Donald Trump

নেই প্রমাণিত তথ্য, চেষ্টা করেও সাফল্য আসেনি অতীতে, তা-ও কেন ট্রাম্পের নজর পাকিস্তানের তৈলভান্ডারে? নেপথ্যে কী কারণ

গত কয়েক দশক ধরে অর্থনীতিতে নিজের ভাগ্য ফেরানোর জন্য তৈলভান্ডার খুঁজে বার করে তা উত্তোলনের স্বপ্ন দেখে আসছে পাকিস্তান। কিন্তু কোনও চেষ্টাই সফল হয়নি। বর্তমানের পাকিস্তান সবচেয়ে বেশি যা আমদানি করে, তা হল পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৫ ২১:৩১
Share:

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।

হতে পারে পাকিস্তানে প্রচুর পরিমাণে তৈলভান্ডার মজুত রয়েছে। তবে সে বিষয়ে প্রমাণিত তথ্য রয়েছে সামান্যই। তার পরেও পাকিস্তানের তৈলভান্ডার নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগ্রহ কি শুধু তেলের উপরেই? নাকি নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনও পরিকল্পনা? ট্রাম্প ইসলামাবাদকে তেলের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করায় কিছুটা সন্দিহান পাকিস্তানিরাও।

Advertisement

জ্বালানির তথ্য সংক্রান্ত মার্কিন সরকারি সংস্থা ‘এনার্জি ইনফর্মেশন অ্যাডিমিস্ট্রেশন’ (ইআইএ) অনুমান করছে, পাকিস্তানে ৯১০ কোটি ব্যারেল খনিজ তেল থাকতে পারে, যা উত্তোলন করা সম্ভব। তবে এই পরিসংখ্যান নতুন কিছু নয়। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে পাকিস্তানি আধিকারিকেরা প্রায়শই এই তথ্য দিয়ে থাকেন। তবে এতে খুব বেশি কাজ হয়নি। জ্বালানি গবেষক আফিয়া মালিকের মতে এর কারণ, এই তৈলভান্ডারের বিষয়ে কোনও প্রমাণিত তথ্য নেই। পাকিস্তানে প্রমাণিত তৈলভান্ডার তুলনায় অনেক কম। প্রমাণিত তৈলভান্ডারের নিরিখে বিশ্বে ৫০তম স্থানে রয়েছে পাকিস্তান, যা ভিয়েতনাম, রোমানিয়া এবং ব্রুনেইয়ের চেয়েও পিছনে।

বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির তুলনায় পাকিস্তান অনেকটা পিছিয়ে। প্রথম স্থানে রয়েছে আমেরিকা। তারা প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে। ইআইএ-র তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে পাকিস্তানে প্রতিদিন ১ লক্ষ ব্যারেলেরও কম তেল উৎপাদন হয়েছে। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে খুব কম লোকই বিশ্বাস করেন যে পাকিস্তানও তেল রফতানিকারী দেশ হয়ে উঠতে পারে।

Advertisement

গত সপ্তাহে ট্রাম্প যখন পাকিস্তানের ‘বিশালাকার তৈলভান্ডার’ নিয়ে যৌথ ভাবে কাজ করার বার্তা দেন, তাতে কিছুটা অবাক হন পাকিস্তানিরাও। কারণ, গত কয়েক দশক ধরে অর্থনীতিতে নিজের ভাগ্য ফেরানোর জন্য তৈলভান্ডার খুঁজে বার করে তা উত্তোলনের স্বপ্ন দেখে আসছে পাকিস্তান। কিন্তু কোনও চেষ্টাই সফল হয়নি। বর্তমানের পাকিস্তান সবচেয়ে বেশি যা আমদানি করে, তা হল পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য। পাকিস্তানের প্রায় ৮০ শতাংশ জ্বালানিই বিদেশ থেকে আসে। জ্বালানির ঘাটতি দেখা দিলে, বিদ্যুৎ বিভ্রাটও বৃদ্ধি পায়।

আফিয়ার বক্তব্য, লাল ফিতের ফাঁস, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং আমলাতান্ত্রিক দক্ষতার অভাবেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ হারিয়েছেন। এই কারণে কাজও বিশেষ এগোয়নি। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, মার্কিন বেসরকারি সংস্থা থেকে নতুন বিনিয়োগ আসবে। এই যৌথ উদ্যোগে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তৈল সংস্থা বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বস্তুত, পাকিস্তানে তৈলভান্ডার খোঁজার বিষয়ে সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য চেষ্টা হয়েছিল ২০১৯ সালে। মার্কিন সংস্থা ‘এক্সনমোবিল’-সহ বিভিন্ন সংস্থার এক কনসোর্টিয়াম করাচিতে খোঁজ চালিয়েছিল। কিন্তু কোনও তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার পাওয়া যায়নি। তবে হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র অ্যানা কেলির কথায়, “পাকিস্তান এবং আমেরিকা বিশাল তৈলভান্ডার নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবে। এতে উভয় দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জোরদার হবে।”

পাকিস্তানের বিদ্যুৎমন্ত্রী আওয়াইস লেঘারির কথায়, “যদি আমেরিকা, চিন এবং অন্যান্য দেশ থেকে বিনিয়োগ আসে, তবে আমরা তা স্বাগত জানাব। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নজর থেকে এটি ঠিকঠাকই লাগছে।” ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ অনুসারে, পাকিস্তানি আধিকারিকেরা ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও অনেকের মধ্যেই একটি অবিশ্বাস এবং উপহাসের সুর দেখা গিয়েছে। তাঁদের কারও কারও মতে পাকিস্তানের থেকে অনেক বেশি প্রভাবশালী এবং পাকিস্তানের অন্যতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে একটি বার্তা দিতে চাইছেন ট্রাম্প। বস্তুত, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক এবং কূটনৈতিক টানাপড়েনের মাঝেই পাকিস্তান প্রসঙ্গে এই ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ইসলামাবাদের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান আসকারি রিজ়ভীর মতে, “এই চুক্তির ফলে প্রধান সুবিধাভোগী রাষ্ট্র হওয়ার বদলে পাকিস্তান শুধুই আমেরিকার জন্য একটি লাভজনক স্থান হয়ে থেকে যেতে পারে।” আবার অনেকের মতে, পাকিস্তান নিয়ে আমেরিকার নতুন করে এই আগ্রহ যতটা না তেলের জন্য, তার চেয়েও বেশি বিরল খনিজের জন্য হতে পারে। ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ অনুসারে, পাকিস্তানে বিরল খনিজের এক বিশাল এবং অনাবিষ্কৃত ভান্ডার মজুত রয়েছে বলে মনে করা হয়। যা বৈদ্যুতিন এবং সামরিক প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনার আবহে পাকিস্তানের বিরল খনিজের দিকেও ট্রাম্প প্রশাসনের নজর থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে তেলের মতোই পাকিস্তানের বেশির ভাগ খনিজ সম্পদই অনাবিষ্কৃত রয়ে গিয়েছে। ফলে সেগুলিকে কাজে লাগানো কঠিন হতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement