শিক্ষারত্ন হতে চান? দরখাস্ত দিন অনলাইনেই

আগামী সেপ্টেম্বরে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে যাঁদের ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মান দেওয়া হবে, তাঁদের বেছে নেওয়া হবে অনলাইনে আসা আবেদনের মধ্য থেকে। অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্য থেকে যোগ্যদের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতেই এ বার থেকে এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে

Advertisement

মধুমিতা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৭ ০৩:৫৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

অভিযোগ উঠছে স্বজনপোষণের। তাই এ বার থেকে রাজ্য সরকারের ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মান পেতে হলে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিজেদেরই আবেদন করতে হবে। আর সেই আবেদনপত্র পেশ করতে হবে অনলাইনে। এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর।

Advertisement

ওই দফতর সূত্রের খবর, শিক্ষারত্ন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রায় ছ’বছর ধরে চলে আসা পদ্ধতিতে কিছু বদল ঘটানো হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বরে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে যাঁদের ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মান দেওয়া হবে, তাঁদের বেছে নেওয়া হবে অনলাইনে আসা আবেদনের মধ্য থেকে। অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্য থেকে যোগ্যদের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতেই এ বার থেকে এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে, জানান স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা।

এই পরিবর্তিত বন্দোবস্ত নিয়েও শিক্ষা শিবিরে প্রশ্ন উঠছে মূলত দু’দিক থেকে। প্রথমত, যে-সব শিক্ষক-শিক্ষিকার দক্ষতা ও অবদান প্রশ্নাতীত, তাঁরা কি নিজের থেকে পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে আদৌ উদ্যোগী হবেন? শিক্ষা মহলের একাংশের বিশ্বাস, প্রকৃত গুণী শিক্ষকেরা আত্মমর্যাদাবোধ থেকেই এই রাস্তা এড়িয়ে চলবেন। দ্বিতীয়ত, অনলাইনে আবেদনের ব্যবস্থা চালু হলেই কি স্বজনপোষণের প্রবণতা ঠেকানো যাবে?

Advertisement

আরও পড়ুন: ঘরছাড়া অন্তঃসত্ত্বাদের আশ্রয় এখন কওসর-অসীমরাই

আপাতত এই সব প্রশ্নের সদুত্তর মিলছে না। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মান দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছর মোট ১০০ জন স্কুলশিক্ষককে এই সম্মান দেওয়া হয়। কিন্তু বিরোধী পক্ষের অভিযোগ, এই সম্মানকে ঘিরে স্বজনপোষণ হয়। আগে সংশ্লিষ্ট জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছ থেকে শিক্ষকদের নাম আসত। তার থেকে জেলা-ভিত্তিক একটি কমিটি কিছু নাম বেছে স্কুলশিক্ষা দফতরে পাঠাত।

স্কুলশিক্ষকদের সম্মান জানানোর ব্যবস্থা ছিল বামফ্রন্টের আমলেও। তবে সেটার নাম ‘শিক্ষারত্ন’ ছিল না। তখন প্রতি বছর ১৫-২০ জন স্কুলশিক্ষককে সম্মান জানানো হতো। স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, বাম জমানায় যোগ্য শিক্ষক বা শিক্ষিকা বাছাই করা হতো অনেক দেখেশুনে। কিন্তু প্রাপকের সংখ্যাটা এখন ১০০ করে দেওয়ায় বাছাইয়ে আর তেমন কড়াকড়ি করা হয় না। ফলে বিরোধী শিবিরও অভিযোগ তোলার সুযোগ পেয়ে যায় যে, স্কুল স্তরে এই সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ চলছে যথেচ্ছ। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাজকর্মের গুণগত মানকে গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না।

এই ধরনের অভিযোগ এবং বিতর্ক সামলাতেই এ বার থেকে ওই রত্ন-সম্মান পেতে ইচ্ছুক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনলাইনে আবেদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে শিক্ষক মহলের একাংশের অভিমত। তবে অনলাইন পদ্ধতিতেও বাছাই যথাযথ হবে কি না, সেই ব্যাপারে বিরোধীরা রীতিমতো সন্দিহান। ওই শিবিরের অনেকের বক্তব্য, পদ্ধতি বদলালেও এতে স্বজনপোষণ বন্ধ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং প্রকৃত গুণী শিক্ষকদের আবেদনে অনীহার সুযোগে স্বজনপোষণটা আরও বৃহৎ মাত্রায় হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বুধবার বলেন, ‘‘অনলাইন ব্যবস্থা চালু হলেই যে বাছাইয়ে স্বচ্ছতা আসবে, তার কোনও কোনও নিশ্চয়তা নেই। আসলে এ ক্ষেত্রে যেটা সর্বাগ্রে দরকার, সেটা হল পুরস্কার-সম্মানের বিষয়টিকে সম্পূর্ণ ভাবে রাজনীতির বাইরে রাখা।’’ এ রাজ্যে শিক্ষা আর রাজনীতির গলাগলির রসায়নে সেটা সম্ভব বলে মনে করছেন না অনেক শিক্ষাবিদ।

আর গুণী শিক্ষকদের দিক থেকে স্বতঃপ্রণোদিত সাড়া মেলা কতটা অসম্ভব, এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের বক্তব্যেই সেটা পরিষ্কার। তিনি বলেন, ‘‘এটা খুব লজ্জার বিষয়। নিজেকে বলতে হবে পুরস্কারের জন্য!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন