(বাঁ দিকে) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ, (মাঝে) চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে একটি ত্রিদেশীয় জোট তৈরি করতে চাইছে পাকিস্তান এবং চিন। যদিও বাংলাদেশ এখনই ওই জোটে যোগ দিতে আগ্রহী নয়। তবে ঢাকাকে এই জোটে সক্রিয় করতে কূটনৈতিক স্তরে চাপ তৈরি করে যাচ্ছে বেজিং। আলোচনাও চালাচ্ছে ঢাকার সঙ্গে। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র এক প্রতিবেদনে বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্রের ভিত্তি এমনটাই জানানো হয়েছে।
গত জুন মাসে চিনের কুনমিঙে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দেয় চিন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চিনের উপবিদেশমন্ত্রী সান ওয়েডং, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী বিদেশ সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকি এবং পাকিস্তানের অতিরিক্ত বিদেশসচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি। ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন পাকিস্তানের বিদেশসচিব আমনা বালোচও। ত্রিদেশীয় জোট নিয়ে গুঞ্জনের সূত্রপাতও সেখান থেকেই। যদিও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনও জোট গঠনে থাকছে না। চিনের বৈঠকটিও একটি সরকারি বৈঠক, কোনও রাজনৈতিক বৈঠক নয়।
তবে ‘প্রথম আলো’ সূত্রে খবর, এর পরেও বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনায় বেশ কয়েক দফায় এ বিষয়ে চাপ তৈরির চেষ্টা করেছে চিন। গত ১১ জুলাই মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির জোট ‘আসিয়ান’-এর পার্শ্ববৈঠকে আলোচনা হয় বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র। সূত্রের দাবি, সেখানেও ত্রিদেশীয় জোটের প্রসঙ্গ তোলে বেজিং। চিনা বিদেশমন্ত্রী সেখানে বলেছেন, এই জোট অন্যদের জন্যও খোলা। অন্য দেশগুলিও এতে যোগ দিতে পারে। এই উদ্যোগে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা থাকা উচিত বলেও তৌহিদকে জানান তিনি। তবে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি তৌহিদ। তিনি শুধু হাসিমুখে কথা শুনেছেন।
এর পরে গত ২১ জুলাই বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন ঢাকায় নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম অনুসারে, ওই আলোচনাতেও ত্রিদেশীয় জোটের প্রসঙ্গ উঠেছে। আগামী সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে ওই ত্রিদেশীয় জোটের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক আয়োজন করতে চায় চিন। বেজিং চাইছে, বাংলাদেশও ওই বৈঠকে যোগ দিক। তবে এখনই ত্রিদেশীয় উদ্যোগের কোনও আলোচনায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছা নেই বাংলাদেশের।
দক্ষিণ এশিয়ার বহুদেশীয় গোষ্ঠী ‘সার্ক’ এখন প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে ‘সার্ক’-এর কোনও সম্মেলন হয়নি। এই বহুদেশীয় গোষ্ঠীতে মোট আটটি দেশ রয়েছে— ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা এবং মলদ্বীপ। ২০১৪ সালে এই গোষ্ঠীর শেষ সম্মেলন হয়েছিল। উরি জঙ্গি হানার প্রতিবাদে ২০১৬ সালে পাকিস্তানে আয়োজিত ‘সার্ক’ সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। এর পরে বাংলাদেশ, ভুটান এবং আফগানিস্তানও সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে ওই সম্মেলন ভেস্তে যায়। তার পর থেকে আর কোনও ‘সার্ক’ সম্মেলন হয়নি। বর্তমানে ‘সার্ক’ গোষ্ঠী দৃশ্যত নিষ্ক্রিয় অবস্থাতেই রয়েছে। এই অবস্থায় এশিয়ায় নতুন একটি জোট তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে চিন।