শত্রু দেশের প্রতি ঘৃণাকে বাড়িয়ে তোলার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হত খাইবার পাখতুনখোয়ায় জইশ ই মহম্মদের সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, জনপদ থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে জাবা বলে একটি জায়গায় জঙ্গলে ঘেরা পাহড়ের মাথায় ছিল জঙ্গি শিবিরটি। যা গুঁড়িয়ে গিয়েছে ভারতীয় বিমান হানায়। এই ঘাঁটি সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
জম্মু-কাশ্মীরের পাহাড়ে তীব্র শীত উপেক্ষা করে লড়াই করা কিংবা চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিশানায় আঘাত করার কৌশল শেখানো হত এখানে। জঙ্গিদের চাঙ্গা রাখতে নিয়মিত শিবিরে আসত মাসুদ আজহার।
যাতে ঘৃণা উত্তরোত্তর বাড়ে, সে জন্য প্রশিক্ষণরত জইশ জঙ্গিদের রোজ হাঁটানো হত আমেরিকা, ব্রিটেন আর ইজরায়েলের জাতীয় পতাকার উপর দিয়ে। দেশগুলির প্রতি জঙ্গিদের ঘৃণা বাড়াতে জইশের প্রশিক্ষণ ঘাঁটির সিঁড়িগুলি রাঙানো হয়েছিল সে সব দেশের জাতীয় পতাকা দিয়ে। যে সিঁড়ি দিয়ে রোজ ওঠা-নামা করতে হত জঙ্গিদের।
ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, জইশের ওই ঘাঁটিতে আত্মঘাতী জঙ্গিদেরই প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। ওই ঘাঁটিতে ছিল ৩০০-র মতো জঙ্গি। মঙ্গলবার ভোর রাতে ভারতীয় বায়ুসেনা অভিযানে ওই ঘাঁটির কোনও জঙ্গিই বেঁচে নেই। ওই ঘাঁটিতে ছিল গোলাবারুদের বিশাল সম্ভার। সেখানে প্রচুর গ্রেনেড, ডেটোনেটর ও বিস্ফোরক ছাড়াও ছিল প্রচুর একে রাইফেল। ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযানে সেই সব কিছুই ধ্বংস হয়েছে।
জইশদের ডেরার মূল হলটি নকশা করা পতাকা দিয়ে সাজানো। ২০০০ সালে মৌলানা মাসুদ আজহারের তৈরি এই জঙ্গি সংগঠন। সদর দফতরটি পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরের মার্কাজ উসমান ও আলিতে অবস্থিত। ৬০০ জনের বেশি জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেয় সেখানে। মাসুদের নিজের বাড়ি, ভাই ও আত্মীয়দের বাড়িও রয়েছে আশপাশে।
বাহাওয়ালপুর-করাচি রোডে ২০১৫ সালে জইশদের আধুনিক জঙ্গি ঘাঁটি তৈরি হয়। একে বলা হয় মার্কাজ সুভানআল্লাহ। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, মালভূমির মতো পাহাড়ের চূড়ায় কয়েক একর জমিতে বানানো হয়েছিল প্রশিক্ষণ শিবির। প্রশিক্ষকদের অধিকাংশ প্রাক্তন সেনা অফিসার। অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহারে পারদর্শী করে তোলার পাশাপাশি শেখানো হত বিস্ফোরকের ব্যবহার।
বালাকোটের জঙ্গিঘাঁটিতে নিয়মিত চলত প্রশিক্ষণ। মানশেহরা জেলার আশপাশে জঙ্গল ও পাহাড়েও ছিল প্রশিক্ষণ শিবির। এই শিবিরে ছিল, আধুনিক সুইমিং পুল ও জিমনাশিয়ামও। বালাকোটের প্রশিক্ষণ শিবিরে জনা চল্লিশেক আত্মঘাতী জঙ্গি ছিল। জানা গিয়েছে, বিমানহানায় প্রাণ গিয়েছে তাদেরও। গোয়েন্দাদের দাবি, মঙ্গলবার ভোরে বায়ুসেনার অভিযানে মারা গিয়েছে অন্তত তিনশো জঙ্গি।
এই গাড়িটি করেই সাধারণত ঘাঁটিতে যাতায়াত করত মৌলানা ইউসুফ আজহার বা উস্তাদ ঘৌরি। জইশ-ই-মহম্মদের সব চেয়ে বড় ঘাঁটি বালাকোটে বায়ুসেনার অভিযানে কাল নিহত হয়েছে মাসুদ আজহারের শ্যালক ইউসুফ। ভারতে জেলবন্দি মাসুদের মুক্তির জন্য বিমান ছিনতাই করেছিল সে।
শুধু ইউসুফই নয়, অভিযানে নিহত হয়েছে মাসুদ আজহারের দাদা ইব্রাহিম আজহার ও ভাই তলহা সইদেরও। কন্দহর কাণ্ডের পিছনে বড় ভূমিকা ছিল এই ইব্রাহিমের। মাসুদ আজহারের ভাই মুফতি আবদুল রউফ আসগরও ছিল এই শিবিরের অন্যতম।
পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে ৮০ কিমি দূরে অবস্থিত এই ঘাঁটি মূলত মুফতি আসগর খান কাশ্মীরিই চালাত। মুজফফরাবাদের বাসিন্দা আসগরের প্রশিক্ষণ শিবিরে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের ইন্ধন রয়েছে, দাবি এমনটাই। প্রায় ২৫০ জঙ্গিকে এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
দু’দশকের উপর ভারতের মাথাব্যথার কারণ ছিল বালাকোটের জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরটি। নয়ের দশকে শিবিরটি তৈরি করেছিল হিজবুল মুজাহিদিন। কন্দহর কাণ্ডের পর মুক্তি পেয়ে মাসুদ আজহার শিবিরের দায়িত্ব নেয়। সূত্র বলছে, ২০০১ সালের সংসদ হামলা থেকে পঠানকোট-উরি তথা হালের পুলওয়ামা—জইশের অধিকাংশ হামলার ছক হয়েছিল বালাকোটের শিবিরে বসেই। এর দায়িত্বে মাসুদের অপর ভাই মুফতি আবদুল রউফ আসগরও ছিল।