শোচনীয়: এই ছবি ঘিরেই বিতর্ক।
বসেছিলেন ভারতকে খোঁচা দিতে। ‘দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসের মা’, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রই সবচেয়ে বড় ভণ্ড’ ইত্যাদি বলেও যাচ্ছিলেন। বিপত্তিটা হল ‘ভারতের মুখ’-এর ছবি দেখাতে গিয়ে। তিন বছর আগে গাজা ভূখণ্ডে তোলা ফোটোগ্রাফকে ‘কাশ্মীরের ছবি’ বলে চালানোর অভিযোগ উঠল পাকিস্তানেরই বিরুদ্ধে!
রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের স্থায়ী দূত মালিহা লোদী তাঁর হাতে তুলে ধরেছিলেন একটি মেয়ের ছবি। রক্তের ছোপ সারা মুখে। পাকিস্তানের দাবি, কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর ছররা বন্দুকেই আহত হন ওই কিশোরী। লোদী বলেন, ‘‘এটিই ভারতের মুখ।’’ একটি পাক চ্যানেল এবং ডিজিটাল ফোরামও সঙ্গে সঙ্গে সেই ছবি ও খবর নিজেদের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেয়।
এর একটু পরেই অস্বস্তি!
এক ব্রিটিশ সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণের একটি পেজের লিঙ্ক তুলে ধরে কিছু ভারতীয় সংবাদ সংস্থা। দেখা যায়, গাজা ভূখণ্ডে মার্কিন চিত্রসাংবাদিক হাইদি লেভিনের তোলা বাছাই করা কিছু ছবি রয়েছে সেখানে। রয়েছে হুবহু সেই ছবিটি, যেটি মালিহা দেখাচ্ছিলেন। ছবির পাশে লেখা, ‘২২ জুলাই, ২০১৪। ছবিটি ১৭ বছরের রাওয়া আবু জোমা-র। তাঁদের বাড়ির ওপরে ইজরায়েল বোমা ফেলে। মারা যান তাঁর নিজের বোন ও তিন তুতো-ভাইবোন। রাওয়া এখন হাসপাতালে।’ খবর ছড়িয়ে পড়তেই কটাক্ষ ছুটে আসতে থাকে পাকিস্তানের দিকে।
আরও পড়ুন:ভারতই নাকি সন্ত্রাসবাদের আঁতুরঘর, রাষ্ট্রপুঞ্জে পাল্টা আক্রমণ পাকিস্তানের
কাল ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বক্তৃতায় যে ভাবে ছত্রে ছত্রে পাকিস্তানকে বিঁধেছিলেন, তার উত্তর দিতেই আজ মাঠে নেমেছিলেন লোদী। সুষমা আগাগোড়া অসত্য বলছেন বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘‘ভারতের আচরণ দানবের মতো। মোদী সরকার জাতিবিদ্বেষমূলক এবং ফ্যাসিস্ট নীতি নিয়ে চলছে।’’ এমনকী উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকেও টেনে আনেন তিনি।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বালুচিস্তানে নাক গলাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলে ভারতকে ‘সন্ত্রাসে মদতদাতা রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান লোদী। বলেন, ‘‘দানবের মতো আচরণ করছে
ভারত। পাকিস্তানের নানা প্রান্তে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে।’’ সুষমা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, কাশ্মীর সমস্যায় তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না। লোদী দাবি করেন, দু’পক্ষই সমাধান খুঁজতে ব্যর্থ হলে সেখানে নাক গলানোটা বিশ্বের অধিকার শুধু নয়, দায়বদ্ধতা।
এই যাবতীয় তোপে এক রকম জল ঢেলে দিয়েছে ছবি-বিতর্ক। অনেকেরই প্রশ্ন, কূটনীতিক হওয়ার আগে মালিহা তো সাংবাদিক ছিলেন। পাকিস্তানের সরকারি ওয়েবসাইট বলছে, সে দেশের একটি প্রথম সারির ইংরেজি দৈনিকের প্রাক্তন প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক তিনি! কাজেই, ছবি বা খবর প্রচারের আগে তার সত্যতা সম্পর্কে একশো ভাগ নিশ্চিত হওয়ার আবশ্যিক পাঠটা কি ভুলে গিয়েছেন মালিহা লোদী!