কেবল কুকুর পুষলেই হবে না, তাদের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব প্রভু পালন করছেন কি না এ বার এটাও খেয়াল রাখতে চালু হল সোশ্যাল ক্রেডিট পয়েন্ট। পোষ্যের প্রতি খারাপ ব্যবহার করলেই তা যোগ করবে ক্রেডিট পয়েন্ট। আবার অবাধ্য কুকুরকে সামলে রাখার জন্য কেউ সহযোগিতা করলে তাঁর জন্য থাকবে মেরিট পয়েন্টও।
চিনের স্যাংডন প্রদেশের জিনান শহরে এমন নিয়ম চালু করল স্থানীয় প্রশাসন। নিয়ম ভেঙে ক্রেডিট পয়েন্ট ১২ পেরোলেই সেই গৃহস্থ পোষ্য রাখার ‘অনুপযুক্ত’ হিসাবে চিহ্নিত হবেন ও তাঁর পোষা কুকুরটি কেড়ে নেওয়া হবে।
কুকুর ফেরত পেতে তাঁকে বসতে হবে মাল্টিপল চয়েজ প্রশ্নের পরীক্ষায়। এতে পাশ করলে তবেই তিনি ফিরে পাবেন কুকুর। নইলে সে সব কুকুরের দায়িত্ব নেবে সরকার। প্রথম বার কেউ নিয়ম ভাঙলে যদি তিন পয়েন্ট কাটা যায়, পরের বার একই ভুলের জন্য কাটা হবে ৬ পয়ন্ট। এ ভাবে মোট ১২ পেরোলেই সেই মালিক চিহ্নিত হবেন ‘খারাপ’ মালিক হিসাবে।
শুধু তাই-ই নয়, সঙ্গে থাকবে অপরাধ অনুযায়ী জরিমানাও। নানা অপরাধের জন্য ভিন্ন ভিন্ন জরিমানা নির্দিষ্ট। ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য ২২৫০ টাকা থেকে ৫২৫০ টাকা পর্যন্ত। নতুন নিয়মে এক জন মালিক একটিই কুকুর পুষতে পারবেন। কুকুরকে মারধর করলেও দিতে হবে জরিমানা।
কিন্তু কে কেমন ব্যবহার করছেন কুকুরের প্রতি সেটা জানা যাবে কী ভাবে? আপাতত রাস্তার সিসিটিভি ও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা ঘটনার উপর উপর নির্ভর করে এই পয়েন্ট দেবে স্থানীয় প্রশাসনের কমিটি। ২০২০ সালের মধ্যে এই নিয়ম আরও বিস্তৃত উপায়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দেবেন তাঁরা। কী কী ব্যবহার মেনে চলতেই হবে দেখে নিন।
কুকুর পুষতে গেলে থাকতেই হবে সরকারি লাইসেন্স। লাইসেন্সবিহীন কেউ কুকুর পুষছেন, সে খবর কানে এলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন প্রশাসন। রাস্তায় বেরোলে কুকুরকে শিকল পরিয়ে বার করতে হবে। তবে শিকলের দৈর্ঘ্য দেড় মিটার বা পাঁচ ফুটের বেশি হলে চলবে না। ১৮ বছরের নীচে কারও হাতে কুকুরের দায়িত্ব দেওয়াও চলবে না।
ঠিক সময়ে কুকুরের বর্জ্য পরিষ্কার করা ও পরিবেশকে সুস্থ রাখার দায়িত্বও কুকুরের মালিকের। রাস্তায় বেরিয়ে সে সব কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন কি না কেউ, তা-ও কড়া নজরে রাখা হবে।
সরকারি ভবন, হাসপাতাল, গণপরিবহণ, বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, পার্ক, জিম, হোটেল, শপিং মল ও বাজার এলাকায় কুকুর নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ঝর্না ও ব্যবহার উপযোগী জলাশয়ের ধারেও কুকুরকে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
কুকুরদের প্রতি অবহেলা, মালিক হয়েও পোষ্যর প্রতি উদাসীন মনোভাব ও অযত্ন রুখতেই এই পদক্ষেপ জিয়ানের স্থানীয় প্রশাসনের। এর আগেও অনলাইন দুনিয়ায় প্রোফাইলের বিশ্বাসযোগ্যতা ও শপিং কালচারের উন্নতি ঘটাতে চিনে এমন ক্রেডিট পয়েন্ট সিস্টেম চালু করেছিল বেসরকারি প্রযুক্তি সংস্থা।
ইতিমধ্যেই জিনানে এর প্রভাবে কুকুর সংক্রান্ত সমস্যা ৬৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। রাস্তাঘাটে শিকলবিহীন অবস্থায় কুকুর নিয়ে বেরিয়ে বিশৃঙ্খলার পরিমাণ ঘটনা কমেছে ৪৩ শতাংশ। ১২২ জন কুকুরের মালিক হারিয়েছেন তাঁদের লাইসেন্সও। বিশেষ একটি অ্যাপ ব্যবহার করে স্থানীয় পুলিশ কুকুরের প্রতি অবহেলাকারী ১৪২০ জনকে জরিমানা করেছে।