Iran-Israel Conflict

মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই ওবামা ২৬০০০ বোমা ফেলেছিলেন সাত দেশে! ট্রাম্প কেন ৩৬টি ফেলেই বিপাকে?

২০১৬ সালে ওবামার জমানায় পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া এবং ইয়েমেনে ২৬ হাজারের বেশি বোমা ফেলা হয়েছিল মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৫ ২০:৪৪
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই একতরফা ভাবে ইরানের তিন পরমাণুঘাঁটিতে হামলার নির্দেশ দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে দেশের আইন লঙ্ঘন করেছেন বলে সরব হয়েছে বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। একই অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির অন্দরেও!

Advertisement

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আমেরিকার আইনসভার নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টেটিভসে সাংবিধানিক বিধি লঙ্ঘনের একটি প্রস্তাবও আনা হয়েছে ইতিমধ্যে। যদিও পেন্টাগনের তথ্য বলছে, এক দশক আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন একই কাজ করেছিলেন ডেমোক্র্যাট নেতা বারাক ওবামা। শুধুমাত্র ২০১৬ সালে সন্ত্রাস দমনের যুক্তি দিয়ে সাতটি দেশ— পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া এবং ইয়েমেনে ২৬১৭১টি বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছিল কংগ্রেসের কোনও অনুমোদন ছাড়াই!

ওবামার হাতিয়ার এইউএমএফ বিধি

Advertisement

মার্কিন বিমান বাহিনী, ‘কাউন্সিল ফর ফরেন রিলেশনস্‌’, ‘লং ওয়ার জার্নাল’ এবং ‘নিউ আমেরিকা ফাউন্ডেশন’-এর বিভিন্ন তথ্য যাচাই করে সংবাদমাধ্যম ‘স্নুপ্‌স’ প্রকাশিত প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০০১ সালে অনুমোদিত সন্ত্রাসদমন সংক্রান্ত বিধি ‘অথরাইজ়েশন ফর ইউজ় অফ মিলিটারি ফোর্স’ (এইউএমএফ)-কে হাতিয়ার করেই এশিয়া এবং আফ্রিকার সাত দেশে মার্কিন যুদ্ধবিমান এবং ড্রোন হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন ওবামা। ফলে তাঁর পদক্ষেপকে ‘বেআইনি’ বলে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

কী ছিল সেই এইউএমএফ-এ? ৯/১১ সন্ত্রাসের পরে আল কায়দা-সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দ্রুত প্রত্যাঘাতের উদ্দেশ্যে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ওই বিধি অনুমোদন করিয়েছিলেন কংগ্রেসের দুই কক্ষে। ওই বিধি অনুযায়ী কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই ওসামা বিন লাদেনের আল কায়দা কিংবা তার সহযোগী তালিবানের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের। সাত দেশে ২৬ হাজার বোমাবর্ষণের ক্ষেত্রে ওই বিধিই ছিল ওবামার হাতিয়ার।

ট্রাম্প কেন ‘কাঠগড়ায়’?

শিয়া রাষ্ট্র ইরান বরাবরই আল কায়দা, আইএসের মতো সুন্নি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির বিরোধী। সেখানে গোষ্ঠীগুলির জঙ্গিদের সক্রিয়তার কোনও অভিযোগও নেই। তাই কংগ্রেসকে ‘অন্ধকারে রেখে’ গত রবিবার ইরানের ফোরডো, নাতান্‌জ, ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রে ৩৬টি বাঙ্কার ব্লাস্টার সিরিজ়ের জিবিইউ-৫৭ বোমা আর টোমাহক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পক্ষে যুৎসই যুক্তি দিতে পারেননি ট্রাম্প। যদিও ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এর পর ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতায় এইউএমএফ বিধির কথা বলেছিলেন।

ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সদস্য টমাস ম্যাসি ইরানে হামলার পরেই এক্স পোস্টে লিখেছিলেন, ‘‘এই হামলা আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী বৈধ নয়।’’ একই কথা বলেছেন ট্রাম্পের দলের আরও কয়েক জন সেনেটর এবং হাউস সদস্যও। তাঁদের যুক্তি, সাংবিধানিক বিধি অনুযায়ী আমেরিকা আক্রান্ত না হলে, কোনও দেশে হামলা চালাতে গেলে কংগ্রেসের অনুমোদন অপরিহার্য। আক্রান্ত হওয়ার আগে ইরান পশ্চিম এশিয়ার কোনও মার্কিন সেনঘাঁটি বা আমেরিকার ভূখণ্ডে হামলা চালায়নি।

আইন মানেননি ট্রুম্যান, রেগন, বুশও

ইরান-সঙ্কট নিয়ে রিপাবলিকান নেতা তথা হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের স্পিকার মাইক জনসন দাঁড়িয়েছেন ট্রাম্পের পাশে। তিনি বলেছেন, ‘‘অতীতেও আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের অনেকে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে এমন পদক্ষেপ করেছেন।’’ কিন্তু কংগ্রেসের অধিবেশনে সেই যুক্তি গৃহীত হবে কি?

ইতিহাস বলছে জনসনের যুক্তিতে কোনও ভুল নেই। ১৯৫০ সালে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই কোরিয়ার যুদ্ধে সেনা পাঠিয়েছিল ওয়াশিংটন। সে সময়ও আমেরিকার উপর কোনও আক্রমণ হয়নি। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের যুক্তি ছিল, রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে কোরিয়াকে রক্ষা করা জন্য তিনি সেনা পাঠিয়েছেন। আশির দশকে রোনাল্ড রেগন লিবিয়া, গ্রেনাডা এবং লেবাননে সামরিক বাহিনী পাঠিয়েছিলেন কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই। প্রেসিডেন্ট পদে তার উত্তরসূরি সিনিয়র জর্জ বুশ পানামার সেনাশাসক ম্যানুয়েল নোরিগাকে উৎখাত করতে কংগ্রেসকে কিছু না জানিয়েই একতরফা ভাবে সেনা অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement