এই কর্মসূচিতে এক কেন্দ্রের সাংসদ বা বিধায়ককে অন্য কেন্দ্রে পাঠানো হবে। প্রতীকী ছবি।
সাধারণত বিরোধীরা যে সব অভিযোগে শাসকের দিকে আঙুল তোলে, এ বার নিজেরাই সেগুলির সত্যাসত্য আগাম যাচাই করে নিতে চাইছে রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। এই পদ্ধতিটি অনেকটা যেন ‘দুয়ারে তৃণমূল’।
জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১০ দিন করে জনসংযোগের কর্মসূচিতে দলের সাংসদ-বিধায়কদের রাজ্যের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার গ্রামে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল। গ্রামবাসীদের সঙ্গে সেই মতবিনিময়েই নির্দিষ্ট কয়েকটি তথ্য যাচাইয়ের এই পরিকল্পনা করেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই কর্মসূচিতে এক কেন্দ্রের সাংসদ বা বিধায়ককে অন্য কেন্দ্রে পাঠানো হবে। এবং তাঁদের মাধ্যমেই সংশ্লিষ্ট এলাকার তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এই কাজের জন্য একটি প্রশ্নমালা তৈরি করা হয়েছে। ছাপানো ওই প্রশ্নমালার প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তরে সাধারণ মানুষ যা বলবেন তা লিখে দলীয় নেতৃত্বের কাছে পাঠাতে বলা হচ্ছে ওই জনপ্রতিনিধিদের। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে দল ও সরকার সম্পর্কে নির্দিষ্ট তিনটি প্রশ্নের জবাব সাংগঠনিক প্রস্তুতির জন্য তৃণমূলের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে খবর, সর্বত্রই স্থানীয় নেতাদের সম্পর্কে মানুষের কী ধারণা, তা জানতে একটি প্রশ্ন নিয়ে যাবেন অন্য এলাকা থেকে নির্বাচিত দলীয় প্রতিনিধিরা। সেখানেই তাঁরা জানতে চাইবেন, তৃণমূলের সেখানকার নেতাদের আচার-আচারণ কেমন। কারও আচারণে সাধারণ মানুষ ‘ব্যথিত’ হলে সে সম্পর্কেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে ওই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে দলকে তা জানাতে হবে। শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অনেকের ঔদ্ধত্য, দুর্ব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে মানুষের ক্ষোভ থাকে। বিরোধীরাও সেই ক্ষোভকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করে। সে সব ‘সংশোধন’-এর লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে দাবিকরা হয়েছে।
এ ছাড়াও, সরকারি কাজকর্ম সম্পর্কে ধারণা পেতে দলের তরফে আরও দুটি প্রশ্নের উত্তর পেতে চাইছে তৃণমূল। তার একটি, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্য সরকারের তরফে সাধারণ মানুষের জন্য যে ৬৬ প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে, তার কোন সুবিধা কোন পরিবারের কাছে পৌঁছেছে। আর উপযুক্ত হয়েও কেউ কোনও প্রকল্পের সুবিধা না পেলেও, কেন তা পাননি তা জানতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গেই এলাকার কোনও সমস্যা আছে কি না, জনসংযোগের এই কর্মসূচিতে প্রত্যেকের কাছে তা-ও জানতে চাইবেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, ‘নতুন বছরে নতুন তৃণমূলে’র স্লোগানকে সামনে রেখে এই কর্মসূচি শাসকদলের দ্বিমুখী কৌশল। প্রথমত, এই মুহূর্তে গ্রামাঞ্চলে দলের ‘হাল’ যাচাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা। পাশাপাশি বিরোধীদের প্রচারের জায়গাটিকেও ‘ভোঁতা’ করার চেষ্টা।