পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের রহিম ইয়ার খান বায়ুসেনা ঘাঁটির উপগ্রহচিত্র। ছবি: সংগৃহীত।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘সিঁদুর’ অভিযানের সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি বিমানঘাঁটি। তার মধ্যে একটি হল পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের রহিম ইয়ার খান বায়ুসেনাঘাঁটি। সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী সম্প্রতি পাকিস্তানের অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক একটি বিজ্ঞপ্তি (নোটাম) প্রকাশ করে জানিয়েছে, এই রহিম ইয়ার খান বিমানঘাঁটি আরও কিছু দিন বন্ধ থাকবে। ৬ অগস্ট ভারতীয় সময় ভোর ৫টা ২৯ মিনিট পর্যন্ত এই বিমানঘাঁটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে। জল্পনা, ‘সিঁদুর’ অভিযানের সময়ে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, তা এখনও মেরামত করা যায়নি।
সূত্রের খবর, যে দিন ‘সিঁদুর’ অভিযান হয়েছিল, সে দিনই পাকিস্তানের অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে রহিম ইয়ার খান ঘাঁটি বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছিল। সে সময় জানানো হয়েছিল, এক সপ্তাহ সেখানে বিমান ওঠানামা বন্ধ থাকবে। এর পরে দফায় দফায় বেশ কয়েকটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে পাকিস্তানের মন্ত্রক ওই বিমানঘাঁটি বন্ধ রাখার মেয়াদ বাড়িয়েছে। এ বার ফের একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেই ঘাঁটি বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে পাকিস্তান সরকার। তারা জানিয়েছে, কাজের জন্য সেখানে বিমান ওঠানামা করবে না। তবে এর চেয়ে বেশি কিছু স্পষ্ট করে জানানো হয়নি।
পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের দক্ষিণে রয়েছে এই রহিম ইয়ার খান বিমানঘাঁটি। ভারতের রাজস্থান ফ্রন্টিয়ারের মুখোমুখি এর অবস্থান। এখানে পাকিস্তান সেনার যেমন ঘাঁটি রয়েছে, তেমন অসামরিক বিমান ওঠানামারও ব্যবস্থা রয়েছে। পাকিস্তান বায়ুসেনার সেন্ট্রাল এয়ার কমান্ডের ঘাঁটি এটি। এর একটি অংশ শেখ জ়ায়েদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেখানে অসামরিক যাত্রীবাহী বিমান ওঠানামা করে।
সিঁদুর অভিযানের পরে ভারতীয় সেনাবাহিনী কিছু উপগ্রহ চিত্র প্রকাশ করেছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, রহিম ইয়ার খান বায়ুসেনা ঘাঁটির মাঝামাঝি গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। উপগ্রহ চিত্রে ওই ঘাঁটির একটি বাড়িতেও ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন ধরা পড়েছিল। এ বার পাকিস্তানের অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক আবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, রানওয়েতে বন্ধ থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ‘ডব্লুআইপি’। আন্তর্জাতিক অসমারিক বিমান সংগঠন (আইসিএও)-এর অভিধানে এই ‘ডব্লুআইপি’-র অর্থ ‘ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেস’ (কাজ চলছে)। আমেরিকার ‘ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফএএ)-এর বিধি বলছে, বিমানবন্দরের পৃষ্ঠে কাজ হলে তবেই বলা হয় ‘ডব্লুআইপি’। পাকিস্তানের অসামরিক বিমান মন্ত্রকের দেওয়া বিজ্ঞপ্তি থেকে মনে করা হচ্ছে, রহিম ইয়ার খান বায়ুসেনা ঘাঁটির রানওয়েতেই কাজ চলছে। বিমানের গতিবিধির বিষয়ে তথ্যদানকারী অ্যাপ ফ্লাইটরাডার২৪ বলছে, পাকিস্তানের ওই বিমানঘাঁটিতে রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৩,০০০ মিটার।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৬ জন। ওই ঘটনায় পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠীর জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছিল। এর পরেই ৭ মে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করতে সিঁদুর অভিযান শুরু করে ভারত। পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালানোর চেষ্টা করলে তা ব্যর্থ করে ভারতীয় সেনা। অভিযানে পাকিস্তানের ছ’টি সামরিক ঘাঁটিতে হানা দেয় ভারত। তার মধ্যে রহিম ইয়ার খান ছাড়াও ছিল রফিকি, মুরিদকে, চাকলালা, সুক্কুর, জুনিয়া। ১০ মে সন্ধ্যায় ভারত এবং পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।