রাস্তা কে করবে, মারপিট শাসক দলের দু’গোষ্ঠীর, জখম দুই

এলাকায় পাকা নালা ও রাস্তা গড়বে গ্রাম পঞ্চায়েত। সেই কাজের জন্য সম্প্রতি দরপত্র ডাকা হয়েছিল পঞ্চায়েতের তরফে। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের রাউতখণ্ড পঞ্চায়েত অফিসে ওই কাজের দরপত্র জমা দিতে গিয়েই মারপিটে জড়ালো তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জয়পুর শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪১
Share:

মারপিটের নিশান।— নিজস্ব চিত্র

এলাকায় পাকা নালা ও রাস্তা গড়বে গ্রাম পঞ্চায়েত। সেই কাজের জন্য সম্প্রতি দরপত্র ডাকা হয়েছিল পঞ্চায়েতের তরফে। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের রাউতখণ্ড পঞ্চায়েত অফিসে ওই কাজের দরপত্র জমা দিতে গিয়েই মারপিটে জড়ালো তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী। জখম হলেন এক গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ দুই ঠিকাদার। ঝামেলা এখানেই থামেনি। তৃণমূল পরিচালিত ওই পঞ্চায়েতের মহিলা প্রধানকে হেনস্থা এবং তাঁর অফিস ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে দলের একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।

Advertisement

এই ঘটনায় ফের প্রকাশ্যে চলে সরকারি কাজ পাইয়ে দেওয়া নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। দল সূত্রের খবর, জয়পুর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি স্বপন কোলের সঙ্গে এই ব্লকেরই প্রাক্তন তৃণমূল যুব সভাপতি তথা জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি ইয়ামিন শেখের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। রাউতখণ্ড পঞ্চায়েতের বর্তমান তৃণমূল প্রধান রিজিয়া বিবি স্বপনবাবুর অনুগামী হিসেবেই পরিচিত। ইয়ামিনের অভিযোগ, রিজিয়া বিবির সঙ্গে যোগসাজেশ করে স্বপনবাবু নিজের অনুগামী ঠিকাদারদের পঞ্চায়েতের সরকারি নির্মাণ প্রকল্পের কাজগুলি পাইয়ে দিচ্ছেন। এই ঘটনায় ব্লকের ঠিকাদারদের একটি বড় অংশ ক্ষুব্ধ। তারই জেরে এ দিন গণ্ডগোল বাধে পঞ্চায়েত অফিসে।

কী হয়েছিল এ দিন?

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ওই পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার পাকা নালা ও রাস্তা তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেই কাজের জন্য দরপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। এ দিন দুপুরে ইয়ামিন-গোষ্ঠীর ঠিকাদারেরা পঞ্চায়েতে দরপত্র জমা দিতে আসেন। স্বপনবাবুর অভিযোগ, ওই ঠিকাদারেরা দরপত্র জমা দেওয়ার আগেই দলবল নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধানের অফিসে ঢুকে বচসা শুরু করেন। রিজিয়া বিবি তার প্রতিবাদ করলে ওই ঠিকাদারেরা প্রধানের অফিস ভাঙচুর করে ও তাঁকে হেনস্থা করে। রিজিয়া বলেন, “আমি দফতরে বসে কাজ করছিলাম। হঠাৎই ইয়ামিনের অনুগামীরা দফতরে ঢুকে চিৎকার করতে শুরু করে। আমি ওদের বাইরে বেরিয়ে যেতে বললে দফতরের টেবিল চেয়ার উলটে দেয়। আমি পুলিশকে খবর দিই।’’ স্বপনবাবুর দাবি, প্রধানের ঘরে ভাঙচুর হচ্ছে দেখেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন দুষ্কৃতীদের বাধা দেয়। পুলিশ এলে ইয়ামিনের লোকজনেরা চলে যান।

অভিযোগ অস্বীকার করে ইয়ামিনের দাবি, এ দিন দু’জন ঠিকাদার পঞ্চায়েত দফতরে দরপত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্বপনবাবুর লোকজন তাঁদের দরপত্র জমা দিতে বাধা দেয়। ওই ঠিকাদারেরা প্রতিবাদ করলে লাঠি দিয়ে তাঁদের মারধর করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, দু’পক্ষের মারপিটে জখম হয়েছেন বসিরুদ্দিন সেখ ও রিয়াজুল মল্লিক নামের দুই ঠিকাদার। বসিরুদ্দিনকে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। রিয়াজুলের চোট কম থাকায় তাঁকে জয়পুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। ঘটনার পরে দুই গোষ্ঠীর তরফেই একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যদিও এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

ইয়ামিনের দাবি, “সরকারি কাজে দরপত্র জমা দেওয়ার অধিকার রয়েছে সব ঠিকাদারেরই। কিন্তু, রাউতখণ্ড পঞ্চায়েতে সরকারি কাজ পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্লক সভাপতি ও পঞ্চায়েত প্রধান নিজেদের প্রভাব খাটাচ্ছেন। তাই ওই দুই ঠিকাদারকে দরপত্র জমা দিতে দেওয়া হচ্ছিল না।’’ বসিরুদ্দিন বলেন, “আমরা যাতে দরপত্র জমা দিতে না পারি, তার জন্য পথ আগলে বসেছিল স্বপনবাবুর লোকজন। ওদের বাধা উপেক্ষা করে ভিতরে গিয়েছিলাম বলেই আমাদের মারধর করা হল। পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে সেই অভিযোগই জানাতে গিয়েছিলাম। এখন উনিই আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলছেন।’’

প্রভাব খাটানোর অভিযোগ মানতে চাননি স্বপনবাবু ও রিজিয়া বিবি। স্বপনবাবু বলেন, “মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। নিজের গোষ্ঠীর ঠিকাদারদের জোর করে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েতে হাঙ্গামা করাল ইয়ামিন।’’ রিজিয়া বলেন, “পঞ্চায়েতের কোনও কাজে অস্বচ্ছতা হচ্ছে বলে কেউ অভিযোগ তোলেনি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কিছু লোকজন এ দিন অশান্তি পাকিয়েছেন।’’ ঘটনা খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন জয়পুরের বিডিও ধ্রবপদ শাণ্ডিল্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন