প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আমেরিকার রাস্তায় রাস্তায় নাগরিক-বিক্ষোভ। শনিবার। ছবি: রয়টার্স।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জোরালো হচ্ছে মার্কিন মুলুকে। শনিবার দেশ জুড়ে তাঁর এবং তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল দেখা গিয়েছে। পথে নেমেছিলেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। রাজধানী ওয়াশিংটন তো বটেই, নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, বস্টন, লস অ্যাঞ্জেলেস— প্রতিটি বড় শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। স্লোগান উঠেছে, ‘আমেরিকায় কোনও রাজা নেই’।
ট্রাম্পের একাধিক নীতিতে রুষ্ট মার্কিন জনতা। প্রতিবাদে পরিকল্পিত ভাবেই শনিবারের বিক্ষোভ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছিল। নাগরিক সংগঠন ‘নো কিংস্’-এর ডাকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মানুষ পথে নেমেছিলেন। উদ্যোক্তাদের দাবি, সবমিলিয়ে ৭০ লক্ষের বেশি মানুষ জমায়েত করেছিলেন আমেরিকার রাস্তায়। শুধু নিউ ইয়র্কেই ছিলেন লক্ষাধিক প্রতিবাদী। ট্রাম্প যে ভাবে সরকার চালাচ্ছেন, তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করে এই বিক্ষোভ। ‘নো কিংস’ কর্মসূচির ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) ভাবেন তাঁর রাজত্বই সর্বশ্রেষ্ঠ। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমেরিকায় কোনও রাজা নেই। আর আমরা কোনও বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি এবং নিষ্ঠুরতা সহ্য করব না’।
আমেরিকায় মোট ২৭০০টি বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছিল। দাবি, প্রতিটিই অপ্রত্যাশিত ভাবে সফল হয়েছে। মানুষ ট্রাম্প-বিরোধী প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নেমেছিলেন। সেখানে আট থেকে আশি, বাদ নেই কেউ। ৭০ বছরের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক পেগি কোলের কথায়, ‘‘আমার মনে হচ্ছে, ট্রাম্প আমাদের সরকার, গণতন্ত্রটাকে দখল করে নিচ্ছেন, ধীরে ধীরে এবং নিশ্চিত ভাবে তা ভেঙে ফেলছেন। আমরা প্রতিবাদ না-করলে এটা আটকানো যাবে না।’’ আর এক প্রতিবাদী মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে বলেন, ‘‘এটাকেই গণতন্ত্র বলে। ঘৃণা নেই, ভয় নেই এখানে। অভিবাসীদেরও স্বাগত।’’ আটলান্টা প্রদেশের বিক্ষোভে অনেক ডেমোক্র্যাটিক নেতাও শামিল হয়েছিলেন। প্রতিবাদীদের বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমরা গণতান্ত্রিক দেশ। গণতন্ত্রে মানুষ রুখে দাঁড়াতে পারে, নিজেদের কথা নিজেরা বলতে পারে। আমাদের চুপ করানো যাবে না।’’
ট্রাম্পের কোন কোন নীতিতে ক্ষোভ?
দ্বিতীয় বার আমেরিকার কুর্সিতে বসার পর থেকেই সরকারের একাধিক নীতি বদলে ফেলেছেন ট্রাম্প। অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তাঁর নীতি কড়া হয়েছে। এইচ-১বি ভিসার উপর মোটা অঙ্কের মূল্য চাপিয়ে দেশের ব্যবসায়ী সংগঠন এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে চটিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। তাঁর শুল্কনীতির কারণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে। বিশ্বের দরবারে দীর্ঘ দিন ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা আমেরিকার ভাবমূর্তি কলুষিত হচ্ছে ট্রাম্পের আমলে, দাবি বিশেষজ্ঞদের একাংশের। ট্রাম্প আমেরিকানদের প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে দাবি করেন। তাঁর মতে, অভিবাসীদের দেশ থেকে সরানো, এইচ-১বি ভিসা নীতি— সব কিছুর নেপথ্যেই আমেরিকানদের স্বার্থ লুকিয়ে। কিন্তু আমেরিকারই একটা বড় অংশের মানুষ যে তা পছন্দ করছেন না, তা শনিবারের ছবি থেকেই স্পষ্ট।
গত ১৭ দিন ধরে আমেরিকায় ‘শাটডাউন’ চলছে। অর্থের অভাবে প্রশাসনের জরুরি নয় এমন পরিষেবাগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চালু কেবল আপৎকালীন পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত দফতর। অনেক সরকারি কর্মীকে বেতন ছাড়া কাজ করে যেতে হচ্ছে। শিক্ষা এবং গবেষণার খাতে আমেরিকার বরাদ্দ কমায় অনেক গুণী মানুষ অন্য দেশে চলে যাচ্ছেন। ভারতীয় নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সস্ত্রীক আমেরিকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে খবর। এই ঘটনাগুলি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, মত পর্যবেক্ষকদের।