অনির্বাণ খাঁড়া
দ্বিতীয়, ষষ্ঠ, নবম, দশম।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রকাশিত মাধ্যমিকের মেধা-তালিকার প্রথম দশে এ বার জায়গা করে নিয়েছে হুগলির ছ’জন। তিন জন শহরাঞ্চলের পরীক্ষার্থী। বাকি তিন জন গ্রামীণ এলাকার। কিন্তু মেধার জোরে তারা টপকে গিয়েছে অনেককেই। এ দিন ফল প্রকাশের পর থেকেই উচ্ছ্বাসের ছবি দেখা গিয়েছে ছ’জনের বাড়িতেই। কারও চোখে স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, কেউ চায় ডাক্তারি পড়তে।
শ্রমণ জানা
ছ’জনের মধ্যে তারকেশ্বরের রামনগর নূটবিহারী পালচৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র অনির্বাণ খাঁড়াকে লড়াই করতে হয়েছে সবচেয়ে বেশি। কারণ, তার লড়াই ছিল দারিদ্রের সঙ্গেও। তারকেশ্বরের প্রত্যন্ত গ্রাম জগজীবনপুরের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি স্বদেশবাবুর ছেলে সে। সেই আয়ে সংসার সামলে ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাতে এতদিন হিমশিম খেয়েছেন স্বদেশবাবু। মাধ্যমিকে ৬৮৯ নম্বর পেয়ে অনির্বাণ বাবার মুখ রক্ষা করেছে। হাসি ফুটেছে স্বদেশবাবুর মুখে। একই সঙ্গে দুশ্চিন্তা ছেলের পরবর্তী পড়াশোনার খরচ নিয়ে।
অনীক ভৌমিক
৬৮৫ নম্বর পেয়ে ষষ্ঠ হয়েছে চন্দননগরের অরবিন্দ বিদ্যামন্দিরের ছাত্র শ্রমণ জানা। ফটকগোড়ার বাসিন্দা শ্রমণের চোখে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন। তার বাবা শান্তনু জানা পশু চিকিৎসক। ফটকগোড়ায় আরও এখ কৃতী রয়েছে। দুর্গাচরণ রক্ষিত বঙ্গ বিদ্যালয়ের ছাত্র অনীক ভৌমিক। ৬৮১ নম্বর পেয়ে সে রয়েছে দশম স্থানে। অনীকের বাবা অনুপ ভৌমিক স্কুল শিক্ষক। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় অনীক।
আদৃতা দাস
মেধা তালিকার নবম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে চুঁচুড়া বালিকা বাণীমন্দিরের আদৃতা দাস। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮২। বাবা অনিন্দ্য দাস বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তবে, এখনই ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে রাজি নয় আদৃতা। তার কথায়, ‘‘মেধা-তালিকায় ঠাঁই পাব, ভাবিনি। আপাতত বিজ্ঞান নিয়ে পড়ব। ভবিষ্যতের পথ উচ্চ মাধ্যমিকের পরে ঠিক করব।’’
নব্যেন্দু ঘটক
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মাধ্যমিকের মেধা-তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন স্কুল। এ বারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। গোঘাটের কামারপুকুর রামকৃষ্ণ বহুমুখী বিদ্যালয়য়ের ছাত্র নব্যেন্দু ঘটক ৬৮৫ নম্বর পেয়ে ষষ্ঠ হয়েছে। আবার গোঘাটেরই শ্যামবাজার গোপালচন্দ্র সেন হাইস্কুলের ছাত্র কল্যাণ নন্দী ৬৮১ পেয়ে দশম স্থানে নাম তুলেছে।
নব্যেন্দুর বাড়ি কামারপুকুর সংলগ্ন শ্রীপুর গ্রামে। বাবা সুশান্তকুমার ঘটক গোঘাটেরই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মা কৃষ্ণাদেবী গৃহবধূ। কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের পরিচালনাধীন কামারপুকুর রামকৃষ্ণ বহুমুখী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বামী তদবিদ্যানন্দ বলেন, “নব্যেন্দুর বহুমুখী প্রতিভা। ক্লাসে বরাবর প্রথম হতো। আবৃত্তি, ছবি আঁকা, বক্তৃতার মতো প্রতিযোগিতাতেও ও প্রথম হয়।’’
অন্য দিকে কল্যাণকে ঘিরে তাঁদের আশা যে পূরণ হয়েছে, তা মানছেন শ্যামবাজার গোপালচন্দ্র সেন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রথীন্দ্রনাথ মণ্ডল। কল্যাণের বাড়ি অবশ্য গোঘাট লাগোয়া পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার বিষ্ণুদাসপুরে। বাবা দেবীপ্রসাদ নন্দী চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত। মধ্যবিত্ত পরিবার। নব্যেন্দু এবং কল্যাণ— দু’জনেই চায় ডাক্তারি পড়তে।
কৃতি: উপর থেকে, অনির্বাণ খাঁড়া, শ্রমণ জানা, অনীক ভৌমিক, আদৃতা দাস, নব্যেন্দু ঘটক ও কল্যাণ নন্দী। ছবিগুলি তুলেছেন দীপঙ্কর দে, তাপস ঘোষ ও মোহন দাস