজ পাচ্ছেন না টাকার কারণে। তাই ডাকবিভাগের ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেটের চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল অরুন্ধতী ঘোষের উদ্যোগে আমরা গ্রামে গিয়ে নোট বদলের কথা ঠিক করলাম।’’ এ দিন কোটলইয়ের ৬৮ জনকে দু’হাজার টাকা করে বদলে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন