সারা বিশ্বকে গ্রাস করেছে করোনাভাইরাস আতঙ্ক। ছবি: সংগৃহীত।
দেশের প্রথম দু’জন আক্রান্তের সঙ্গে কলকাতা-যোগ ছিল। ভারতে নোভেল করোনাভাইরাসে (এনসিওভি) আক্রান্ত তৃতীয় জনের সঙ্গেও এই শহরের যোগ পাওয়া গেল। ২৩ জানুয়ারির বিমানে প্রথম দু’জন চিন থেকে কলকাতা হয়ে কেরলে ফেরেন। তৃতীয় জন ২৫ জানুয়ারির বিমানে কেরলে ফিরেছেন কলকাতা বিমানবন্দর হয়েই। সেই বিমানে কলকাতায় ফেরা দু’জনের খোঁজ শুরু করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।
এ দেশে করোনা-আক্রান্ত তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উহানের যে-ভারতীয় পড়ুয়ার নাম নথিভুক্ত হয়েছে, ২৫ জানুয়ারি চিনের গুয়াংঝাও শহর থেকে কলকাতায় আসেন তিনি। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, তৃতীয় আক্রান্তের বিমানে থাকা সংশ্লিষ্ট দুই যাত্রীর মধ্যে এক জন চর্মজাত পণ্যের ব্যবসা সূত্রে এক মাসেরও বেশি সময় চিনে ছিলেন। দ্বিতীয় জন চিনা পর্যটক। কলকাতায় আসা দু’জন যাত্রীর আসন আক্রান্তের কাছাকাছি হওয়ায় এনসিওভি-র চিকিৎসা প্রোটোকল অনুযায়ী তাঁদের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা উচিত। চিনা পর্যটক দিল্লি চলে গিয়েছেন। আর এ রাজ্যের যুবক কর্মব্যস্ততার জন্য আবেদন জানিয়েছেন, তাঁর লালারসের নমুনা যেন কয়েক দিন পরে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ওই বিমানের পাঁচ জন কর্মীকেও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চিনা পর্যটক নিজের পরিচয় জানানোর আবেদনপত্রে ঠিকানার জায়গায় কলেজ স্ট্রিটের একটি হোটেলের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। সেই হোটেল-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে জানা যায়, কলকাতায় আসার পরের দিনেই গুয়াংডং শহরের ওই পর্যটক দিল্লি চলে যান। কলকাতাবাসী যুবক জানান, পারিবারিক ব্যবসার কাজে তিনি প্রায়ই চিনে যান। এ বার নানিং শহরে এক মাস ছিলেন। মাঝখানে আট দিনের জন্য মঙ্গোলিয়া গিয়েছিলেন। ফেরার আগে কুনমিংয়ে দু’দিন থেকে গুয়াংঝাও থেকে তিনি কলকাতায় ফেরার বিমান ধরেন।
ওই যুবকের কথায়, ‘‘নানিংয়ে কোনও করোনা-আক্রান্তের খবর পাইনি। শেষ চার দিন নিজেকে হোটেলবন্দি করে রেখেছিলাম। যে-দিন ফেরার কথা, সে-দিন ট্রেন ধরে সোজা গুয়াংঝাও বিমানবন্দরে চলে যাই। সারা রাস্তাই মুখোশ পরে ছিলাম। ওই বিমানে ভারতের তৃতীয় করোনা-আক্রান্ত ব্যক্তি আমার সহযাত্রী ছিলেন ভেবে ভয় লাগছে।’’
তবে তিনি এখনই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা ভাবছেন না বলে জানান ওই যুবক। তিনি বলেন, ‘‘আমার কোনও করোনা-লক্ষণ নেই। সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের বলেছি, এখন খুব ব্যস্ত আছি। লালারসের নমুনা পরীক্ষা করাতে যাব কয়েক দিন পরে।’’
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’-এ এ দিন ভর্তি হন তিন জন। আইডি সূত্রের খবর, ওই তিন জনের মধ্যে এক বিমানসেবিকা আছেন। ব্যাঙ্কক থেকে ফিরে সর্দিকাশি হওয়ায় কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সোমবার রাতে তাঁকে আইডি-তে পাঠান। বিমানসেবিকার লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজ়িজ়েস বা নাইসেডে পাঠানো হয়েছে। অন্য দু’জন সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। ব্যাঙ্কক থেকে ঘুরে আসার পরে তাঁদের কাশি ও জ্বর হচ্ছে। তাঁদের লালারসের নমুনা আজ, বৃহস্পতিবার পরীক্ষার জন্য পাঠানোর কথা। আইডি-র সুপার আশিস মান্না বলেন, ‘‘নতুন-পুরনো মিলিয়ে এখন পাঁচ জন ভর্তি আছেন। আমরা যে-সব নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলাম, সবই নেগেটিভ (অর্থাৎ করোনার ভাইরাস মেলেনি) এসেছে।’’
স্বাস্থ্য দফতর বুধবার বিবৃতিতে জানায়, এ দিন নতুন করে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে ১৩ জনকে। এ-পর্যন্ত হাসপাতাল এবং হোম আইসোলেশনে আছেন মোট ২৮ জন।