হাসপাতালে আবদুল্লাকে আদর করছেন বাবা আলি হাসান। ছবি: ফেসবুক
শেষ বারের মতো দু’বছরের ছেলের হাত দু’টো ধরতে চান মা। ভেন্টিলেশনে থাকা জটিল রোগাক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী ছেলেকে চোখ ভরে দেখতে চান। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর-নিষেধের জেরে মায়ের সেই ইচ্ছেয় প্রশ্নচিহ্ন পড়ে যায়। কারণ মা ইয়েমেনের নাগরিক। এখন রয়েছেন মিশরে। ট্রাম্পের দেশে তাঁর ঢুকতে মানা! শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই হতে মার্কিন বিদেশ দফতর অবশ্য সেই মা, শাইমা সুইলে-র ভিসা মঞ্জুর করেছে। আমেরিকান-ইসলামিক কাউন্সিলের উদ্যোগে মিশর থেকে আমেরিকাগামী প্রথম যে বিমান আছে, তারই টিকিট দেওয়া হচ্ছে শাইমাকে।
অকল্যান্ডের শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে শাইমার ছেলের। তবে চিকিৎসকরা আর ভরসা দিতে পারছেন না। ছেলের মুখটা আর দেখতে পাবেন না— ভেবে এত দিন যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন শাইমা। তাঁর ছেলে আবদুল্লা হাসানের জন্মের কিছু দিন পরে মস্তিষ্কের জটিল রোগ ধরা পড়ে। ইয়েমেনেই জন্ম আবদুল্লা ও তার বাবা আলি হাসানের। কিন্তু তাঁরা আমেরিকারও নাগরিক।
আলির পরিবার ’৮০-র দশকে ক্যালিফর্নিয়ায় চলে আসে। কিন্তু ইয়েমেনে বাকি স্বজনদের সঙ্গে তাঁদের ভালই যোগাযোগ ছিল। আবদুল্লার মস্তিষ্কের অসুখ ‘হাইপোমায়ালিনেশন’ ধরা পড়ার পরে দেখা যায় ছেলের শ্বাস নিতে অসুবিধে হচ্ছে। আট মাসের শিশুকে নিয়ে সেই সময় ইয়েমেনে ছিলেন আলিরা। পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত সে দেশ ছেড়ে বাধ্য হয়ে তাঁরা চলে যান মিশরে। মাত্র তিন মাস আগে আলি ছেলের চিকিৎসার জন্য ফিরে আসেন আমেরিকায়। সেই মুহূর্তে কিছু অসুবিধেয় তাঁদের সঙ্গে আসতে পারেননি শাইমা। আলি ভেবেছিলেন, স্ত্রী পরে চলে আসবেন। এর মধ্যেই অকল্যাল্ডের হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, আবদুল্লার হাতে আর বেশি দিন নেই। গত শনিবার জন্মদিন ছিল শিশুটির। চিকিৎসকদের কথা শোনার পর থেকে আর স্থির থাকতে পারছিলেন না শাইমা। তবে আমেরিকায় আসার চেষ্টা করতেই জানা যায়, তাঁকে ভিসা দেওয়া হবে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরে বেশ কিছু দেশের নাগরিকের উপরে এ দেশে ঢোকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা চাপান। এই নিষেধ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হলেও ইরান, উত্তর কোরিয়া, ভেনেজুয়েলা, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া এবং ইয়েমেনের নাগরিকদের জন্য কার্যকর হয় নিষেধ।
আলিদের পাশে দাঁড়ায় আমেরিকান-ইসলামিক কাউন্সিল। আই-১৩০ ভিসা নিয়ে আসবেন শাইমা। মার্কিন নাগরিকদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের এই ভিসা দেওয়া হয়। সবার এখন একটাই প্রার্থনা, মায়ের সঙ্গে ছেলের শেষ দেখাটা যেন হয়।