মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা হল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী দুই রাষ্ট্রনেতার ফোনালাপের বিষয়টি জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মোদী এবং ট্রাম্পের মধ্যে ফোনে ৩৫ মিনিট কথা হয়।’’ তিনি আরও জানান, ট্রাম্পকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছেন মোদী। শুধু তা-ই নয়, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি কারও মধ্যস্থতায় হয়নি বলেই ট্রাম্পকে জানিয়েছেন মোদী। ওঠেনি বাণিজ্যের প্রসঙ্গও। ঘটনাচক্রে, বুধবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করার কথা পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের! তার আগেই ট্রাম্প ও মোদীর মধ্যে কথা হল। আলোচনা হল ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষ, সংঘর্ষবিরতি এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়ে।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর এই প্রথম মোদী এবং ট্রাম্পের মধ্যে সরাসরি কথা হল। সেই কথা উল্লেখ করে বিক্রম মিস্রী জানান, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় সংকল্পের কথা আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে বলেছেন মোদী। তিনি ট্রাম্পকে এ-ও জানিয়েছেন, পাকিস্তানের ‘গুলির’ জবাব ভারত ‘গোলার’ মাধ্যমে দেবে। একই সঙ্গে গত ৯ মে মোদী এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের ফোনে কথা হওয়ার বিষয়টিও ট্রাম্পকে জানানো হয়েছে।
মিস্রী জানান, ভারতের উপর পাকিস্তান বড় হামলা চালাতে পারে, এমন কথা ভান্স মোদীকে জানিয়েছিলেন। তাঁর উত্তরে মোদী ভান্সকে জানান, যদি এমন কোনও ঘটনা ঘটে তবে ভারত আরও বড় পাল্টা জবাব দেবে। মোদী-ট্রাম্পের ফোনালাপে সেই বিষয়টিও উঠে এসেছে। ট্রাম্পকে মোদী বলেন, ‘‘ভারত পাকিস্তানের হামলার যথাযথ জবাব দিয়েছে। ওদের সেনাছাউনি ধ্বংস করেছে। ভারতের পাল্টা হামলার পরেই পাকিস্তানের তরফে সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাব আসে।’’
মোদী ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ এবং পরে সংঘর্ষবিরতি— এই পুরো ঘটনাক্রমে কখনও, কোনও পরিস্থিতিতেই ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি কিংবা আমেরিকার মধ্যস্থতার বিষয়ে আলোচনা হয়নি। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির বিষয়ে সরাসরি দুই দেশের সেনা স্তরে কথা হয়েছে। মোদী জোর দিয়ে জানিয়েছেন, ভারত কখনও মধ্যস্থতার বিষয়টি আগেও মানেনি, এখন মানে না, ভবিষ্যতেও মানবে না। শুধু তা-ই নয়, এই বিষয়ে ভারতে পূর্ণমাত্রায় রাজনৈতিক সমন্বয় রয়েছে বলেও ট্রাম্পকে জানান মোদী।
মিস্রী জানিয়েছেন, মোদীর কথা ভাল ভাবে বুঝেছেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইকে সমর্থন জানিয়েছেন। ট্রাম্পকে মোদী এ-ও জানিয়েছেন, ভারত সন্ত্রাসবাদকে ‘যুদ্ধ’ হিসাবেই বিবেচনা করে। পাশাপাশি জানান, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ এখনও জারি রয়েছে।
দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে ফোনে কথোপকথনের সময় ট্রাম্প আমেরিকায় যাওয়ার জন্য মোদীকে আমন্ত্রণও জানান। কানাডা থেকে ভারতে ফেরার পথে মোদী কি আমেরিকা ঘুরে যেতে পারবেন, জানতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। পূর্বনির্ধারিত সফর থাকার কারণে তা এখনই সম্ভব হচ্ছে না বলেই ট্রাম্পকে জানিয়েছেন মোদী। তবে একই সঙ্গে খুব শীঘ্রই সাক্ষাতের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন তিনি। এ ছাড়াও, ভারতে অনুষ্ঠিত হতে চলা কোয়াড সম্মেলনে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানান মোদী। তাঁর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, এমনই জানালেন মিস্রী।
আরও পড়ুন:
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জবাবে পাকিস্তানে প্রত্যাঘাত করে ভারত। সামরিক অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। জবাবে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বেশ কিছু অংশে প্রত্যাঘাত করা হয়। ভারতীয় সেনার দাবি, পাকিস্তানের ন’টি জায়গায় হামলা চালানো হয়েছিল। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় জঙ্গিঘাঁটি। তার পরে চার দিন দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বহাল থাকার পর সংঘর্ষবিরতি হয়। ট্রাম্প বার বার দাবি করেছেন যে, তিনিই ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিরোধের মীমাংসা করেছেন। এ-ও জানিয়েছেন, তাঁরই মধ্যস্থতায় ‘বাণিজ্যের মাধ্যমে’ ভারত-পাক বিরোধের অবসান ঘটেছে। যদিও মোদী সরকারের একাধিক সূত্র মারফত দাবি করা হচ্ছিল, দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির ক্ষেত্রে তৃতীয় কোনও পক্ষের হাত নেই। তবে এত দিন প্রকাশ্যে ভারতের তরফে কেউ এই বিষয়ে মুখ খোলেননি। বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মোদী।