যন্ত্রণার সেতু বোলপুরের লালপুল। —ফাইল চিত্র
সব কিছু ঠিক থাকলে, কাল শনিবার বোলপুরের লালপুলের উপর সম্প্রসারিত সেতু বসানো হবে। সে দিনই এলাকার বাসিন্দা, পথচলতি মানুষ এবং সাইকেল আরোহীদের জন্য সেতুর ফুটপাথ অংশ খুলে দিচ্ছে রেল দফতর। বৃহস্পতিবার এমনই জানালেন রেলের ইঞ্জিনিয়াররা। বোলপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত বলেন, “রেলের সুপারভাইজার, ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার আলোচনা হয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে, পথ চলতি মানুষের সুবিধার জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে সেতুর দু’ দিকের ফুটপাথ খুলে দেওয়া হবে।” জুন মাসের শেষ সপ্তাহে, আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্পূর্ণ ওই সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে দাবি জানিয়েছে বোলপুর পুরসভা।
পূর্ব রেল সূত্রের খবর, কাল শনিবার এবং পরের দিন রবিবার সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত চার ঘণ্টা সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের ওপর ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকছে। শনিবার থেকে রেললাইনের ওপর সম্প্রসারণের ওই সেতু বসবে। টু লেন ওই সেতুর দু’ দিকে প্রায় ১.৪ মিটার চওড়ার ফুটপাথ পরীক্ষামূলক ভাবে খুলে দেওয়া হচ্ছে ব্যবহারের জন্য। ফলে শহরের এবং ওই রাস্তার ওপর নির্ভরশীল হাজারো পথ চলতি মানুষ এবং সাইকেল আরোহীদের অনেকটা সুবিধা হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি।
বোলপুরের অন্যতম লাইফলাইন বলে পরিচিত সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের উপরের এই লালপুল সম্প্রসারণের আর্জি জানানো হয়েছে বহু দফতরে। শুধু এই বোলপুর-শান্তিনিকেতনেরই নয়, বীরভূমের সঙ্গে আশেপাশের একাধিক জেলার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম সেতুটি। তাই এই সেতু সম্প্রসারণের আর্জি জোরাল হছিল দিনে দিন। কেন না, শহরের পরিধি বাড়তে থাকায় ওই সেতুর উপর যান চলাচলের চাপ বাড়ায় যানজটে ভোগান্তি বাড়তে থাকে বাসিন্দাদের। প্রায়ই ঘণ্টার পর ঘণ্টা নাকাল হচ্ছিলেন শহরের বাসিন্দারা।
চলতি বছরের প্রথম দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, কখনও অতিবৃষ্টি আবার কখনও যান্ত্রিক সমস্যার কারণে এত দিন চালু হয়নি। ফলে যানজট এবং সেই কারণে চরম ভোগান্তি সইতে হয়েছে বাসিন্দাদের। লালপুল সম্প্রসারণের কাজে এই অহেতুক দেরিতে, সরব হয় একাধিক মহল। এরপরই সম্প্রসারণের কাজে ফের তেড়েফুঁড়ে লাগে রেল দফতর। দিন কয়েক আগে, পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশন (কন্সট্রাকশন) ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সেন, সহকারী ইঞ্জিনিয়ার এ হক এবং ওই সংশ্লিষ্ট সম্প্রসারণ কাজের সুপারভাইজার পবন কুমার কে নিয়ে আলোচনায় বসেন বোলপুরের পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত। সম্প্রসারণের কাজের গতি, শহরের বাসিন্দাদের ক্ষোভ এবং সমস্যার কথা নিয়ে আলোচনা হয় বিস্তর। নিয়ম মেনে, সম্প্রসারণের কাজ দ্রুত করার আর্জি জানান পুরপ্রধান সুশান্তবাবু।
ঘটনা হল, এই সম্প্রসারণের কাজ চলায় ওই রাস্তা বন্ধ রেখেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে বহু যানবাহন বোলপুরের চৌরাস্তা হয়ে রেলপুল রাস্তা ব্যবহার করছে। বৃহস্পতিবার ওই রাস্তা ব্যবহার করতে গিয়ে, বোলপুর-নতুনহাট রুটের একটি বেসরকারি যাত্রীবাহী বাস যান্ত্রিক গোলযোগে আটকা পরে সেতুর ওপর। ফলে সকাল সাতটা থেকে ঘণ্টা তিনেকের কিছু বেশি সময় ধরে যানজটে অতিষ্ঠ হন বাসিন্দারা। ক্ষোভ ছড়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে। বিষয়টি জানাজানি হতেই, ঘটনাস্থলে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কাজের অগ্রগতি যাচাই করা সহ পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের (কন্সট্রাকশন) সহকারী ইঞ্জিনিয়ার এ হক সঙ্গে দেখা করেন পুরপ্রধান সুশান্তবাবু।
সহকারি ইঞ্জিনিয়ার এ হক বলেন, “শনিবার দিন সম্প্রসারণের সেতু বসবে। টু লেনের ওই সেতুর দু’দিকের ফুটপাথ পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করার কথা রয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে, জুনের শেষ সপ্তাহে আনুষ্ঠানিক ভাবে যান চলাচল স্বাভাবিক করে সকলের ব্যবহারের জন্য নতুন সেতু চালু করার কথা।”