New President of West Bengal BJP

বিজেপির মনোনয়নের অন্তিম পর্বে নাটকীয় ‘অনুপ্রবেশ’! তবে শেষ পর্যন্ত বিনা ভোটেই রাজ্য সভাপতি পদে শমীকের অভিষেক

শমীক যে বিজেপির পরবর্তী রাজ্য সভাপতি হতে চলেছেন, তা সোমবার রাতেই জানিয়ে দিয়েছিল আনন্দবাজার ডট কম। হলও তা-ই। সুকান্ত মজুমদারের উত্তরসূরি হিসাবে পরবর্তী রাজ্য সভাপতি হচ্ছেন শমীকই।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ ১৮:২৩
Share:

বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি হলেন শমীক ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।

শেষ মুহূর্তে নাটক বিজেপির রাজ্য সভাপতি নির্বাচনে! বিজেপির রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চমকে দিয়ে শমীক ভট্টাচার্যের বিপরীতেও মনোনয়ন জমা দেওয়ার চেষ্টা হল। তবে বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচনের বিধিভঙ্গ হওয়ায় গৃহীত হল না সেই মনোনয়ন। ফলে বিনা ভোটেই বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি হচ্ছেন শমীক।

Advertisement

বুধবার দুপুরে শমীক ছাড়াও রাজ্য সভাপতি পদের জন্য মনোনয়ন জমা দিতে হাজির হন অম্বুজাক্ষ মোহান্তি নামে বিজেপির এক নেতা। তিনি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পটাশপুর থেকে বিজেপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন। বিজেপির দিল্লির নেতৃত্ব নতুন রাজ্য সভাপতি হিসাবে শমীকের নামই প্রস্তাব করেছিলেন বলে সূত্রের খবর। তবে বুধবার দুপুরে আচমকাই অম্বুজাক্ষও মনোনয়নপত্র জমা দিতে দলীয় কার্যালয়ে হাজির হন।

বিজেপির সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী সভাপতি পদপ্রার্থীর মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসাবে দশ জন প্রদেশ পরিষদ সদস্যের স্বাক্ষর থাকতে হয়। বিজেপি সূত্রে খবর, অম্বুজাক্ষের মনোনয়নে দশ জনের স্বাক্ষর ছিল না। ফলে মনোনয়নপত্র গ্রহণই করা হয়নি। এক মাত্র বৈধ মনোনয়ন দলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীকেরই। সভাপতি হিসাবে তাঁর নাম শুধু আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষিত হওয়া বাকি।

Advertisement

অর্থাৎ, যা হওয়ার ছিল, শেষ পর্যন্ত তা-ই হল! বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি হয়ে গেলেন শমীক ভট্টাচার্য। সুকান্ত মজুমদারের উত্তরসূরি হিসাবে রাজ্য বিজেপির সংগঠন সামলানোর গুরুদায়িত্ব পেয়ে গেলেন তিনি। সোমবার রাতেই দৃশ্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল দলে শমীকের নতুন ভূমিকার বিষয়টি। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা বাজতেই তা নিশ্চিত হয়ে গেল। একই সঙ্গে আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের আগে বেশ কিছু পরীক্ষার সামনেও ফেলে দিল শমীককে।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদের জন্য মনোনয়ন পর্ব ইতিমধ্যে মিটে গিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় ছিল। তা-ও মিটে গিয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, রাজ্যসভার সাংসদ তথা বঙ্গ বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক মনোনয়ন প্রত্যাহারও করেননি তিনি। অম্বুজাক্ষ ছাড়া অন্য কেউ শমীকের বিপরীতে মনোনয়ন জমাও দেননি। ফলে বিনা ভোটাভুটিতেই শমীকই হয়ে গেলেন বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি।

ভোটাভুটি কেন হল না, তা নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন করা হয় বিদায়ী রাজ্য সভাপতি সুকান্তকে। জবাবে তিনি বলেন, “এখনও পর্যন্ত একজনই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই একাধিক মনোনয়ন জমা পড়লে তো ভোটাভুটি হত। কেউ মনোনয়ন জমা দেননি। সকলে মনে করেছেন, তিনিই আমাদের মধ্যে যোগ্যতম ব্যক্তি। তাই তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

বিজেপির তরফে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে নতুন রাজ্য সভাপতির নাম ঘোষণা করা হবে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন আধিকারিক রবিশঙ্কর প্রসাদ বৃহস্পতিবার দুপুরে শমীকের হাতে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার শংসাপত্র তুলে দেবেন।

শমীক যে পরবর্তী রাজ্য সভাপতি হতে চলেছেন, তা সোমবার রাতেই জানিয়ে দিয়েছিল আনন্দবাজার ডট কম। সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার বাসভবনে গিয়েছিলেন শমীক। সেখানেই দলের রাজ্যসভার সাংসদকে আসন্ন দায়িত্বের আভাস দিয়ে দেন নড্ডা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ পেয়ে বুধবার সকালের উড়ানে কলকাতায় ফেরেন শমীক। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার কিছু পরে তাঁকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ফোনও করেন বিজেপির দিল্লির নেতৃত্ব। এর পরে সল্টলেকে বিজেপির দফতরে গিয়ে মনোনয়ন জমা দেন তিনি। শমীকের সঙ্গে ছিলেন বিজেপির বিদায়ী রাজ্য সভাপতি সুকান্ত এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও।

ঘটনাচক্রে শমীক এমন একটি সময়ে বঙ্গ বিজেপির দায়িত্ব পেলেন, যখন সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। ভোটের আগে হাতে এক বছরেরও কম সময় পাচ্ছেন শমীক। মাস আটেক পরেই ঘোষণা হয়ে যেতে পারে বিধানসভা নির্বাচন। ভোটের আগে সংগঠনকে আরও মজবুত করা এবং দলের বিস্তার ঘটানোই শমীকের কাছে প্রধান লক্ষ্য হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ৭৭টি আসন জিতেছিল বিজেপি। তবে এখন আসন সংখ্যা কমতে কমতে এসে ঠেকেছে ৬৫তে। মোট ১২টি আসন কমে গিয়েছে বিজেপির। কোথাও জয়ী বিধায়কের মৃত্যুর পর আসন হাতছাড়া হয়েছে। কোথাও আবার বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন জয়ী বিধায়ক। এ অবস্থায় আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংগঠন এবং পরিষদীয় দলের মধ্যে সমন্বয় আরও মসৃণ করা শমীকের কাছে অন্যতম বড় পরীক্ষা বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছা়ড়া দলের সব অংশকে, অর্থাৎ বিভিন্ন নেতার অনুগামী অংশকে একত্রিত তথা ঐক‍্যবদ্ধ করাও তাঁর কাছে একটি অগ্নিপরীক্ষা হতে চলেছে। বস্তুত, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন নির্বাচনের আগে তৃণমূল শিবির বিজেপির গায়ে ‘বাঙালি বিরোধী’ তথা ‘বহিরাগত’ তকমা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এ বারের বিধানসভা ভোটের আগে শমীক তা কী ভাবে মোকাবিলা করেন, তা নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। বিধানসভা ভোটের আগে শমীক রাজ্যের সর্বত্র বুথস্তর পর্যন্ত বিজেপির সংগঠনকে আরও কতটা বিস্তার করতে পারবেন, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement