(বাঁ দিকে) মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে সোমবার ফের চিঠি পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর কাজ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় ফের অসন্তোষ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে এই মর্মে ইতিমধ্যে চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। কমিশন কি কোনও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে চেষ্টা করছে? মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে পাঠানো দু’পাতার চিঠিতে ছত্রে ছত্রে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, এসআইআর-এর কাজে চুক্তিভিত্তিক ডেটা এন্ট্রি অপারেটর বা বাংলা সহায়ক কেন্দ্রের কর্মীদের ব্যবহার করা যাবে না। টেন্ডার ডেকে এক বছরের জন্য এক হাজার ডেটা এন্ট্রি অপারেটর এবং ৫০ জন সফ্টঅয়্যার ডেভেলপার নিয়োগের জন্য রাজ্যকে প্রস্তাব দিয়েছিল সিইও দফতর। এই নিয়েই প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর। সোমবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, জেলাস্তরের অফিসগুলিতে এই কাজ করার জন্য আগে থেকেই কর্মী নিযুক্ত রয়েছেন। সে ক্ষেত্রে বাইরে থেকে গোটা বছরের জন্য লোক নিয়োগ করার কী এমন প্রয়োজন পড়ল সিইও দফতরের, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা।
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সাধারণত সংশ্লিষ্ট এলাকার অফিসগুলিই নিজেদের প্রয়োজনমতো চুক্তিভিত্তিক ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ করে। ফলে জরুরি ভিত্তিতে কোনও প্রয়োজন পড়লে জেলাস্তরের অফিসগুলি নিজেরাই সেই নিয়োগ করতে পারে। এ বিষয়ে জেলাস্তরের অফিসগুলিকে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। তার পরেও জেলার অফিসগুলিকে টপকে সিইও দফতর থেকে কেন এই নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি লিখেছেন, এখন যাঁরা নিযুক্ত রয়েছেন এবং যাঁদের নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে— এই দুই ধরনের ক্ষেত্রে কর্মীদের কাজে কী এমন পার্থক্য থাকবে! তা হলে কায়েমি স্বার্থ পূরণ করার জন্য কোনও রাজনৈতিক দলের নির্দেশেই কি এই ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে?
পাশাপাশি, যে সময়ে এবং যে ভাবে এই নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা নিয়েও সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে পাঠানো চিঠিতে আরও একটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন মমতা। চিঠিতে তিনি লেখেন, কমিশন ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ভবনকেও ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের কথা ভাবছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। এই মর্মে জেলাস্তরের আধিকারিকদের থেকে প্রস্তাবও চাওয়া হয়েছে। এই ধরনের পদক্ষেপ কেন করা হচ্ছে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
চিঠিতে মমতা লেখেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার দুই কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনও সরকারি বা আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানেই ভোটকেন্দ্র করা হয়। যাতে সাধারণ মানুষের সেখানে পৌঁছোতে সুবিধা হয় এবং নিরপেক্ষতাও বজায় থাকে— তাই এই ভবনগুলিকে বেছে নেওয়া হয়। এই ব্যবস্থা যেমন রয়েছে, তেমনই থাকা উচিত বলে মনে করছেন তিনি। বেসরকারি ভবনে কেন ভোটকেন্দ্র করা উচিত নয়, তারও কারণ ব্যাখ্যা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার বক্তব্য, বেসরকারি ভবনে ভোটকেন্দ্র গড়া হলে সেখানে স্বচ্ছতার সঙ্গে আপস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একই সঙ্গে বিধিভঙ্গের আশঙ্কাও থাকে। সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণির মধ্যে একটি বৈষম্য তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তার পরেও কেন এমন পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তা নিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন, এ ক্ষেত্রেও কি কোনও রাজনৈতিক দলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে? এই বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিয়ে, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ ভাবে বিবেচনা করার জন্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে অনুরোধ করেছেন তিনি।
কয়েক দিন আগেও জ্ঞানেশকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গত সপ্তাহের ওই চিঠিতে এসআইআর প্রক্রিয়া স্থগিতের অনুরোধ জানান তিনি। তাঁর অভিযোগ, পরিকল্পনাহীন ভাবে এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের দুই বুথ লেভেল অফিসারের (বিএলও) মৃত্যু এবং অসুস্থতার খবর মিলেছে। অভিযোগ, এসআইআরের কাজের চাপেই এ হেন ঘটনা ঘটছে। মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে বিএলও-দের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে আনেন ওই চিঠিতে।