কুণালের চিঠিতে রহস্য, সূত্রের আশায় ইডি

প্রবল বাধা দিয়েছিল পুলিশ। রীতিমতো ধস্তাধস্তি। তারই মধ্যে আদালতের সামনে তিনি চিৎকার করেছিলেন, “আমার অনেক কিছু বলার আছে। পুলিশ বলতে দিচ্ছে না!” তিনি, মানে সারদা-কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ। কী বলতে চান উনি? কেন-ই বা পুলিশ তা বলতে দিচ্ছে না সাসপেন্ডেড ওই তৃণমূল সাংসদকে? কুণালের পাঠানো সাম্প্রতিক চিঠিতে এ সবের কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও যেতে পারে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর অফিসারেরা।

Advertisement

শমীক ঘোষ ও সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৪ ০৩:৫০
Share:

প্রবল বাধা দিয়েছিল পুলিশ। রীতিমতো ধস্তাধস্তি। তারই মধ্যে আদালতের সামনে তিনি চিৎকার করেছিলেন, “আমার অনেক কিছু বলার আছে। পুলিশ বলতে দিচ্ছে না!”

Advertisement

তিনি, মানে সারদা-কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ। কী বলতে চান উনি? কেন-ই বা পুলিশ তা বলতে দিচ্ছে না সাসপেন্ডেড ওই তৃণমূল সাংসদকে?

কুণালের পাঠানো সাম্প্রতিক চিঠিতে এ সবের কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও যেতে পারে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর অফিসারেরা। সিবিআইয়ের পাশাপাশি নিজেদের মতো করে সারদা-তদন্তে নিয়োজিত ওই এজেন্সির অফিসে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন কুণাল, শুক্রবার সন্ধ্যায়। গোপনে, নিজের বিশ্বস্ত কোনও অনুচরের হাত দিয়ে। স্বাভাবিক ‘অফিসটাইম’ পেরিয়ে যাওয়ার পরে চিঠিটি ইডি-র অফিসের রিসেপশনে পৌঁছে দেওয়া হয়। ইডি-সূত্রের খবর, কুণাল ৯১ পাতা জুড়ে আগাগোড়া বাংলায় কার উদ্দেশে সেটি লিখেছেন, চিঠির কোথাও তার উল্লেখ নেই। কী রয়েছে তাতে?

Advertisement

তদন্তকারী অফিসারদের মুখে কুলুপ। ওঁদের বক্তব্য, ইডি-র অধিকাংশ বাঙালি অফিসার এই মুহূর্তে রোজ ভ্যালি-তদন্তে ব্যস্ত থাকায় এখনও চিঠি খুঁটিয়ে পড়া সম্ভব হয়নি। অন্য দিকে জেল-কর্তৃপক্ষ, এমনকী কুণালের কৌঁসুলিও অন্ধকারে। রবিবার কুণালের আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এমন চিঠির খবর আমার কাছে নেই।” কিন্তু জেলে বসে মক্কেল চিঠি পাঠালেন, অথচ আইনজীবী জানালেন না?

সৌম্যজিৎবাবু এ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাননি। কুণালের ঘনিষ্ঠ মহল-সূত্রের দাবি, তিনি এখন আর নিজের কৌঁসুলির উপরেও পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারছেন না। তাই ওঁকে না-জানিয়ে লুকিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।

ইডি-সূত্রে অবশ্য চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ইডি এখনও কুণালকে জেরা করেনি। তাদের বক্তব্য, এ জন্য আরও নথি ও তথ্য হাতে পাওয়া জরুরি। “ইডি-র তদন্ত এখন যে পর্যায়ে, সেখানে কুণাল খোলাখুলি আমাদের সঙ্গে কথা বললে কিংবা কোনও নথি দিলে সুবিধা হবে। সুবিধা হবে সদ্য তদন্তে নামা সিবিআইয়েরও।” এ দিন বলেন ইডি’র এক সূত্র। এমতাবস্থায় কুণালের চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে মুখ না-খুললেও সেটি বিশেষ কাজে আসতে পারে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেছেন। ওঁদের একাংশের ধারণা, কুণালের চিঠিতে এমন কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম থাকতে পারে, যাঁরা কখনও না কখনও সারদা সংস্থা থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে টাকা-পয়সা বা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, এবং যাঁদের কথা কুণাল বারবার প্রকাশ্যে বলতে চেয়েছেন। ইডি-র একটি মহলের এ-ও দাবি, বিধাননগর কমিশনারেট চায়নি কুণাল নামগুলি ফাঁস করুন। এ ব্যাপারে তাঁর উপরে চাপ সৃষ্টির অভিযোগও চিঠিতে থাকতে পারে।

এ দিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সারদা-তদন্তের ভার নিয়ে সিবিআই কুণালকে জেরার করার প্রাথমিক পরিকল্পনা করছে। সিবিআই-সূত্রের খবর, সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে বিশেষ তদন্ত দল (সিট) গড়েছিল, তার কয়েক জন সদস্যের সঙ্গে এক দফা আলোচনা করে কুণালকে জেরার একটা অভিমুখও বানিয়ে ফেলেছে সিবিআইয়ের সারদা-সিট। এ ক্ষেত্রে রাজ্যের সিট কুণালকে জেরা করে যে সব তথ্য পেয়েছিল, সিবিআই সেগুলোকেও হাতিয়ার করতে পারে। পাশাপাশি সিবিআই-সূত্রের দাবি, গ্রেফতার হওয়ার দু’দিন পরে সম্প্রচারিত কুণাল ঘোষের রেকর্ড করা বক্তব্য তাদের হাতে এসেছে। তাতে কয়েক জনের নাম উল্লেখ করে কুণাল দাবি করেছেন, ওঁঁরা সারদা থেকে লাভবান। তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদের কাছে সিবিআই জানতে চায়, কোন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তিনি ওই নামগুলি করেছেন।

একই সঙ্গে সারদা গোষ্ঠী সম্পর্কে অনেক গোপন তথ্য তার কাছে আছে বলে কুণালের যে দাবি, সিবিআই গোয়েন্দারা তা-ও ওঁর মুখ থেকে যাচাই করতে চান। সিবিআইয়ের একাংশের অনুমান, সারদা গোষ্ঠীর বাড়বাড়ন্তে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা সম্পর্কে কুণালের কাছে কিছু তথ্য মিললেও মিলতে পারে। স্থানীয় সূত্রে সিবিআই এ-ও জেনেছে, সল্টলেক আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় কুণাল একাধিক বার সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, তাঁর কিছু বলার রয়েছে, যা তাঁকে বলতে দেওয়া হোক। নতুন কী এমন তাঁর বলার রয়েছে, সিবিআই কুণালের মুখে তা জানতে আগ্রহী।

সিবিআই-সূত্রের খবর, রাজ্যের সিটের তদন্তে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল, রাজ্য সরকার গ্যারান্টার থাকবে এই আশ্বাস দিয়ে সারদার আমানতকারীদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা হতো। ২০১১-র মাঝামাঝি থেকে রাজ্যের বিভিন্ন মন্ত্রীর মুখে সারদার গুণগান শোনা যেতে থাকে। এমনকী এক মন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, ব্যবসা করতে সারদার যাতে কোনও অসুবিধে না হয়, তিনি তা দেখবেন। সিবিআইয়ের দৃঢ় অনুমান, এ সবের প্রেক্ষাপট কিছুটা হলেও কুণালের গোচরে রয়েছে।

তাদের সামনে কুণাল মুখ খুলবেন বলে আশায় রয়েছে সিবিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন