আবার হামলা শুরু সিরিয়ায়

তুরস্ক অভিযান শুরু করার পর থেকেই ঘরে-বাইরে চাপ বাড়ছিল আমেরিকার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য গোড়া থেকেই কুর্দদের অভয় দিচ্ছিলেন। আর ‘ভাতে মারার’ হুমকি দিচ্ছিলেন আঙ্কারাকে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বেরুট শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ ০৫:২২
Share:

—ফাইল চিত্র

সংঘর্ষবিরতি চুক্তি হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সিরিয়ায় ফের হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তুরস্কের বিরুদ্ধে। আজ সকালেও সিরিয়ার সীমান্ত শহর রাস আল-অইনে ধারাবাহিক ভাবে বোমা-গুলির শব্দ শোনা গিয়েছে বলে দাবি স্থানীয় একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের। সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সের (এসডিএফ) মুখপাত্র মুস্তাফা বালি বলেন, ‘‘চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও কুর্দ ঘাঁটি, বসতবাড়ি এমনকি হাসপাতালেও আজ লাগাতার বিমান হামলা চালিয়েছে তুরস্ক।’’ এসডিএফের দাবি, শুধু আজই তাদের ৫ যোদ্ধার প্রাণ গিয়েছে। সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওড়ালেও, খোদ তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ানই আজ বলেছেন, কুর্দরা এলাকা খালি না-করলে, মঙ্গলবার থেকে ফের শুরু হবে অভিযান।

Advertisement

তুরস্ক অভিযান শুরু করার পর থেকেই ঘরে-বাইরে চাপ বাড়ছিল আমেরিকার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য গোড়া থেকেই কুর্দদের অভয় দিচ্ছিলেন। আর ‘ভাতে মারার’ হুমকি দিচ্ছিলেন আঙ্কারাকে। গত সোমবার তুরস্কের উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপায় ওয়াশিংটন।

কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। ৯ অক্টোবর রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ানকে তিনি যে শান্তির আর্জি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন, তুর্কি প্রেসিডেন্ট তাতেও পাত্তা দেননি বলে সূত্রের খবর। তার পর এ নিয়ে কংগ্রেসে হাঙ্গামা শুরু হওয়ায় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে এগিয়ে দেন ট্রাম্প। গত কাল পেন্সই ঘোষণা করেন, তুরস্ক রাজি হয়েছে সংঘর্ষবিরতিতে। আজ আবার ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, ‘‘চুক্তি যখন হয়েই গিয়েছে, তখন আর নিষেধাজ্ঞার অর্থ হয় না। সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হওয়ার জন্য কুর্দদেরও অভিনন্দন জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

Advertisement

কিন্তু কই আর বিরতি! সিরিয়া থেকে আজও যে ভাবে বিস্ফোরণের খবর মিলেছে, সে জন্য আজ ট্রাম্প প্রশাসনকেই একহাত নিলেন রিপাবলিকান নেতা তথা প্রাক্তন মার্কিন কংগ্রেস সদস্য ডেভিড জলি। টুইটারে লিখলেন, ‘‘পেন্স লোকটা ট্রাম্পের মতোই ধাপ্পাবাজ। সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা সব ভাঁওতা।’’ তাঁর যুক্তি, চুক্তি সইয়ের পরে তুর্কি বিদেশ মন্ত্রকই জানিয়েছিল, ‘‘এটা সংঘর্ষবিরতি নয়। জঙ্গিরা (কুর্দ বাহিনী) যাতে এলাকা ছেড়ে পালাতে পারে, সে জন্য ১২০ ঘণ্টা অভিযান সাময়িক স্থগিত রাখতে রাজি হয়েছি আমরা।’’

তুরস্ক কাল রাত থেকেই যে ভাবে জোরকদমে হামলা শুরু করেছে, তার কথা বলতে গিয়ে টুইটারে তোপ দাগলেন এসডিএফের মুস্তাফা। তাঁর কথায়, ‘‘সংঘর্ষবিরতি নিয়ে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু রাস আল-অইনের হাসপাতালে আজকের ছবি দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবেন। হাসপাতালে কুর্দদের যে তিনটি অ্যাম্বুল্যান্স রাখা ছিল, সেগুলোকে নিশানা করেও আজ গুলি চালিয়েছে তুর্কি বাহিনী। গোটা শহরটাই ঘিরে রেখেছে ওরা। মুহূর্তের জন্যও যুদ্ধ থামায়নি ওরা।’’ ট্রাম্প যদিও তুরস্কের সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ কার্যত উড়িয়ে দিয়েই টুইট করেন, ‘‘আজই এর্ডোয়ানের সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি ছোটখাটো মর্টার হামলার কথা স্বীকার করেই জানিয়েছেন, আঙ্কারা সংঘর্ষবিরতির পক্ষেই।’’

সিরিয়ায় অভিযান শুরুর সময় থেকেই সীমান্তে ৩২ কিলোমিটারের ‘সেফ জ়োন’ তৈরি করার কথা বলে আসছেন এর্ডোয়ান। তাঁর দাবি, ওখানে এত দিন ধরে তুরস্কে থাকা সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া হবে। যদিও কূটনীতিকদের দাবি, তুর্কি প্রেসিডেন্ট আদতে গোটা সিরিয়াকেই কুর্দ-শূন্য করতে চান। কিন্তু ভিটে হারিয়ে কুর্দরা পাহারা থেকে সরে গেলে আইএস ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। কে সামলাবে তাদের? কার্যত এর জবাবেই এর্ডোয়ান আজ বলেন, ‘‘কুর্দরা পালালে, রুশ সমর্থিত সিরীয় বাহিনী যদি সেই এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়, আঙ্কারার কোনও আপত্তি নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন