সুগতকে ধাক্কাধাক্কিতে নাম জড়াল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের

কলেজের নয়, বাইরের পড়ুয়াদের তাণ্ডবেই হেনস্থা হতে হয়েছে উপাচার্য সুগত মারজিতকে। খোদ কলকাতা পুরসভার মেয়রের কেন্দ্রের কলেজের এই ঘটনায় ফের জড়িয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নাম। বুধবার কলেজের সমস্ত সিসিটি‌ভি ফুটেজ এবং মোবাইলে তোলা ভিডিও দেখে এমনটাই জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ১৮:৩৩
Share:

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিযুক্ত ছাত্রী।

কলেজের নয়, বাইরের পড়ুয়াদের তাণ্ডবেই হেনস্থা হতে হয়েছে উপাচার্য সুগত মারজিতকে। খোদ কলকাতা পুরসভার মেয়রের কেন্দ্রের কলেজের এই ঘটনায় ফের জড়িয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নাম। বুধবার কলেজের সমস্ত সিসিটি‌ভি ফুটেজ এবং মোবাইলে তোলা ভিডিও দেখে এমনটাই জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। নিগ্রহের নেতৃত্বে থাকা দুই বহিরাগত বিক্ষোভকারী যে সক্রিয় ভাবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী সেই বিষয়টিও সামনে উঠে এসেছে।

Advertisement

মঙ্গলবার অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবি নিয়ে বড়িশার বিবেকানন্দ গার্লস কলেজের অধ্যক্ষা-সহ শিক্ষিকাদের উপর চড়াও হয় একদল ছাত্রী। কলেজে ভূগোল বিভাগের সমাবর্তন চলাকালীনই অধ্যক্ষার ঘরে ঢুকে অভব্য আচরণ করতে থাকেন তাঁরা। সমাবর্তনে যোগ দিয়ে ফিরে যাওয়ার পথে উপাচার্যের গাড়ি আটকায় ওই পড়ুয়ারা। গাড়ি থেকে নেমে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে উপাচার্যকে ধাক্কাও মারেন এক ছাত্রী। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে অটো করে কলেজ থেকে বেরিয়ে যেতে হয় উপাচার্যকে।

আরও পড়ুন: ‘বিধি তৈরি হলে ভালই হত’, বলছেন উপাচার্য

Advertisement

উপাচার্য পদে যোগ দিয়েই নিজেকে ‘সরকারের লোক’ বলে দাবি করেছিলেন সুগত মারজিত। মঙ্গলবারের নিগ্রহের ঘটনায় ফের সেই শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের নামই জড়িয়েছে। সিসিটি‌ভি থেকে পাওয়া ফুটেজ অনুযায়ী দেখা গিয়েছে, গাড়ি আটকে যে ছাত্রী উপাচার্যকে ধাক্কা মারেন তিনি কলকাতারই দেশবন্ধু কলেজ ফর গার্লসের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বর্তমান সহকারী সাধারণ সম্পাদক টিঙ্কু দাস। শুধু তাই নয় অধ্যক্ষার ঘরে ঢুকে বিক্ষোভকারীদের নেতৃত্বের মুখ হিসেবে দেখা গিয়েছে দেশবন্ধু কলেজেরই টিএমসিপির সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদা খাতুনকে। বুধবার টিঙ্কুকে ফোন করা হলে তিনি পুরো বিষয়টি শুনে ফোন কেটে দেন। এর পর তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। ফোন বন্ধ করে রেখেছেন ওয়াহিদাও।


ধাক্কাধাক্কিতে অভিযুক্ত ছাত্রীরা।

গোটা ঘটনায় কলেজের থেকেও যে বহিরাগতরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল তা মেনে নিয়েছেন উপাচার্য সুগত মারজিতও। বুধবার সুগতবাবু জানিয়েছেন, ‘‘মঙ্গলবার আমার গাড়ি প্রথম যে আটকায় সে একটি ছেলে, মেয়েদের কলেজে ছেলে কী করছিল? আমার যা মনে হয়েছে বিষয়টা শুধু কলেজেই আটকে নেই, বহিরাগত কিছু জনের ইন্ধন রয়েছে।’’ তা হলে উপাচার্য আসবেন বলেই কী এ দিন বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে? ‘‘আমার উপস্থিতি খানিকটা এর কারণ তো বটেই। আগে থেকে পরিকল্পনা করেই এটা করা হয়েছে। তবে ওঁদের দাবি একেবারেই অন্যায়, অন্যায্য। এটা মেনে নেওয়া যায় না’’— বলেন তিনি। কিন্তু বিষয়টি নিছক অকৃতকার্যদের পাশ করিয়ে দেওয়াই নয় আসলে, ‘‘এটা বস্তুত একটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেটা সারা পশ্চিমবঙ্গেই ছড়িয়ে গিয়েছে, এর থেকে বাদ পড়ছে না রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রগুলিও’’— আক্ষেপ উপাচার্যের।

মঙ্গলবারের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সহ বিক্ষোভরত ছাত্রীদের নাম, রোল নম্বর চেয়ে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার কলেজেও শিক্ষিকদের বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছে।

এর আগেও কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষাক্ষেত্রে অরাজকতা এবং বিশৃঙ্খলা তৈরিতে নাম জড়িয়েছে শাসকদলের ছাত্র সংগনেরই। বিধানসভা নির্বাচনের চলার মধ্যেই এই ধরণের ঘটনা কী দলের অস্বস্তিই বাড়ালো আরও? গোটা বিষয় শুনে পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য কড়া পদক্ষেপ করার কথাই জানিয়েছেন। যদিও ঘটনায় টিএমসিপি যুক্ত কিনা এ বিষয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এমন দুর্দশাও আসেনি যে সংগঠনের ফ্ল্যাগ ছাড়াই আন্দোলনে নামতে হবে।’’ পার্থবাবুর পথেই হেঁটে তৃণমূল ছাত্র সংসদের সভাপতি অশোক রুদ্রও জানিয়েছেন, ‘‘উপাচা‌র্যকে নিগ্রহ মানা যায় না। যদি প্রমাণ হয়ে থাকে যে ওই দুইজন তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত দল অবশ্যই কড়া ব্যবস্থা নেবে।’’

গোটা ঘটনার নিন্দা করেছে শিক্ষামহল। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উপাচার্যকে হেনস্থার ঘটনা খুবই নিন্দাজনক। মুখ্যমন্ত্রীর বাহিনীরা এই ঘটনা করছে জেনে খুব একটা অবাক হলাম না।’’

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যায়ের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকারের লোক যে ভাবে শাসক দলের ছাত্র নেতাদের হাতে নিগৃহীত হলেন তা আশ্চর্যজনক। এটাতো মনে হয় গোষ্ঠী দ্বন্দের প্রকাশ।’’

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকার বলেন, ‘‘উপাচার্য বুদ্ধিমান মানুষ। দেরি করে হলেও তিনি সার সত্য বুঝেছেন শিক্ষাঙ্গনে সর্বত্র রাজনীতি ঢুকে গিয়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন