পঞ্চায়েতে বন্দোবস্ত, এ বার বিলি হবে গরু!

তাই গো-মাতার গুণগ্রাহীদের ধাক্কা দিতে তৃণমূলের বাজি সেই গরুই! অপেক্ষা শুধু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদনের। তা মিললে পঞ্চায়েত ভোটের আগেই জেলায় জেলায় গরু বিলিতে নামবে রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর। তবে কোন জেলায় কত গরু, কী ভাবে, কোন শর্তে দেওয়া হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

Advertisement

রোশনী মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১৫
Share:

গো-মাতা, গোশালা, গোরক্ষকের রাজনীতির সুফল গো-বলয়ে পেয়েছে বিজেপি। এ রাজ্যেও বাড়ছে তারা। তাই গো-মাতার গুণগ্রাহীদের ধাক্কা দিতে তৃণমূলের বাজি সেই গরুই! অপেক্ষা শুধু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদনের। তা মিললে পঞ্চায়েত ভোটের আগেই জেলায় জেলায় গরু বিলিতে নামবে রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর। তবে কোন জেলায় কত গরু, কী ভাবে, কোন শর্তে দেওয়া হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

Advertisement

দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী অনুমোদন দিলে এবং অর্থ দফতর টাকা দিলে প্রকল্প জেলা স্তরে শুরু করতে সময় বেশি লাগবে না। সংশয় একটাই। এত দুধেল গাই আসবে কোথা থেকে?’’ তবে পঞ্চায়েত ভোটের আগে গরুর এই রচনা ঠিকমতো লিখতে পারলে গেরুয়া শিবিরের গো-মুখী হওয়া তেমন কাজে লাগবে না বলেই মনে করছেন শাসক দলের অনেকে।

আরও পড়ুন: মৃত্যুর পরে ঘরেই পড়ে মায়ের দেহ

Advertisement

গত সপ্তাহে বীরভূমে প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ পালনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। সেখানেই প্রথম তিনি গরু বিলির পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। প্রাথমিক ভাবে জেলা পিছু এক হাজার গরু দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দফতরের। কিন্তু তা হবে ব্যয়সাপেক্ষ। কারণ, উন্নত মানের দুধেল গাই সারা রাজ্যে বিলি করার মতো পাওয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। যদি ভিন্ রাজ্য থেকে গাই কিনে এনে এ রাজ্যে বিলি করতে হয়, তা হলে তার খরচ অনেকটাই বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে অবশ্য বিকল্প হিসাবে বকনা বাছুর দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী স্বপনবাবু বলেন, ‘‘দুধেল গাই না মিললে বকনা বাছুর দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। যে সব দরিদ্র পরিবার গরু পালন করে, সেই গরুর দুধ নিজেরা খায় এবং বিক্রিও করে, তাদের বেছে ওই বাছুরগুলি বিলি করা হবে। এতে ওই পরিবারগুলির দুধের চাহিদা মিটবে এবং কর্মসংস্থানও হবে।’’

দুধের চাহিদা বা কর্মসংস্থান, যে অছিলাই নেওয়া হোক না কেন, আসলে এর পিছনে গরু-রাজনীতি রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। তাদের মতে, এ রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক ময়দানে জাঁকিয়ে বসতে বিজেপি মরিয়া। তার জন্য আরএসএস-সহ গোটা সঙ্ঘ পরিবারের সাহায্য নিয়ে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের খেলায় নেমেছে তারা। হিন্দুদের মধ্যে গরু সংক্রান্ত ভাবাবেগ জাগানো এই কাজে তাদের অন্যতম পছন্দের হাতিয়ার। সেটা বুঝেই গরু-রাজনীতির প্রতিযোগিতায় তাদের হারানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। সেই জন্যই পঞ্চায়েত ভোটের আগে গরু বিলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।

মন্ত্রী স্বপনবাবু অবশ্য এই ব্যাখ্যা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘ভোট বা রাজনীতির সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। আর এটা নতুন কোনও পদক্ষেপও নয়। আগেও এই কাজ হত গরিব পরিবারগুলির আর্থিক উন্নয়নের লক্ষ্যে।’’ দফতরের কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, গরু বিলি করলেই যদি রাজনীতি করা হয়, তা হলে রাজ্য সরকার মুরগি-রাজনীতিও করেছে। এ বছরই ৬০ লক্ষ মুরগির ছানা রাজ্য জুড়ে বিলি করা হয়েছে। পোলট্রির ডিম তৈরির জন্য বিশেষ উৎসাহ ভাতা দিচ্ছে সরকার। বছর দুই পর আর দুধ-মাংসের চাহিদা মেটাতে দক্ষিণ ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন