গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
যুদ্ধের আবহে পশ্চিম এশিয়ায় নতুন মারণাস্ত্র সরবরাহে সক্রিয় হয়েছে আমেরিকা। এই লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৮ বছরের পুরনো ওয়াশিংটন-মস্কো ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি একতরফা ভাবে পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সৌদি আরবকে ‘এমকিউ-৯ রিপার’ ড্রোনের নতুন সংস্করণ বিক্রির উদ্দেশ্যেই ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগন এবং ভেঙে যাওয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভের মধ্যে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিতে স্বল্প এবং মাঝারি পাল্লার (৫০০কিমি-৫,৫০০ কিমি) পরমাণু অস্ত্র বহনক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রে উৎপাদনে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছিল। একে অন্যের অস্ত্রাগার পরিদর্শন করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছিল এই চুক্তিতে। পাশাপাশি, মাঝারি ও দূরপাল্লার অস্ত্র রফতানির ক্ষেত্রেও আরোপ করা হয়েছিল নানা বিধিনিষেধ।
ওই চুক্তি সই করার চার বছরের মধ্যেই স্বেচ্ছায় ২,৭০০ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছিল রাশিয়া ও আমেরিকা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের প্রথম জমানায় ওয়াশিংটন অভিযোগ তোলে, রাশিয়া গোপনে সেই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করতে শুরু করেছে। আমেরিকা ও নেটো জোটের দেশগুলিকে পাল্লার মধ্যে রেখে পরমাণু ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বসাতে শুরু করেছে মস্কো। এর পর ট্রাম্প সরকার একতরফা ভাবে চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। প্রতিক্রিয়ায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও একই কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও দেশই ঘোষিত ভাবে তা লঙ্ঘন করেনি।
হোয়াইট হাউসের ওই সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরবকে ১০০টি রিপার ড্রোন বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প সরকার। পাশাপাশি পশ্চিম এশিয়ার অন্য কয়েকটি দেশেও তা সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। ব্যবসার মোট অঙ্ক ১৪২০০ কোটি ডলার (প্রায় ১২ লক্ষ কোটি টাকা)। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ১৯৮৭-র রেগন-গোর্বাচভ চুক্তির পাশাপাশি ৩৫টি দেশের স্বাক্ষর করা ‘ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা’ (এমসিটিআর) সমঝোতাও অন্তরায় হতে পারে। কিন্তু তা এড়াতে অভিনব কৌশল নিচ্ছে পেন্টাগন। ‘নিঃশব্দ ঘাতক’ হিসেবে পরিচিত রিপার ড্রোনকে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার বদলে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের শ্রেণিভুক্ত করার তৎপরতা শুরু করেছে তারা।
প্রসঙ্গত, প্রিডেটর শ্রেণির হানাদার ড্রোন ‘এমকিউ-৯ রিপার’ ইতিমধ্যেই আমেরিকার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী কয়েকটি দেশকে দিয়েছে ওয়াশিংটন। ৫০ হাজার ফুট উচ্চতায় ২৭ ঘণ্টা ধরে একটানা ওড়ার ক্ষমতা রয়েছে আমেরিকার ‘জেনারেল অটোমিক্স অ্যারোনটিক্যাল সিস্টেমস’-এর এই ড্রোনের। সর্বোচ্চ বহন ক্ষমতা ১,৭৪৬ কিলোগ্রাম। এক দশক আগে তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মহম্মদ ওমর, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের প্রধান বায়তুল্লা মেহসুদ থেকে হালফিলে ইরানের জেনারেল কাশেম সোলেমানি এবং আল কায়দা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি হত্যায় ব্যবহার করা হয়েছিল এই এমকিউ রিপার ড্রোন। ভারত ওই সিরিজ়ের এমকিউ-৯বি সিগার্ডিয়ান সংস্করণটি কিনতে সক্রিয় বলে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি খবরে দাবি করা হয়েছে।