ইলিশ মাছ। —ফাইল চিত্র।
ইলিশ বাঁচাতে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। শুধু যুদ্ধজাহাজই নয়, ইলিশ চুরি রুখতে আকাশপথেও নজরদারির ব্যবস্থা করেছে তারা। বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী এবং উপকূল সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে নিজস্ব জলসীমার মধ্যে আকাশপথে নজরদারির জন্য মোতায়েন হয়েছে ড্রোন এবং হেলিকপ্টারও। প্রজননের মরসুমে ইলিশ ধরা আটকানোর জন্যই এই ‘যুদ্ধকালীন নিরাপত্তা’র বন্দোবস্ত করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জলসীমার মধ্যে বিদেশি মৎস্যজীবী ধরা পড়লে, তাঁদেরও পাকড়াও করা হবে।
পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যজীবীরা অতীতে বিভিন্ন সময়ে ভুল করে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে সে দেশে ধরা পড়েন। গত বছরই বাংলাদেশের জলসীমার ভিতর ঢুকে পড়ায় কাকদ্বীপের ছ’টি ট্রলারকে আটক করেছিল বাংলাদেশের উপকূলরক্ষী বাহিনী। ওই ট্রলারগুলিতে ছিলেন ৯৫ জন মৎস্যজীবী। তাঁদের গ্রেফতার করেছিলেন বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ। পরে চলতি বছরের শুরুতে বন্দিবিনিময়ের মাধ্যমে ভারতে ফেরত আসেন তাঁরা। ভারত থেকেও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয় সে দেশের ৯০ জন মৎস্যজীবীকে। এ বার বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, বিদেশি মৎস্যজীবীরা যদি এই সময়ে ধরা পড়েন, তাঁদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা হবে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলরেখা এবং নিজস্ব জলসীমায় আকাশপথে নজরদারির জন্য ড্রোনগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সে দেশের আধিকারিকেরা। একই রকম ভাবে নিজেদের জলসীমার বিভিন্ন এলাকায় মোট ১৭টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করছে বাংলাদেশি নৌসেনা। পাশাপাশি নজরদারির জন্য হেলিকপ্টারও মোতায়েন করেছে নৌসেনা। বাংলাদেশের মৎস্য মন্ত্রকের ইলিশ বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ফিরোজ় আহমেদ বলেন, “প্রজননের মরসুমে ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করার জন্য ড্রোনের মাধ্যমে নদী এবং সামুদ্রিক জলপথে আমরা নজরদারি চালাচ্ছি।”
প্রজননের মরসুমে বাংলাদেশে ৪ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। তিন সপ্তাহ ধরে চলা এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আগামী ২৫ অক্টোবর। বাংলাদেশের মৎস্য মন্ত্রকের এক মুখপাত্রের কথায়, “সরকারি নির্দেশ অনুসারে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে নিয়মিত অভিযান এবং টহলের পাশাপাশি ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি শুরু হয়েছে। ২৫ অক্টোবরের মধ্যরাত পর্যন্ত এই নজরদারি চলবে।”
বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ বিভাগ ‘আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ’ (আইএসপিআর)-এর তরফে আগেই জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশের জলসীমায় দেশি এবং বিদেশি মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে নৌ অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইএসপিআর এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, “(বাংলাদেশের জলসীমার মধ্যে) গভীর সমুদ্রে দেশি-বিদেশি মৎস্যজীবীদের প্রবেশ আটকানোর জন্য যুদ্ধজাহাজ এবং সমুদ্রে টহলের জন্য অত্যাধুনিক ‘এয়ারক্র্যাফ্ট’ (হেলিকপ্টার) সর্ব ক্ষণ নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে।”
মৎস্য মন্ত্রকের ইলিশ বিভাগের সহকারী ডিরেক্টর তথা উপপ্রধান মুহাম্মদ কামারুজ্জামান জানান, নিষেধাজ্ঞা থাকাকালীন এই নজরদারির সময়ে বরিশাল এবং চট্টগ্রাম জেলাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ ধরার অভিযোগে গত কয়েক দিনে বরিশাল এবং চট্টগ্রাম থেকে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরার জালও।