Calcutta High Court

বিনা দোষে ১৩ বছর জেলে, মুক্তি পেয়েও মূল স্রোতে ফিরতে বাধা সরকারি নীতি! হাই কোর্টে মহিলা

আদালত ‘নির্দোষ’ ঘোষণার পরে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে খুনির তকমা ছেড়ে অপরাজিতা মূলস্রোতে ফিরতে সক্রিয় হন। কিন্তু তাতেও বাধা। রাজ্যের পরামর্শ, টোটো চালান বা পোলট্রি ফার্ম খুলুন!

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৫ ২২:২১
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

বিনা অপরাধে জেলে কাটিয়েছেন ১৩ বছর। হাই কোর্টের নির্দেশে মুক্তির পরেও শহরের এক মহিলার মূল স্রোতে ফেরার পথে রাজ্যের কর্মসং‌স্থান প্রকল্পের নীতি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। কারণ, পোলট্রি ফার্ম খোলা বা টোটো চালানোর ক্ষেত্রে সহায়তার আশ্বাস মিললেও রাজ্যের বর্তমান ‘কর্মসংস্থান স্কিম’ শিশুশিক্ষায় সাহায্য করার পথে অন্তরায় হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

স্বামীকে খুনের অপরাধের ২০০০ সালের মামলায় নিম্ন আদালতে ১৩ বছর জেলের সাজা হয়েছিল অপরাজিতা বসুর। পরে পুলিশি তদন্তে একাধিক গাফিলতির অভিযোগ তুলে তাঁকে ২০১৩ সালে বেকসুর খালাস দিয়েছিল হাইকোর্ট। ততদিনে ১৩ বছর জেলে কেটে গিয়েছে। অপরাজিতার দ্বিতীয় লড়াই তখন থেকে শুরু। খুনির তকমা ছেড়ে অপরাজিতা মূলস্রোতে ফিরতে সক্রিয় হন। কিন্তু তাতেও বাধা। অভিযোগ, রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতর পরামর্শ দেয়, টোটো চালান বা পোলট্রি ফার্ম খুলুন। এতে ঋণ দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু অপরাজিতা চান ছোট বাচ্চাদের পড়াতে। তাতেই রাজ্য আদালতে জানায় এ সব আবদার বেসরকারি ক্ষেত্রে করা যায়। কিন্তু রাজ্যের কোনও স্কিম নেই।

মঙ্গলবার এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি অমৃতা সিংহ বিরক্ত হয়ে মন্তব্য করেন, ‘‘এক জন মূল স্রোতে ফিরবেন আর রাজ্য তাঁকে ঋণ দিতে চায়? সে কী ভাবে সেটা পরিশোধ করবে?’’ প্রসঙ্গত, ২০০০ সালে কলকাতার অভিজাত পরিবারের ছেলে কুণাল বসু খুন হয়েছিলেন। কুণালের মা অভিযোগ করেন কুণালের বন্ধু ও তাঁর বৌমা অপরাজিতার সম্পর্ক ছিল। সেই কারণেই দু’জনে খুন করেছেন কুণালকে। বৃদ্ধার অভিযোগে গ্রেফতার হন অপরাজিতা। দুই শিশুপুত্রকে ছেড়ে অপরাজিতার ঠাঁই হয় কারাগারে। ১৩ বছর পরে হাই কোর্টের নির্দেশে অপরাজিতা যখন মুক্তি পান, তত দিনে শিশুপুত্রেরা কিশোর। মাকে গ্রহণই করতে চায় না তারা।

Advertisement

নিজের সন্তানদের ঘৃণা, অবজ্ঞার পর নতুন ভাবে বাঁচতে চান অপরাজিতা। নিজের পায়ে দাঁড়াতে তাই রাজ্যের কাছে আবেদন করেন। রাজ্য জানায়, তাদের প্রকল্প রয়েছে। সেখানে তিনি টোটো চালাতে পারেন, অথবা পোলট্রি খুলতে পারেন। উপায় না দেখে অপরাজিতা আবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁর আইনজীবীর বক্তব্য, শিক্ষিতা সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে অপরাজিতা বাচ্চাদের পড়াতে চান। কিন্তু রাজ্য তাকে টোটো চালাতে বলছে! তা হলে সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা মূল স্রোতে ফিরবেন কী ভাবে? বিচারপতি সিংহ রাজ্যের কর্মসংস্থান প্রকল্পের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘ঋণ নিয়ে কী ভাবে পরিশোধ করবেন অপরাজিতা? সেই সঙ্গে আর্থিক সহয়তার বিষয়ে রাজ্যকে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement