বদলের বার্তা দিয়ে ইরানে ফের রুহানি

ধর্মীয় কট্টরপন্থার জয় নয়। আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে আপসের পথে হেঁটে আর্থিক খরা কাটানোর আশ্বাস দিয়ে ইরানে ফিরলেন হাসান রুহানিই। গণনা শেষ না হলেও অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কট্টরপন্থী ইব্রাহিম রইসিকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছেন ৬৮ বছর বয়সি এই মধ্যপন্থী।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

তেহরান শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৭ ০৩:৩৩
Share:

ধর্মীয় কট্টরপন্থার জয় নয়। আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে আপসের পথে হেঁটে আর্থিক খরা কাটানোর আশ্বাস দিয়ে ইরানে ফিরলেন হাসান রুহানিই। গণনা শেষ না হলেও অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কট্টরপন্থী ইব্রাহিম রইসিকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছেন ৬৮ বছর বয়সি এই মধ্যপন্থী।

Advertisement

গত কাল যে ভাবে উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছিল গোটা ইরান, তাতে বাধ্য হয়েই ভোটদানের সময় কয়েক ঘণ্টা বাড়াতে হয়। ভোটদানের হার ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ‘‘তখনই জয়ের আভাস পেয়েছিলাম। আজ তা সত্যি হল। প্রেসিডেন্ট রুহানির প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন ইরানের মানুষ। অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বের সঙ্গে ইরানের যোগাযোগ বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন তাঁরা,’’ বলছেন রুহানি শিবিরের এক উপদেষ্টা।

রুহানির প্রতিদ্বন্দ্বী ৫৬ বছরের ইব্রাহিম রইসি আবার প্রথম থেকেই নিজেকে গরিবের প্রতিনিধি বলে প্রচার চালিয়ে এসেছিলেন। পশ্চিম বিরোধী কট্টরপন্থী মতই ছিল রক্ষণশীল এই নেতার প্রচার পর্বের তুরুপের তাস। পাশাপাশি ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা খামেনেইয়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তিনি। কূটনৈতিকরা বলছেন, এ হেন রইসির হার এটাই প্রমাণ করল ধর্মীয় ভাবাবেগের উপরে গিয়ে ইরানের মানুষ এখন যথেষ্ট পরিণত। তাঁরা বুঝেছেন, বছরের পর বছর আর্থিক নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত ইরানকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সুসম্পর্কের পথে হাঁটতে হবে। যে সুসম্পর্কের সেতুবন্ধনের বার্তাই দিয়েছেন রুহানি। প্রমাণও রয়েছে তার। দীর্ঘ টানাপড়েনের পর দু’বছর আগে এই রুহানির আমলেই পরমাণবিক কমর্সূচিতে লাগাম পরানোর জন্য আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি করেছিল ইরান।

Advertisement

রুহানিকে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুভেচ্ছা জানান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। পশ্চিম এশিয়া-সহ গোটা বিশ্বে রাজনৈতিক স্থিরতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য তেহরানের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করার বার্তা দিয়েছেন পুতিন।

১৯৪৮ সালের ১২ নভেম্বর সেমনান প্রদেশে জন্ম রুহানির। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট। পরিবর্তন ও সামাজিক স্বাধীনতার বার্তা নিয়েই প্রচার শুরু করেছিলেন তিনি। প্রতিপক্ষকে বারবার বিঁধেছেন ‘কট্টরপন্থী’ বলে। বলেছেন, ‘‘মোল্লাতন্ত্রের যুগ অতীত।’’ আজ দেশের মানুষও সুর মেলাল তাঁর সঙ্গেই। তবে ভোটে জিতলেও রুহানির সামনে এখনও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। গত জানুয়ারিতে পারমাণবিক চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইরানের তেলের বিক্রি কিছুটা বাড়লেও অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিশেষ হয়নি। ফলে সারা দেশে বেকারত্বের হার ১৩ শতাংশ। তাঁদের মধ্যে ৩০ শতাংশই যুবক-যুবতী। আলিরেজা নিকপোর নামে তেহরানের এক চিত্রগ্রাহকের কথায়, ‘‘আমরা এখনও খুশি নই। তবে রুহানির গত ৪ বছরের শাসনকালে দেশের যে উন্নতি হয়েছে তার ধারা বজায় রাখতেই ফের ভোট দিয়েছি তাঁকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন