চৌরঙ্গিতে সিপিএমের আস্থা সংখ্যালঘু মুখেই

তৃণমূল এবং বিজেপি-র মোকাবিলায় শেষ পর্যন্ত চৌরঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সংখ্যালঘু মুখই বেছে নিল সিপিএম। ঐতিহ্যগত ভাবে চৌরঙ্গি এলাকা বাম-বিরোধী আসন বলেই পরিচিত। গত বিধানসভা নির্বাচনে ওই আসনে তৃণমূল বিপুল ব্যবধানে জিতেছিল। আর এ বছর লোকসভা ভোটে কলকাতায় বিজেপি ভাল ফল করেছে। এই দুই দলকে মোকাবিলা করতেই চৌরঙ্গিতে সিপিএম প্রার্থী করল কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ ফৈয়াজ আহমেদ খানকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৬
Share:

তৃণমূল এবং বিজেপি-র মোকাবিলায় শেষ পর্যন্ত চৌরঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সংখ্যালঘু মুখই বেছে নিল সিপিএম। ঐতিহ্যগত ভাবে চৌরঙ্গি এলাকা বাম-বিরোধী আসন বলেই পরিচিত। গত বিধানসভা নির্বাচনে ওই আসনে তৃণমূল বিপুল ব্যবধানে জিতেছিল। আর এ বছর লোকসভা ভোটে কলকাতায় বিজেপি ভাল ফল করেছে। এই দুই দলকে মোকাবিলা করতেই চৌরঙ্গিতে সিপিএম প্রার্থী করল কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ ফৈয়াজ আহমেদ খানকে।

Advertisement

আগামী বছরের পুরভোটের আগে এই উপনির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপি। যে কারণে দলের রাজ্য কমিটির বৈঠক শিলিগুড়ি থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে কলকাতায়। ওই বৈঠকের পরে চৌরঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যেই দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে দিয়ে সভা করাতে চাইছে বিজেপি। তৃণমূলের অঙ্ক, বিজেপি অমিতের মতো ব্যক্তিত্বকে আনলে চৌরঙ্গির মতো বহুভাষিক ও বহুধর্মীয় এলাকায় সংখ্যালঘু ভোট এককাট্টা করতে তাদের সুবিধা হবে। তৃণমূলের এই অঙ্ক বানচাল করতেই সংখ্যালঘু মুখকে প্রার্থী করছে আলিমুদ্দিন। গত বিধানসভা ভোটে বামেরা চৌরঙ্গি আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল আরজেডি-কে। এ বার লোকসভা ভোটে বামেরা সেখানে চতুর্থ হয়েছে। এই অবস্থায় তাঁর লড়াই কতটা কঠিন? সিপিএম প্রার্থী ফৈয়াজ বৃহস্পতিবার বলেন, “আমরা লড়ছি মানুষের ভরসায়। মানুষ পরিবর্তন দেখেছেন, এখন নরেন্দ্র মোদীর সুদিনও দেখছেন! তাঁরাই ঠিক করবেন কে ভোট পাওয়ার উপযুক্ত।”

লোকসভা ভোটের নিরিখে চৌরঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে দেড় হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী সোমেন মিত্র। তাঁর স্ত্রী তথা ওই কেন্দ্রের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক শিখা মিত্রকেই প্রার্থী করতে চেয়েছিল কংগ্রেসের একাংশ। কিন্তু তাতে ফল হয়নি। আবার প্রদেশ কংগ্রেসের কিছু নেতা চেয়েছিলেন, সংখ্যালঘু ভোটের কথা মাথায় রেখে খালিদ এবাদুল্লাকে প্রার্থী করা হোক। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর পছন্দের প্রার্থী কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠক। চৌরঙ্গির প্রার্থী বাছাইকে ঘিরে অধীরের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশের কিছু মন কষাকষিও দেখা দিয়েছে। বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে অসিত মজুমদারকে নিয়ে কারওরই অবশ্য দ্বিমত নেই। কিন্তু কোনও নামই এখনও ঘোষণা করা হয়নি।

Advertisement

এমতাবস্থায় বিজেপি পড়েছে দোলাচলে। তাদের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু ভোট টানার জন্য বিরোধীরা ঘুঁটি সাজাচ্ছে। রাজ্য বিজেপি-ও অমিতকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চৌরঙ্গিকে ‘মর্যাদার লড়াই’ করে তুলেছে। সর্বভারতীয় সভাপতি ঘুরে যাওয়ার পরে ওই আসনে হেরে গেলে পুরভোটের আগে দলের মনোবলে ধাক্কা লাগতে পারে। তাই চমক দেওয়ার জন্য রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব কখনও শিখাদেবী, কখনও রাজ্যের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের সঙ্গে কথা বলছেন। কেউই এখনও এমন প্রস্তাবে রাজি হননি। দলের নেতা তথাগত রায় এবং রীতেশ তিওয়ারি ছাড়াও এক ব্যবসায়ী, এক সংখ্যালঘু নেতা এবং এক আইনজীবীর নাম নিয়ে বিজেপি-র রাজ্য নির্বাচনী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও আটকে।

বসিরহাট দক্ষিণের প্রার্থী নিয়ে কোনও দলেই অবশ্য বিশেষ কোনও জট নেই। বামফ্রন্টের বৈঠকের পরে এ দিন চৌরঙ্গির জন্য ফৈয়াজের পাশাপাশি বসিরহাটে মৃণাল চক্রবর্তীর নাম ঘোষণা করেছেন ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। মৃণালবাবু সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। জেলা সম্পাদক গৌতম দেবের ঘনিষ্ঠ এই সিপিএম নেতা কৃষক ফ্রন্ট এবং সাংগঠনিক দায়িত্বের সুবাদে বসিরহাটে পরিচিত নাম। লোকসভা ভোটের নিরিখে ওই আসনে বিজেপি অবশ্য ৩০ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে। মৃণালবাবু অবশ্য এ দিন বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরেই ওটা আমাদের আসন। ২০১১ সালেও ৬৬ হাজার ভোট পেয়ে আমরা সেখানে জিতেছিলাম। লোকসভা ভোটে নানা কারণে, বিশেষ করে মোদী-হাওয়ায় বিজেপি বেশি ভোট পেয়েছিল।” তাঁর দাবি, সাধারণ বাজেট এবং রেল বাজেটে মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিজেপি-র প্রতি মানুষের আশাভঙ্গ হচ্ছে।

বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের ভোট ফেরানোর লক্ষ্যে প্রচারের কথা বলেছেন তিনি।

এখনও ঘোষণা না হলেও বসিরহাট দক্ষিণে বিজেপি-র প্রার্থী হতে পারেন রাজ্য নেতা শমীক ভট্টাচার্যই। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে তিনিই দলের প্রার্থী ছিলেন। তার পরেও নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছেন বসিরহাটের সঙ্গে। দিল্লিতে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির বৈঠকের পরে শেষ পর্যন্ত শনিবার দুই কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন