আগুনের আতঙ্কে শিশু বিভাগ ছেড়ে বাইরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
সাকুল্যে ফুট দশেক লম্বা ঘর।
গদি আঁটা শয্যার পায়ের কাছে রেক্সিন মোড়া লম্বাটে একটা বেঞ্চ আর ঘরের এক কোণায় ঝকঝকে টেবিল-চেয়ার।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে শনিবারের অগ্নিকাণ্ডের উৎসস্থল।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনভর রোগীর ভিড় আর ওষুধের গন্ধ মাখা ওই সরকারি হাসপাতালে সব থেকে পরিচ্ছন্ন ঘরটির পরিচয় ‘ভিআইপি রুম’।
জেলায় তাবড় কোনও ভিআইপি এলে, আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে তাঁদের জন্য বরাদ্দ হয় ওই ঘরটিই। দিন কয়েক আগে, ঘণ্টা কয়েকের জন্য জেলা সফরে আসা রাষ্ট্রপতির জন্যও তৈরি রাখা হয়েছিল হাসপাতালের দোতলার ওই ঘরটিকেই। আর, সে ঘরেই কিনা আগুন?
তবে, ‘ভিআইপি রুম’-এর তকমা আঁটা ওই ঘরটি যে রাতের দিকে প্রায়ই চিকিৎসকদের বিশ্রামস্থল হয়ে উঠত, হাসপাতাল সূত্রেই তা জানা গিয়েছে। সে ঘরে যে এসি-ও চলত বিরামহীন, হাসপাতাল কর্তাদের অনেকেই তা মেনে নিয়েছেন।
শনিবার, সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ, ওই ঘর থেকেই গল গল করে কালো ধোঁয়া বেরতে দেখা যায়। ঘরটির ঠিক উপরেই শিশু বিভাগ। তার পাশেই গায়ে গা লাগানো, মহিলা এবং জেনারেল ওয়ার্ড। ঘন ধোঁয়ায় সেই ওয়ার্ডগুলো ঢেকে যেতে বিশেষ সময় নেয়নি। আর, তার পরেই শুরু হয়ে যায় নিচে নামার হুড়োহুড়ি।
দমকল কর্মীরা তাঁদের প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছেন, ওই ঘরের দু’টি স্প্লিট এসি’র একটি থেকেই এ দিনের আগুন ছড়িয়েছে। স্থানীয় দমকলের ওসি সুখেন সরকার বলছেন, ‘‘দীর্ঘ দিন রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে এসিগুলির অবস্থা তেমন পোক্ত নয়। সম্ভবত ওই এসি থেকেই আগুন ছড়িয়েছে।’’ তবে, বেলা বাড়তেই সে ঘরে সরজেমিনে তদন্তে এসে পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (ইলেকট্রিক্যাল) পার্থ হালদার দিচ্ছেন সম্পূর্ণ অন্য একটি তথ্য— ঘরের মেঝেয় রাখা হাসপাতালের ম্যাট্রেস থেকেই এ দিনের আগুনের উৎপত্তি।
কিন্তু মাটিতে রাখা ম্যাট্রেসে আগুন ধরল কী করে? পার্থবাবুর যুক্তি— জ্বলন্ত সিগারেট-বিড়ি থেকে ম্যাট্রেসের ছোবড়ায় আগুন ধরতে কতক্ষণ? পাল্টা প্রশ্ন করছেন, ‘‘কে বলেছে রক্ষণাবেক্ষণ হয় না! হাসপাতলে এসি মেশিন খারাপ হলে তবে মেরামত করে কারা?’’ তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি আসার আগেও ওই ঘরে এসে এসি’র অবস্থা দেখে গিয়েছিলেন তাঁর দফতরের কর্মীরা।
দুই দফতরের এই চাপানউতোরের মাঝে, হাসপাতালের এক পদস্থ কর্তা অবশ্য ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘নামেই রক্ষণাবেক্ষণ, পূর্ত দফতর থেকে কবে শেষ লোক এসেছিল ওঁদের দেখাতে বলুন তো! আগুন লাগার পরে যে ভাবে গল গল করে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছিল, তা কখনও একটা ম্যাট্রেসের আগুনে হয়?’’ দমকল কর্মীদের অনেকের মুখেই শোনা গিয়েছে, এসি-র তার নিয়েও অসন্তোষের কথা। এক দমকল কর্মী জানান, দু’টি স্প্লিট এসির জন্য লাগানো হয়েছিল ৪ মিলিমিটার পুরু তার। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে অন্তত ৬ থেকে ৮ মিলিমিটার পুরু তার থাকলেই আগুন লাগার সম্ভাবনা অর্ধেক হয়ে যেত।’’