গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
দু’-তিন দিন ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে শোনা যাচ্ছিল বিভিন্ন গুজব। স্বাস্থ্য খারাপ থেকে মৃত্যু— বাদ থাকেনি কিছুই। সম্প্রতি নিজের সমাজমাধ্যম ‘ট্রুথ’-এ নিজের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার পরে নতুন করে গুজব রটেছিল, তিনি পদত্যাগও করতে পারেন। সব জল্পনার অবসান ঘটাতে সাংবাদিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। অবশ্য বৈঠক শুরু করতে দেরি হওয়ার জন্যেও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল মিম (ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট)। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে ট্রাম্প- প্রশাসনের কাজের খতিয়ান তুলে ধরেছিলেন তিনি। ভারতের উপর আরোপ করা শুল্ক প্রসঙ্গে মুখ খুললেন তিনি। সেই সঙ্গে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত হলে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘‘আপনি কী করে জানতে পারলেন যে আপনার মৃত্যু হয়েছে?’’ তা শুনেই ট্রাম্প বলেন, ‘‘এটা শুনিনি। বেশ গুরুতর বিষয়।’’ তার পরেই বলেন, ‘‘ভুয়ো খবর। এ সবের জন্যই গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা এত কম।’’ ট্রাম্পের দাবি, সপ্তাহের শেষে তিনি দু’দিন প্রকাশ্যে কিছু করেননি বলে লোকে বলেছে নিশ্চয়ই কোনও সমস্যা হয়েছে। অথচ এক মাসেও বাইডেন কিছুই করেন না। সকলের সামনে নিজের না আসার কারণ প্রসঙ্গে তিনি জানান, পোটোম্যাক নদীর ধারে তাঁর মালিকানাধীন ক্লাবে কয়েক জনের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কারণেই তিনি ব্যস্ত ছিলেন।
নির্ধারিত সময়ের থেকে ২০ মিনিটেরও বেশি সময়ের পরে বৈঠক শুরু হয়েছিল। ওই সময়ে সমাজমাধ্যম জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল মিম (ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট)। কটাক্ষ ছিল, ২০ মিনিটেরও বেশি দেরি হওয়ার নেপথ্যে রহস্য, ‘‘মঞ্চের পিছনে ট্রাম্পকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট। ছবি: এক্স।
ভারতের উপর আরোপ করা শুল্ক প্রসঙ্গ:
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক খুব ভাল। তবে সেই সম্পর্ক ‘একতরফা’ হয়ে যাচ্ছিল। কারণ, আমেরিকার উপরে ভারত বিশ্বের সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করেছিল। সে দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে ভারতীয় পণ্য আমেরিকায় আমদানি করা হত। ট্রাম্পের দাবি, ভারত একশো শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল আমেরিকার উপরে। তবুও আমেরিকা থেকে ভারত নিজেদের দেশে কিছু আমদানি করত না। উদাহরণ দিয়ে ট্রাম্প জানান, আমেরিকার বাইক কোম্পানি ‘হার্লে ডেভিডসন’ ভারতের অতিরিক্ত শুল্কের কারণে সে দেশে ব্যবসা করতে পারছিল না। তাঁর দাবি, ভারতের পক্ষ থেকে দুশো শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। এর পরে ওই কোম্পানি ভারতে গিয়েই নিজেদের কারখানা তৈরি করে। যার ফলে তখন ওই কোম্পানিকে অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হত না। ট্রাম্প বোঝালেন, এই ভাবে আমেরিকার কোম্পানিকে ব্যবসা করতে হলে ওই কোম্পানি শুল্কের ভয়ে ভারতে কারখানা তৈরি করতে বাধ্য হত।
অন্যান্য কাজের খতিয়ান:
বৈঠকে ট্রাম্প জানান, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে মহাকাশ বাহিনীর সদর দফতরকে আলবামায় স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। ওই এলাকা পরিচিত হবে ‘রকেট সিটি’ নামে। ট্রাম্পের দাবি, এর ফলে ৩০ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থান হবে। বিনিয়োগ হবে একশো বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। ট্রাম্পের দাবি, এর ফলে উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি আধিপত্য বিস্তারেও এগিয়ে থাকবে আমেরিকা।
তিনি জানান, ভেনেজুয়েলা থেকে আমেরিকার দিকে আসা একটি মাদক বোঝাই নৌ-যান লক্ষ্য করে কিছু ক্ষণ আগেই গুলি চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। ‘অশান্ত’ চিকাগো প্রসঙ্গে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বাহিনী মোতায়েন করা হবে বলা হয়েছিল। কিন্তু কখন করা হবে তা নিয়ে এখনও কোনও সময়সীমা দেওয়া হয়নি।’’
আদালতে ট্রাম্পের জয়, একই দিনে জুটল ভর্ৎসনাও:
জলবায়ু সংক্রান্ত অনুদানের ক্ষেত্রে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার বাতিলের জন্য ট্রাম্পের পদক্ষেপের পক্ষেই রায় দিয়েছে সে দেশের ফেডেরাল আদালত। নির্দেশ, ট্রাম্প চাইলেই তা করতে পারেন। জানা গিয়েছে, ২০২২ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাইডেন মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের হ্রাস করতে এই অনুদানের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই অনুদানই আটকাতে চায় ট্রাম্পের অধীনস্থ পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা।
তবে একটি মামলায় জয় হলেও অন্য একটি আদালতে ট্রাম্পকে এ দিন ভর্ৎসনাও করা হয়। লস অ্যাঞ্জেলেসের অভিবাসীদের বিক্ষোভ প্রতিহত করতে সেনা নামানোর পদক্ষেপ করার জন্য তাঁর প্রতি তিরস্কার করে আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেনা মোতায়েন করে যুক্তরাষ্টীয় আইন (ফেডারেল ল) অমান্য করা হয়েছে।
রবিবার চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার ভারতীয় সময় বেলা ১২টার কিছু পরে মোদী-পুতিন বৈঠকও শুরু হয়েছিল। তার থেকে মাত্র আধ ঘণ্টা আগেই সাড়ে ১১টায় ভারতের মার্কিন দূতাবাসের সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছিল আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়োর বার্তা। তাতে লেখা হয়েছিল, ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী। এই সম্পর্ক আরও উন্নত হবে। সোমবার নয়াদিল্লিকে এই ভাবেই বার্তা দিয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ সেই বার্তার পরে মঙ্গলবারে সাংবাদিক বৈঠকেও নিজের কাজের খতিয়ান পেশ করতে এসে আবার সুর নরম করে ভারতকে বার্তা দিলেন ট্রাম্প।