‘উত্ত্যক্ত’ তরুণীর ভোজালির কোপে হত যুবক 

মঙ্গলবার সকাল তখন সাড়ে ৯টা। বসিরহাটের খোলাপোতায় বাজার এলাকা ভিড়ে ঠাসা। সেখানেই ঘটে গেল এমন কাণ্ড। এত ক্ষণ যে জনতা ‘মজা দেখছিল’ ওই তরুণী এবং যুবককে ঘিরে, সেই ভিড়টাই নিমেষে আছড়ে পড়ে তরুণীর উপরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৯ ০১:৫৯
Share:

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস

তিন বছরের ছেলেকে কোনও রকমে কোলে আঁকড়ে ধরে যুবকের গালে সজোরে চড় মারছিলেন তরুণী। ‘‘আমার বাচ্চাটাকে একটু ধরুন তো’’— মুখের কথা শেষ হতে না হতেই পাশের এক মহিলার কোলে ধরিয়ে দেন ছেলেকে। তত ক্ষণে ভিড় জমে গিয়েছে আশেপাশে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই কোমর থেকে ভোজালি বার করে সামনের যুবকের গলায় চালিয়ে দেন তরুণী।

Advertisement

মঙ্গলবার সকাল তখন সাড়ে ৯টা। বসিরহাটের খোলাপোতায় বাজার এলাকা ভিড়ে ঠাসা। সেখানেই ঘটে গেল এমন কাণ্ড। এত ক্ষণ যে জনতা ‘মজা দেখছিল’ ওই তরুণী এবং যুবককে ঘিরে, সেই ভিড়টাই নিমেষে আছড়ে পড়ে তরুণীর উপরে। শুরু হয় মারধর। তাঁর সঙ্গী দু’জনকেও পেটায় জনতা। পরে পুলিশ এসে সকলকে উদ্ধার করে থানায় আনে। গ্রেফতার করা হয়েছে আজমিরা ওরফে মারুফা বিবি, তাঁর স্বামী আরিজুল দফাদার ও এক আত্মীয় আজহারউদ্দিন দফাদারকে। রক্তাক্ত আশিক গাজিকে (৩৪) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

কিন্তু কেন এমন ঘটালেন অভিযুক্ত তরুণী? তাঁদের বাড়ি ঝুরলি গ্রামে। স্বামী কর্মসূত্রে থাকেন কলকাতায়। পুলিশকে অভিযুক্ত জানিয়েছেন, কিছু দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় হয়েছিল মেছোভেড়ির কর্মী আশিকের সঙ্গে। বছর দু’য়েক আগে বাংলাদেশ থেকে এসে ওই এলাকাতেই থাকত আশিক।

Advertisement

তরুণীর দাবি, আলাপ-পরিচয়কে নিছক বন্ধুত্বের গণ্ডিতে ধরে রাখতে চায়নি ওই যুবক। কুপ্রস্তাব দিতে থাকে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি, পুলিশের কাছে এমনটাই দাবি করেছেন তরুণী। তাঁর শাশুড়িও বৌমার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ছেলে বেশির ভাগ সময় বাড়িতে থাকে না। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বৌমাকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করত আশিক। ক’দিন আগে বাড়িতে ঢুকে অসভ্যতাও করেছিল।’’

ক্রমশ তিতিবিরক্ত হয়ে উঠছিলেন ওই তরুণী। পুলিশ জানতে পেরেছে, এ দিন ফোন করে আশিককে ডেকেছিলেন তিনি। বছর তিনেকের ছেলেকে কোলে নিয়ে অটোয় উঠে রওনা দেন বাড়ি থেকে। কিছু একটা ‘অঘটন’ ঘটাতে পারেন স্ত্রী, বুঝতে পেরেছিলেন আরিজুলও। তিনি এক আত্মীয়কে নিয়ে পিছু নেন। খোলাপোতার রাস্তায় আশিকের বাইক থামতেই পিছনে এসে অটো থেকে নামেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তরুণী ওই যুবককে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। চিৎকারও করছিলেন। এক সময়ে বছর তিনেকের ছেলেকে পাশের এক মহিলার কোলে রেখে ভোজালি বার করে আশিকের গলায় চালিয়ে দেন।

থানায় এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তরুণী। বলেন, ‘‘এ ছাড়া আমার আর উপায় ছিল না। আমি সংসার ছেড়ে ওর সঙ্গে বেরিয়ে না গেলে স্বামী-সন্তানকে খুন করবে বলেছিল আশিক। হয় ওকে মরতে হত, না হয় আমাকে!’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement