রাশিয়ার কোন কোন জায়গায় হামলা? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
রুশ ভূখণ্ডের একেবারে দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের এলাকা ইরকুটস্ক ও আমুর। ইউক্রেন থেকে দূরত্ব ৫০০০ কিলোমিটারেরও বেশি! রবিবার রাশিয়ার সে সব অঞ্চলেও সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। সেগুলির মধ্যে কোনওটি সাইবেরিয়ার দুর্গম অঞ্চলে, কোনওটি আবার সুদূর চিনের কাছাকাছি! তাই অপারেশন ‘মাকড়সার জাল’-এর এই সাফল্যকে বেশ বড়সড় বলেই মনে করছে ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সরকার। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চোখে ধুলো দিয়ে কোন পথে রুশ ভূখণ্ডের এত গভীরে ঢুকে নিখুঁত হামলা চালাল ইউক্রেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।
রবিবার দুপুরে রুশ ভূখণ্ডের কয়েক হাজার কিলোমিটার অভ্যন্তরে ঢুকে একের পর এক বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ‘নিখুঁত’ ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। মূলত চারটি বিমানঘাঁটির ৪০টিরও বেশি সামরিক বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ১৩টি বিমান। রবিবার গভীর রাতেই অপারেশন ‘স্পাইডার ওয়েব’-এর রণকৌশল ফাঁস করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি স্বয়ং। জানিয়েছেন, রাশিয়ার অভ্যন্তরে তিনটি ভিন্ন সময়-অঞ্চলে (টাইম জ়োন) কাজ করছিল ইউক্রেনের সেনা। এ জন্য আগে থেকেই গোপনে ট্রাকে চাপিয়ে ৫০০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ১১৭টি ড্রোন। তার পর মোক্ষম সময় বুঝে আঘাত হানে রিমোট নিয়ন্ত্রিত কোয়াড্রোকপ্টার ড্রোনগুলি।
রবিবারের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের মূলত চারটি বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে সুমেরু বৃত্তের কাছে অবস্থিত মুরমানস্কের ওলেনিয়া বিমানঘাঁটি, ইউক্রেন থেকে যার দূরত্ব প্রায় ২০০০ কিলোমিটার। এ ছাড়া, তালিকায় রয়েছে দক্ষিণে মঙ্গোলিয়া সীমান্তের কাছে অবস্থিত ইরকুটস্কের বেলায়া বিমানঘাঁটি। রয়েছে মস্কোর অদূরে অবস্থিত ইভানোভো এবং রিয়াজ়ানের দিয়াগিলেভো বিমানঘাঁটি, ইউক্রেন থেকে দূরত্ব যথাক্রমে ৮০০ ও ৫২০ কিলোমিটার। এই চারটি বিমানঘাঁটি ছাড়াও রাশিয়ার একেবারে পূর্ব প্রান্তে সাইবেরিয়ায়র আমুর অঞ্চলেও হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এগুলির মধ্যে ইরকুটস্কে হামলাটির কথা আলাদা করে উল্লেখ করতেই হয়। কারণ, ইউক্রেন থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫০০০ কিলোমিটার, যা প্রচলিত ইউক্রেনীয় ড্রোন কিংবা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরিসরের বাইরে। এর থেকেই ইঙ্গিত মেলে যে বিমানঘাঁটির কাছাকাছি আগে থেকেই অবস্থান করছিল ড্রোনগুলি।
জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, এক বছর ছ’মাস আগে এই হামলায় অনুমোদন দিয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকে দেড় বছর ধরে চলেছে প্রস্তুতি। প্রেসিডেন্ট ছাড়াও অভিযানটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ-এর প্রধান ভ্যাসিল মালিউক। সংবাদমাধ্যম ‘পপুলার ফ্রন্ট’-এর দাবি, আগে থেকেই ট্রাকে করে রাশিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিস্ফোরকবোঝাই ড্রোনগুলি। ড্রোনগুলিকে রাখা হয়েছিল সারি সারি কাঠের বাক্সে। প্রতিটি বাক্সে কাঠের ঢাকনার বদলে ছিল ধাতব প্লেট। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চোখে ধুলো দিয়ে পরিকল্পনামাফিক ট্রাকগুলিকে রাশিয়ার চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটির কাছাকাছি নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর পর সময়মতো রিমোটের সাহায্যে দূর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ধাতব প্লেটের আবরণ। কাজ শুরু করে দেয় ড্রোনগুলি। ক্ষতিগ্রস্ত বিমানের সংখ্যা মস্কো এখনও নিশ্চিত না করলেও মনে করা হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এটিই ইউক্রেনের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ড্রোন অভিযান।