এক দম্পতির রক্তে এইচআইভি পজিটিভ ধরা পড়েছে। খেসারত দিতে হয়েছে তাঁদের ছ’বছরের শিশুকন্যাকে। এইচআইভি পজিটিভ অভিভাবকেরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই মেয়ে স্কুলে এলে বাকিরা আসবে না। তাই মুখ লুকিয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছিল ওই একরত্তি মেয়ে।
আর এক দম্পতির ক্ষেত্রে তো সমস্যা হল বাড়িতে থাকা নিয়েই। তাঁরা এইচআইভি পজিটিভ হওয়ায় এলাকায় থাকতে না দেওয়ার ফতোয়া জারি করেছেন স্থানীয়েরা। দিনের পর দিন একঘরে হয়ে বন্দি জীবন কাটাতে হয়েছে তাঁদের।
জীবাণু শুধু শরীরে বাসা বাঁধে না। তার দাপট ছড়ায় সম্পর্কেও। চিকিৎসকেরাই বলছেন, সুস্থ করে তোলার ওষুধ থাকলেও সামাজিক ছুৎমার্গ কাটেনি সর্বস্তরে। তাই তা নিয়ে আরও তৎপর হয়ে উঠছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা দফতর। সমাজের একটি ব়ড় অংশের মধ্যে এইচআইভি এবং বিভিন্ন সংক্রামক রোগ নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। তা কাটাতে নতুন ভাবে উদ্যোগী হয়েছে সরকার।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, স্কুলপ়ড়ুয়াদের কী ভাবে এইচআইভি নিয়ে আরও সচেতন করা যায়, তা নিয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে নতুন ভাবে আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ে পড়ুয়াদের কী ভাবে সচেতন করা হবে, তা নিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শিবিরের ব্যবস্থা করা হবে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট এডস প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল সোসাইটি’র সদ্য বিদায়ী প্রোজেক্ট ডিরেক্টর সৌমিত্র মোহন বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের সচেতন করতে পারলে পরে এই সমস্যা কমবে বলে আশা। তাই স্কুল স্তর থেকেই সচেতনা ছড়ানোর এই ভাবনা।’’
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নবম-দশম শ্রেণির জীবন ও পরিবেশবিদ্যা বইতে নানা সংক্রামক রোগের জীবাণু, সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি ও উপশমের তালিকা রয়েছে। তাতে শেষ ভাইরাস হিসেবে এইচআইভি-র উল্লেখ আছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, তা যথেষ্ট নয়। ছুৎমার্গ কাটাতে হলে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা দরকার। শুধু এইচআইভি নয়, শরীরের যে কোনও অঙ্গে সমস্যা হলেও বিনা দ্বিধায় চিকিৎসককে জানানো উচিত। সেই বিষয়েও আলাদা ভাবে পড়ুয়াদের বোঝানো হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, যৌনাঙ্গ কিংবা স্তন নিয়ে কোনও সমস্যা হলে অনেক সময়ে মহিলারা চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। পাশাপাশি, ঋতুস্রাবের সময়ে পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয়তার বোধও সকলের নেই। এগুলি নিয়েও স্কুলস্তর থেকে জানানো হবে।
এই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্কুল স্তর থেকে সচেতনতা তৈরির কাজ শুরু হলে সমাজে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা দফতরের যৌথ প্রয়াসে প্রচেষ্টা সফল হবে।’’
পড়ুয়াদের সচেতন করতে পাঠ্যসূচিতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাই যথেষ্ট কি না, প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। তাঁরা মনে করছেন, একাধিক সামাজিক বিষয় নিয়ে পড়ুয়াদের সচেতন হওয়া দরকার। সব পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। স্কুল স্তর থেকে পড়ার সঙ্গে সচেতনতা বাড়ানোর অন্য উপায় নিয়েও ভাবতে হবে। স্কুলের নানা অনুষ্ঠানে সামাজিক বিষয় তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি হাতেকলমে কাজ করতে শেখাতে হবে। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার যেমন বলেন, ‘‘পাঠ্যসূচিতে সংক্রামক ব্যাধির অন্তর্ভুক্তি গঠনমূলক সিদ্ধান্ত। কিন্তু তা সব বিষয়কে জানার একমাত্র উপায় হতে পারে না। পড়ুয়াদের গণমাধ্যমের ব্যবহার শেখাতে হবে। খবরের কাগজ, রেডিও, টিভি— যে সব মাধ্যমে সামাজিক বিষয় উঠে আসে, সেখান থেকেও জানার আগ্রহ তৈরি করতে হবে। তা হলে স্কুলের বাইরেও পড়ুয়ারা বহু বিষয়ে সচেতন হতে পারবে।’’