মালিক ধৃত, তবু ভিড় কম হয় না এমপিএস রিসর্টে

সংস্থার কর্ণধার এবং এক ডিরেক্টর গ্রেফতার হয়েছেন। সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিবিআই-ও। কিন্তু, ঝাড়গ্রামে এমপিএস-এর বিলাসবহুল রিসর্টটি রমরমিয়েই চলছে। কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, পুজোর মরসুমে রিসর্টের বুকিং অনেকটাই হয়ে গিয়েছে। রবিবার ঝাড়গ্রামের দিঘিশোলে গিয়ে দেখা গেল, রিসর্টের চারটি ঘরে লোক আছেন। তবে কেউ কথা বলতে রাজি হলেন না।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৩
Share:

ছবি: দেবরাজ ঘোষ

সংস্থার কর্ণধার এবং এক ডিরেক্টর গ্রেফতার হয়েছেন। সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিবিআই-ও। কিন্তু, ঝাড়গ্রামে এমপিএস-এর বিলাসবহুল রিসর্টটি রমরমিয়েই চলছে। কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, পুজোর মরসুমে রিসর্টের বুকিং অনেকটাই হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

রবিবার ঝাড়গ্রামের দিঘিশোলে গিয়ে দেখা গেল, রিসর্টের চারটি ঘরে লোক আছেন। তবে কেউ কথা বলতে রাজি হলেন না। জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) তপন নাথ জানালেন, ঝাড়গ্রামের রিসর্টে সাড়ে তিনশো জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। পুজোর মরসুমে বেশির ভাগ বুকিং শেষ। লোকও আসতে শুরু করেছে।

দু’দিন আগে ধরা পড়েছেন এমপিএস কর্ণধার প্রমথনাথ মান্না ও সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর । সারদা-তদন্তের মধ্যেই শনিবার সিবিআই এমপিএসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও ডিরেক্টরদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা করেছে। তার প্রভাব এখনও রিসর্ট ব্যবসায় পড়েনি। শ্রমিকদের মজুরি কমিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কৃষিখামারও। কিন্তু, প্রভাব পড়তে কত ক্ষণ! তাই ঝাঁপ বন্ধ না হলেও কর্মীরা সংশয়ে। সারদা-কেলেঙ্কারি সামনে আসার পরে রাজ্য জুড়ে ওই অর্থলগ্নি সংস্থার একাধিক হোটেল-রিসর্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর তাঁদের জানা। রিসর্টের এক আধিকারিক মানছেন, “মূলধন কমে যাওয়ায় ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার মধ্যে সংস্থার এমডি গ্রেফতার হওয়ায় এবং সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ায় কর্মী ও শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।”

Advertisement

সারদার ক্ষেত্রে যেমন শাসক তৃণমূলের একাধিক নেতার নাম জড়িয়েছে, তেমনই এমপিএস-কর্তা প্রমথনাথের সঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কোনও কোনও মহলে। এ প্রসঙ্গে আগের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বিমানবাবু বলেন, “প্রমথনাথ মান্নার মেয়ের বিয়েতে গিয়েছিলাম। ঝাড়গ্রাম-সহ কয়েকটি জায়গায় ওঁর রিসর্ট আছে। সেই সূত্রে ওঁকে চিনতাম। ওঁর আর কী ব্যবসা আছে, জানা ছিল না।” বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের আবার ব্যাখ্যা, “এমপিএস কর্তার খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ-সহ অন্যান্য ব্যবসার উদ্বোধনে নেতা-মন্ত্রীরা গিয়ে থাকতেই পারেন। কিন্তু জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডের পরে মাওবাদী দমনে এমপিএস রিসর্টে পুলিশি অভিযান হয়েছিল। দহরম-মহরম থাকলে কি তা হতো?” তবে এ-ও ঠিক, মাওবাদী-পর্বে এমপিএসের ব্যবসায় আঁচ পড়েনি। পুলিশ জানায়, মাওবাদীদের ‘লেভি’ দিয়ে তুষ্ট রেখেছিলেন কর্তৃপক্ষ।

ঝাড়গ্রাম শহর লাগোয়া বিনপুরের দহিজুড়ি পঞ্চায়েতের দিঘিশোল মৌজায় চারশো একর এলাকা জুড়ে নব্বইয়ের দশকে প্রথমে বহুমুখী কৃষিখামার গড়ে এমপিএস। পশুপালন, মাছচাষ, সব্জি ও ফলের বাগান, মিনারেল ওয়াটার তৈরির প্ল্যান্ট, কৃষি গবেষণাকেন্দ্র, খাদ্য প্রক্রিয়াকণের ব্যবস্থা আছে সেখানে। ২০০২-এ ওই কৃষিখামারের ভিতরেই ‘এমপিএস রিসোর্ট অ্যান্ড হোটেলস্ লিমিটেড’-এর কর্মকাণ্ড শুরু হয়। গড়ে ওঠে বিলাসবহুল ‘গ্রিনফোর্ট রিসোর্ট’। এলাকাটির নাম ‘এমপিএস এনক্লেভ’।

প্রচার করা হয়েছিল পর্যটকদের জন্যই এই এলাহি আয়োজন। যদিও প্রাক্তন কর্মীরা জানাচ্ছেন, এমপিএসের বিভিন্ন কারবারে লগ্নি টানতে মূলত বিনিয়োগকারীদের জন্য চোখ ধাঁধাঁনো রিসর্টটি তৈরি হয়। ক্রমে এই কর্মকাণ্ড ঝাড়গ্রামের দ্রষ্টব্য হয়ে ওঠে। এলাকাটির নামও হয়ে ওঠে এমপিএস। ‘ঝাড়গ্রাম হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মধুসূদন কর্মকারের কথায়, “উচ্চবিত্তদের কাছে রিসর্টটি যথেষ্ট জনপ্রিয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন