(বাঁ দিকে) তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলকাতার মেট্রোর সম্প্রসারণ সংক্রান্ত প্রশ্নের লিখিত জবাব দেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
কলকাতা মেট্রোর সম্প্রসারণের কাজ থমকে। কলকাতা এবং শহরতলি জুড়ে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা মেট্রোপথের সম্প্রসারণ কেন আটকে রয়েছে বহু জায়গায়? তা নিয়ে এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোর্টেই বল ঠেলল কেন্দ্র। মেট্রো সম্প্রসারণ নিয়ে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নের লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, কোন পথে কতটা কাজ হয়েছে। কোন পথে কোথায় কোথায় কাজ কত বাকি। কেন কাজ বাকি।
মেট্রো সম্প্রসারণ নিয়ে কেন্দ্রের কী পরিকল্পনা রয়েছে? কবে কাজ শেষ হবে? বিস্তারিত তথ্য চেয়ে লোকসভায় রেল মন্ত্রকের কাছে জানতে চান কল্যাণ। সেই প্রশ্নের লিখিত জবাবে অশ্বিনী জানান, বর্তমানে কলকাতা ও তার আশেপাশে মোট ৫২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চারটি মেট্রো করিডরের কাজ চলছে। তবে তার মধ্যে ২০ কিলোমিটারের কাজ থমকে রয়েছে। কেন থমকে রয়েছে? রেলমন্ত্রী জানান, জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সমস্যার কারণে মেট্রোর কাজ আটকে রয়েছে।
কোন লাইনে কোথায় সমস্যা? রেলমন্ত্রী জানান, পার্পল লাইনের (জোকা-এসপ্ল্যানেড) ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে জোকা থেকে মাঝেরহাট (৭.৭২ কিলোমিটার) পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা চলছে। বাকি পথের কাজ কেন হয়নি, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অশ্বিনী জানিয়েছেন, খিদিরপুর মেট্রো স্টেশন নির্মাণ শেষ হয়নি। সেখানে জমি-জট রয়েছে। এ ছাড়াও, ধর্মতলায় বিসি রায় মার্কেটের ৫২৮টি দোকান অস্থায়ী ভাবে সরানোর প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশন তৈরি করার জন্য ওই জমি দরকার। ওই দোকানিদের জন্য বিকল্প জায়গায় অস্থায়ী দোকানও তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু কিন্তু রাজ্য সরকারের কাছ থেকে এখনও অনুমোদন (এনওসি) মেলেনি। তাই কাজ শুরু সম্ভব হয়নি।
অরেঞ্জ লাইনে (নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর) কাজ থমকে থাকার কারণ হিসাবে চিংড়িঘাটা মোড়ে যান চলাচল বন্ধ না-রাখাকে তুলে ধরেছেন অশ্বিনী। অভিযোগ, রাজ্য সরকার এ ক্ষেত্রেও এনওসি দেয়নি। তাই ওই পথে মেট্রো সম্প্রসারণের কাজ আটকে রয়েছে। মেট্রোর দাবি, ওই ক্রসিংয়ে তিন দিন (রাতে ৮ ঘণ্টা করে) যান চলাচল বন্ধ রাখলেই কাজ শেষ করা যাবে।
এর পরেই ইয়েলো লাইনে (নোয়াপাড়া-বারাসত) মেট্রো সম্প্রসারণের পথে নিউ ব্যারাকপুর এবং বারাসতের মধ্যে ১,২৭৭টি ঝুপড়ি এবং ৭৬৪টি দোকান রয়েছে। সেগুলি সরানো হয়নি এখনও। মেট্রোর কাজের জন্য প্রায় ২৩ হাজার বর্গমিটার জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন। তা নিয়ে রাজ্য সরকার কোনও অগ্রগতি না-দেখানোয় থমকে রয়েছে মেট্রো সম্প্রসারণের কাজ, দাবি রেলমন্ত্রীর। এ ছাড়া, বরাহনগর থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ‘মৌ’ স্বাক্ষরের কথা বলেন তিনি। তাঁর দাবি, সেই চুক্তি মতো কাজ করেনি রাজ্য। রেলমন্ত্রী জানান, মেট্রো সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় মোট জমির প্রায় ৭৩ শতাংশ অধিগ্রহণ এখনও বাকি রয়েছে!
উল্লেখ্য, গত ২২ অগস্ট কলকাতা মেট্রোর সম্প্রসারিত তিন রুটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতার আমন্ত্রণ থাকলেও তিনি যাননি। তবে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের আগে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছিলেন মমতা। স্মৃতিবিজড়িত পোস্টে রেলমন্ত্রী হিসাবে প্রকল্পের সূচনা, তহবিল জোগাড় করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাকে বাস্তবায়িত করতে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর ভূমিকার কথা তুলে ধরেন তিনি। এক্স পোস্টে মমতা লিখেছিলেন, ‘রেলমন্ত্রী হিসেবে যে পরিকল্পনাগুলো করেছিলাম, সেগুলো ফিল্ডে যাতে সঠিক ভাবে শেষ হয় তার ব্যবস্থা আমরাই করেছিলাম। এই সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। মেট্রো পরিকাঠামো সম্প্রসারণ আমার একটি দীর্ঘ সফরের অন্যতম অংশ।’’
তবে এ বার মেট্রো সম্প্রসারণ আটকে থাকার জন্য মমতার সরকারকেই দায়ী করলেন বর্তমান কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী।