(বাঁ দিকে) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করল পাকিস্তান!
এক দিন আগেই ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ৩৫ মিনিট ধরে ফোনে কথা হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের। সেখানেই মোদী তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি কারও মধ্যস্থতায় হয়নি। পাকিস্তানের দিক থেকে এসেছিল বিরতির প্রস্তাব। তাতে ভারত সম্মত হয়েছে। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ট্রাম্প আরও এক বার দাবি করেন, ভারত এবং পাকিস্তান, দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত তিনি থামিয়েছেন। তিনিই মধ্যস্থতা করেছেন। পাকিস্তানও ট্রাম্পের দাবিকে সমর্থন করে এসেছে প্রথম থেকেই। এ বার ইসলামাবাদ চায়, সেই ‘উদ্যোগের’ জন্য ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কার পান! শনিবার পাকিস্তান সরকারের তরফে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করা হয়েছে। পাক সংবাদমাধ্যম ডন সেই তথ্য জানিয়েছে এবং সরকারি বিবৃতি উদ্ধৃত করেছে।
সমাজমাধ্যমে প্রকাশিত পাকিস্তানের সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক অস্থিরতার মধ্যেই অসাধারণ কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন ট্রাম্প। কৌশলে তিনি ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সমঝোতা করিয়েছেন। পরিস্থিতির খুব দ্রুত অবনতি হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করেছেন। এর ফলে বৃহত্তর সংঘাত এড়ানো গিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের বিপর্যয় আটকানো গিয়েছে।’’ এর জন্যেই ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার ট্রাম্পের পাওয়া উচিত বলে মনে করেছে ইসলামাবাদ। তাদের বক্তব্য, ‘‘ভারত এবং পাকিস্তানের সংঘর্ষে এই হস্তক্ষেপ প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে ট্রাম্পের ভূমিকার প্রমাণ দেয়। তিনি আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত নিরসনের উপরেই জোর দিয়ে এসেছেন।’’ এ ছাড়া, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী বিবাদ মেটাতে যে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ট্রাম্প, পাক সরকারের বিবৃতিতে তার উল্লেখও করা হয়েছে। পশ্চিম এশিয়ায় এই মুহূর্তে ইজ়রায়েল এবং ইরানের মধ্যে যে সংঘাত চলছে, সেখানেও শান্তি ফেরাতে ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন বলে আশাবাদী ইসলামাবাদ।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। গত ৬ মে মধ্যরাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে পাকিস্তানে হামলা চালানো হয়। সেখানকার একাধিক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারত। পাকিস্তানও এর পর প্রত্যাঘাত শুরু করে। দুই দেশের মধ্যে টানা চার দিন সংঘাত চলেছে। এর পর ১০ মে ভারত এবং পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন (ডিজিএমও) হটলাইনে আলোচনা করে এবং সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। ভারত এবং পাকিস্তানের এই সংঘর্ষবিরতির কথা সমাজমাধ্যমে প্রথম প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। জানিয়েছিলেন, দীর্ঘ আলোচনার পর দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয়েছে। এর পর একাধিক বার ট্রাম্প দাবি করেছেন, আমেরিকার হস্তক্ষেপেই এটা সম্ভব হয়েছে। প্রথম থেকেই ভারত এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে এসেছে। কিন্তু ট্রাম্পের সেই ‘হস্তক্ষেপের’ জন্যই এ বার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম সুপারিশ করতে চলেছে পাক সরকার।