আশা জাগিয়ে এখন থেকেই ইলিশের ঢল নামবে

সংখ্যাটা এখন হয়তো নগণ্য! ৫টা, ১০টা। কিন্তু তাতেই বিপুল সম্ভাবনা!

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০৩:৩২
Share:

সংখ্যাটা এখন হয়তো নগণ্য! ৫টা, ১০টা। কিন্তু তাতেই বিপুল সম্ভাবনা!

Advertisement

বেশ কয়েক বছর পরে, সময়ের আগেই রুপোলি শস্যের আগমনী শোনা যাচ্ছে দিঘা, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, সাগরে। বর্ষার মরসুমে তাই প্রচুর ইলিশ পাওয়ার আশা করছেন মৎস্যজীবী এবং সরকারি কর্তারা।

বঙ্গোপসাগর লাগোয়া ওই সব তল্লাটের মৎস্যজীবীরা ইতিমধ্যেই দেখা পেয়েছেন ইলিশের। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন আবহাওয়ার কথা। গরম ও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি। প্রায়ই মেঘলা আকাশ। সঙ্গে পূবালি হাওয়া।

Advertisement

অভিজ্ঞ মৎস্যজীবীদের দাবি, সমুদ্রে যে সব জায়গায় ইলিশের ঝাঁক ঘোরাফেরা করে, অনুকূল আবহাওয়ার জন্য এ বার বর্ষার মরসুমের আগেই সেখান থেকে প্রায় ৩৫-৪০ কিলোমিটার উজানে চলে আসছে তারা। কাকদ্বীপের কালনাগিনী খালে, মৃদঙ্গভাঙা ও ঠাকুরান নদীতে, পাথরপ্রতিমার সপ্তমুখী নদীর সঙ্গে যু্ক্ত কয়েকটি খালে ঢুকে পড়ছে ইলিশ। জালে ৫টা, ১০টা ধরাও পড়ছে। অন্যান্যবার মরসুমের শুরুতে মোহনায় মাছের ঝাঁক আসে। বছর ছয়েক আগেও ঠিক এরকমই বর্ষার আগে ইলিশ মিলেছিল। মরসুমেও পাওয়া গিয়েছিল ব্যাপক হারে।

এ রাজ্যে এখনও মাছের ঝাঁকের গতিবিধি বোঝার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির (উপগ্রহ চিত্র বা জিপিএস) ব্যবহার মৎস্যজীবীদের মধ্যে সে ভাবে নেই। কিন্তু তাঁদের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেন মৎস্য দফতরের কর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, ইলিশের বেড়ে ওঠা বা জালে বেশি ধরা পড়ার পিছনে ঠিক কী কী কারণ থাকে, তা এক কথায় বলা সম্ভব নয়। এ নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে, দেখা গিয়েছে, ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি তাপমাত্রায় মোহনা এলাকায় ঝিরঝিরে বৃষ্টি এবং পূবালি হাওয়াই এ রাজ্যে ইলিশের জন্য আদর্শ। ওই তাপমাত্রায় মোহনা থেকে মাছ উজানে পাড়ি দেয়। এই আবহাওয়া যদি বজায় থাকে তা হলে ভরা মরসুমে ইলিশ বেশি ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন ওই কর্তারাও।

মৎস্য দফতরের ডায়মন্ড হারবারের সহ-অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎকুমার বাগ বলেন, ‘‘তাপমাত্রা, বৃষ্টি, সমুদ্র স্রোত ও পূবালি হাওয়া— মূলত এই বিষয়গুলি অনুকূল থাকলে ইলিশের জোগান বেশি হতে পারে। তবে, মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞার সময় বাড়ানো, ছোট মাছ ধরার উপর কড়াকড়ি করা হচ্ছে কয়েক বছর থেকেই। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এ বার ইলিশের পক্ষে অনুকুল হতে পারে।’’

ব্যারাকপুরের আন্তর্দেশীয় মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের ইলিশ-বিজ্ঞানী অর্চনকান্তি দাসও জানিয়েছেন, গত বছর তাঁরা থেকে সাতটি সচেতনতা কর্মসূচি পালন করেছিলেন। ইলিশ মেলে, এমন এলাকায় গিয়ে বহু মৎস্যজীবীকে ছোট ইলিশ না ধরতে বলা হয়েছে।তাতে কাজ হয়েছে ফলে, এ বার বেশি ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা।

সরকারি ভাবে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আসা ২০১২ সাল থেকে বন্ধ। দিল্লির আর্জি উড়িয়ে ঢাকা বৃহস্পতিবারই জানিয়ে দিয়েছে, এ বছরও নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকছে। ফলে স্থানীয় ইলিশের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে রাজ্যবাসীকে। কিন্তু গত ক’বছর তার দাম ছিল মধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার বাইরে। জোগানও তেমন ছিল না। এ বার ছবিটা পাল্টাতে পারে।

এখন যে ইলিশ মিলছে তা মূলত ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের। কাকদ্বীপ বন্দরের কাছেই বাস করেন মৎস্যজীবী ইন্দ্র হালদার। তিনি বলেন, ‘‘এখন নদী-সমুদ্রে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরা বারণ বলে এই সময়টা আমরা খালে মাছ ধরে সংসার চালাই। ঘটিহারা এলাকায় খ্যাপলা জাল ফেললে ইলিশ উঠছে।’’ পাথরপ্রতিমার জি-প্লটের বাসিন্দা অরবিন্দ দাসও বলেন, ‘‘দাসপুর-সহ সপ্তমুখীর বিভিন্ন খালে ইলিশ পাচ্ছি।’’

পূর্ব মেদিনীপুর উপকূলের শৌলা, বগুরান-জলপাই, দাদনপাত্রবাড় এলাকার মৎস্যজীবীরা লুকিয়ে-চুরিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে ইলিশ পাচ্ছেন। ‘দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সচিব শ্যামসুন্দর দাস বলেন, ‘‘গত মরসুমে দেড় হাজার টন ইলিশ পেয়েছিলাম। আবহাওয়া এমন চললে মনে হয় প্রায় ২২০০ টন ইলিশ পেয়ে যাব।’’

তবে, আগামী ক’দিনে পরিস্থিতি একই থাকবে কিনা, নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞেরা। ফলে সত্যিই ইলিশের ঢল নামবে কিনা, তা সময় বলবে। আপাতত আশায় মৎস্যজীবীরা।

সহ প্রতিবেদন: সুব্রত গুহ ও বিতান ভট্টাচার্য

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন