আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স।
মালয়শিয়া সফরে গিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি থেকে আমেরিকার জন্য বেশ কিছু বাণিজ্যিক সুবিধা পেয়ে গিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মালয়েশিয়া এবং কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরেছেন তিনি। বাণিজ্যচুক্তির রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করেছেন তাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের সঙ্গেও। চার দেশ থেকেই বাণিজ্যিক ভাবে ফায়দা পাবে আমেরিকা। তবে ওই চার দেশের কতটা সুবিধা হবে, তা এখনও অস্পষ্ট।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চার দেশের সঙ্গে ট্রাম্পের বাণিজ্য আলোচনাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে ব্যাখ্যা করছে হোয়াইট হাউস। এই দেশগুলিতে মার্কিন পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে এত দিন শুল্ক সংক্রান্ত এবং অন্য যে বাধাগুলি ছিল, তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন ট্রাম্প। ওই দেশগুলির বাজারে মার্কিন পণ্যের জন্য কোটি কোটি ডলার ব্যয় করার প্রতিশ্রুতিও আদায় করে নিয়েছেন তিনি। তবে বাণিজ্যচুক্তিগুলি থেকে আমেরিকার মতো সমানে সমানে সুবিধা পাবে কি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি? তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে মালয়শিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের চুক্তির পরে প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
উল্টো দিকে থাকা দেশগুলি নিজেদের খুব একটা সুবিধাজনক জায়গায় দাঁড় করাতে পারেননি বলেই প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে। ট্রাম্প এই দেশগুলির উপর ১৯-২০ শতাংশ হারে শুল্ক চাপিয়ে রেখেছেন। এই শুল্ককোপ কমানোর বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে দর কষাকষিতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। মালয়শিয়া এবং কম্বোডিয়া কিছু পণ্য আমেরিকায় রফতানি জন্য শুল্কে ছা়ড় পেলেও, তা নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রের জন্যই সীমিত বলে মনে করা হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ’-এর অর্থনৈতিক বিশ্লেষক তামারা হেন্ডারসন এবং অ্যাডাম ফেরারের মতে, এই চুক্তিগুলি ‘একতরফা’। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওই দেশগুলিকে কোন কোন ক্ষেত্রে জমি ছাড়তে হচ্ছে, তা খুবই স্পষ্ট। কিন্তু কোন ক্ষেত্রে তারা সুবিধা পাচ্ছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে যাচ্ছে। ‘ব্লুমবার্গ’-এর ওই প্রতিবেদন অনুসারে, চুক্তিগুলিতে আপাত ভাবে মনে হচ্ছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক এবং নিয়ন্ত্রণবিধি শিথিল করার জন্য প্রস্তুত। তবে মার্কিন শুল্ককোপের ফলে ওই দেশগুলির দেশীয় শিল্প যে চাপের মুখে পড়েছে।
মালয়েশিয়াকে ট্রাম্প যে শুল্কছাড় দিয়েছেন, তা সে দেশ থেকে আমেরিকায় রফতানি হওয়া মাত্র ১২০০ কোটি ডলারের পণ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। দু’দেশের শুল্ক সমঝোতা বিশ্লেষণ করে প্রাথমিক ভাবে এমনটাই জানাচ্ছে ব্রিটিশ ব্যাঙ্কিং সংস্থা ‘বার্কলেস’। ওই ১২০০ কোটি ডলারের পণ্য মালয়শিয়ার মোট দেশীয় পণ্যের মাত্র ২.৮ শতাংশের সমান। তার মধ্যেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফলে আমেরিকার বাজারে মালয়শিয়ার মাত্র ১০০ কোটি ডলারের পণ্যই বিনাশুল্কে প্রবেশ করতে পারবে, যা মালয়শিয়ার মোট জিডিপির মাত্র ০.২ শতাংশ।
‘বার্কলেস’-এর অর্থনীতিবিদদের মতে, চুক্তিতে মালয়শিয়ার প্রচুর পণ্যকে শুল্কে ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলে দেখানো হলেও, তার বেশির ভাগেরই সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফলে বাস্তবে এই শুল্ক ছাড়ের প্রভাব সীমিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন তাঁরা।