Arabul Islam

তিন বছর বিধানসভার পেনশন পাননি প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল, ‘তাজা’ নেতার বকেয়ার পরিমাণ কত? হিসেব কষছে সচিবালয়

২০০৬ সালে বিধানসভায় তৃণমূলের ৩০ জন বিধায়ক ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন আরাবুল। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড় আসন থেকে সিপিএম প্রার্থী মোশাররফ হোসেন লস্করকে সাড়ে চার হাজার ভোটে হারিয়ে বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:৩২
Share:

আরাবুল ইসলাম। —ফাইল চিত্র।

বাংলার রাজনীতিতে তাঁর পরিচিতি ‘তাজা’ নেতা হিসাবে। তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত থাকলেও, ভাঙড়ের রাজনীতিতে বরাবরই প্রাসঙ্গিক প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলাম। এমন একজন প্রভাবশালী প্রাক্তন বিধায়কের বিধানসভার পেনশন বন্ধ রয়েছে প্রায় তিন বছর। সম্প্রতি বিষয়টি নজরে আসে আরাবুলের। তৎক্ষণাৎ তিনি যোগাযোগ করেন বিধানসভায় তৃণমূল পরিষদীয় দলের সঙ্গে। তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয় নিজের সমস্যার কথা বিধানসভার পেনশন বিভাগকে জানাতে। সেই পরামর্শমতো আরাবুল তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

Advertisement

বিষয়টি খতিয়ে দেখে বিধানসভার ওই বিভাগ থেকে আরাবুলকে জানানো হয়, গত তিন বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সাল থেকে তাঁর ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ জমা পড়েনি বিধানসভার কাছে। তাই গত তিন বছর ধরে পেনশন বন্ধ রয়েছে তাঁর। সরকারি নিয়মে যে কোনও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কিংবা প্রাক্তন বিধায়ককে প্রতি বছর নিয়ম করে নভেম্বর মাসে নিজেদের জীবিত থাকার প্রমাণ হিসাবে ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ জমা দিতে হয়। ফলে তাঁর পেনশনটি স্বাভাবিক নিয়মেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিধানসভার ওই বিভাগ থেকে আরাবুলকে পরামর্শ দেওয়া হয়, দ্রুত যেন তিনি তাঁর ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ জমা করে দেন। তা হলেই তিন বছরের যাবতীয় বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পেনশনও চালু করা হবে।

মঙ্গলবার বিধানসভায় এসে নিজের ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ জমা দিয়ে গিয়েছেন ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমার পেনশন সংক্রান্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি আমার অফিস দেখভাল করত। তারা আমাকে লাইফ সার্টিফিকেটের বিষয়টি না-জানানোয়, আমি যথাসময়ে তা জমা দিতে পারিনি। কিন্তু বিধানসভার আধিকারিকেরা আমার কাছে লাইফ সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার কথা বললে আমি তা জমা দিয়েছি। আশা করি খুব শীঘ্রই আমার পেনশন চালু হয়ে যাবে।’’

Advertisement

বিধানসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ জমা না-পড়ায় প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুলের পেনশন দেওয়া যাচ্ছিল না। নতুন বছরের প্রথম মাসেই আরাবুলের যাবতীয় বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পেনশন দেওয়া শুরু হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নিয়মানুযায়ী, একজন বিধায়ক মাত্র এক বার নির্বাচিত হলে তিনি ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত পেনশন পেতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে আরাবুল ২০০৬ সালে মাত্র এক বার ভাঙড় বিধানসভা থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন। তাই তিনি মাসে ১৪ হাজার টাকা করে পেনশন পান। হিসাব কষে জানা গিয়েছে, প্রায় পাঁচ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা পেনশন বাবদ বিধানসভার কাছে বকেয়া হয়ে গিয়েছে আরাবুলের।

২০০৬ সালে বিধানসভায় তৃণমূলের ৩০ জন বিধায়ক ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন আরাবুল। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড় আসন থেকে সিপিএম প্রার্থী মোশাররফ হোসেন লস্করকে সাড়ে চার হাজার ভোটে হারিয়ে বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১১ সালে তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থী নান্নু হোসেন বিদ্রোহী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ায় পরিবর্তনের হাওয়াতেও সিপিএমের বাদল জমাদারের কাছে সাড়ে তিন হাজার ভোটে পরাজিত হন তিনি। তার পর আদিগঙ্গা দিয়ে কয়েক লক্ষ কোটি গ্যালন জল প্রবাহিত হয়ে গিয়েছে। এই সময়কালে দলের কাছে গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমেছে আরাবুলের, এমনটাই মত তাঁর অনুগামীদের। এই সময়কালে দু’বার দীর্ঘ কারাবাস হয়েছে তাঁর। তৃণমূল থেকে সাসপেন্ডও হয়েছেন দু’বার। তা সত্ত্বেও পর পর দু'বার ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদে থেকে কাজ করেছেন। ২০২৬ সালে ভাঙড় বিধানসভা আসনটি আইএসএফের থেকে ছিনিয়ে নিতে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব আস্থা রাখছে একদা দাপুটে সিপিএম নেতা তথা বর্তমান ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লার উপর। এমন সমীকরণে ভাঙড়ের রাজনীতিতে গত কয়েক বছরে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন এই ‘তাজা’ নেতা। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। এমতাবস্থায় আবারও তিনি শাসকদলের হয়ে ভোটে দাঁড়াতে চান কি? প্রশ্নের জবাবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরাবুল বলছেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement