স্কুলের মাঠে ছাত্রীর ভিড়। কেউ হাত-পা ছুড়ে ‘ওয়ার্ম আপ’ বা গা গরম করছে। কেউ বা সেরে নিচ্ছে হাল্কা ব্যায়াম। মাঝেমধ্যেই হাই-হুই আওয়াজ ভেসে আসছে।
আসলে তাইকোন্ডোর প্রশিক্ষণ চলছে স্কুলে। কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের অঙ্গ হিসেবে রাজ্যের স্কুলে স্কুলে এখন ছাত্রীদের আত্মরক্ষার তালিম দেওয়ার ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। চেতলায় মেয়েদের ওই স্কুলেও সেই ক্লাসে মেতে উঠেছে বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রীরা।
কলকাতা জেলায় রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক শুভ্রা ভট্টাচার্য জানালেন, মেয়েদের উপরে আক্রমণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। মেয়েরা যাতে যাবতীয় আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে, সেই ভাবনা থেকেই ছাত্রীদের এই তালিমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপাতত এই তালিম পাবে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারাই।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লিতে গণধর্ষণের শিকার হন এক তরুণী। পরে তিনি মারা যান। সেই ঘটনার পরে দেশ জুড়ে মেয়েদের সুরক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি ওঠে। ছাত্রীদের আত্মরক্ষায় জোর দেয় কেন্দ্রীয় সরকারও। বাড়তি বরাদ্দ নিয়ে নতুন করে শুরু হয় রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান। তার অঙ্গ হিসেবেই এখন স্কুলে স্কুলে চলছে প্রশিক্ষণ।
চেতলা গার্লস স্কুলে কলকাতার স্কুলগুলির শারীরশিক্ষা বিভাগের শিক্ষিকাদের তাইকোন্ডোর তালিম দেওয়া হয়েছে। তার পরে স্কুলে স্কুলে তালিম দিচ্ছেন তাঁরা। গার্ডেনরিচের নুটবিহারী দাস হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে জানুয়ারি থেকেই চলছে এই প্রশিক্ষণ। ‘‘পাঠ্যক্রমেই এই প্রশিক্ষণের বিষয়টি যোগ করা উচিত,’’ বললেন প্রধান শিক্ষিকা সঙ্ঘমিত্রা ভট্টাচার্য। বেলেঘাটার শুড়াকন্যা বিদ্যালয়ে ক’দিন আগেই শেষ হয়েছে প্রশিক্ষণ। প্রধান শিক্ষিকা দেবযানী দত্তরায় জানালেন, তাঁর স্কুলেও ছাত্রীরা খুব আগ্রহ নিয়ে প্রশিক্ষণে যোগ নিয়েছে। ওই দুই স্কুলই জানাল, তাদের ছাত্রীরা আগে কলকাতা পুলিশের ‘সুকন্যা’ প্রকল্পের অধীনে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণে যোগ দিয়েছিল। দেবযানীদেবী বলেন, ‘‘সারা বছর তালিমের ব্যবস্থা হলে ছাত্রীরা পটু হবে। প্রয়োজনে বাস্তব ক্ষেত্রে তা প্রয়োগও করতে পারবে।’’