সন্নিতি বিশ্বাস
সময় বদলেছে। বদলেছে দৃষ্টিভঙ্গি। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অনেকটাই ভেদাভেদ ঘুচে গিয়েছে নারী-পুরুষদের মধ্যে। এই সত্য আজ বিশ্বজনীন স্বীকৃত। দৈনন্দিন জীবনের সব ক্ষেত্রেই আজ নারীর অংশগ্রহণ রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারীরা বিশ্বের দরবারে সমাজের মুখ উজ্জ্বল করছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু সেই নারীই যখন সমাজের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সংগ্রামের সঙ্গে সঙ্গে পাঞ্জা লড়েন ক্যানসারের সঙ্গেও? ক্যানসারকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে জিতে যান জীবনের যুদ্ধে? তাঁর কাহিনি আমাদের পাঠকদের অনুপ্রাণিত করতে বাধ্য!
গল্পটা সন্নিতি বিশ্বাসের। তাঁর জীবন ভরা চড়াই-উৎরাইয়ে। ‘আগুনে মেয়ে’ সন্নিতি কলেজের পাট চুকিয়েই চাকরি পেয়েছিলেন এক নামকরা হোটেলে। কিন্তু ছোট থেকেই তিনি চেয়েছিলেন, নিজের মতো করে কিছু করবেন। ব্যতিক্রমী কিছু করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। সেই ভাবনা থেকেই নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন সন্নিতি। তৈরি করেন অর্গানিক বিউটি প্রোডাক্টের একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান— ‘অ্যালিওর হার্বাল’। খাঁটি উপাদানে তৈরি, একশো শতাংশ হার্বাল প্রোডাক্টই এই কোম্পানির ইউএসপি। তাদের একটি ওয়েবসাইটও রয়েছে — www.allureherbals.com।
শুধু আয়ুর্বেদিক পণ্য বিক্রিই নয়, সন্নিতির একটি বিউট ক্লিনিক ও স্পা-ও রয়েছে নিউ আলিপুরে। যেখানে অ্যালিওর হার্বাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করে ত্বক এবং চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হয়। রয়েছে স্টাইলিংয়ের ব্যবস্থা। এ ছাড়া, ফেসবুকে সন্নিতির একটি অনলাইন সেলিং গ্রুপও রয়েছে। যার সদস্য সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ।
জীবনে চলার পথে বার বার বিভিন্ন বাধার মুখোমুখি হয়েছেন সন্নিতি। তবে কোনও বারই দমে যাননি। বরং ঘুরে দাঁড়িয়েছেন নিজের মতো করে। সন্নিতির জীবন যখন সহজ ভাবে চলছিল, সেই সময়েই ক্যানসারের মতো মারণ রোগের কবলে পড়েন তিনি। কিন্তু অদম্য মনের জোর এবং ইচ্ছাশক্তিকে সম্বল করে হার মানেননি কিছুতেই। ধৈর্য ধরে নিজের কাজ করে গিয়েছেন। যাতে তাঁর ব্যবসায় কোনও খামতি না থাকে। পাশাপাশি চালিয়ে গিয়েছেন নিজের কাজও। জীবনের জোয়ারে ভেসে ফিরতে তাঁকে যে সাঁতরে যেতেই হত! নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের কর্মযজ্ঞে মেতে ছিলেন বলে, জীবনও তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছে দু’হাত ভরে। ক্যানসারের চিকিৎসা চলাকালীনই সন্নিতি শুরু করেছিলেন তাঁর অর্গানিক বিউটি ক্লিনিক ও স্পা। বর্তমানে সেই ক্লিনিকে নিয়মিত বহু মানুষ আসেন তাঁদের ত্বক, পায়ের পাতা এবং চুলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে।
নিজের আত্মবিশ্বাসে ভর করে এবং লক্ষ্যে স্থির থেকে সন্নিতি আইএসও (ISO) সার্টিফায়েড এবং এফডি অ্যাপ্রুভড (FD Approved) হ্যান্ডমেড কসমেটিক্সও বানাতে শুরু করেন এর পরে। যার সাফল্য ও জনপ্রিয়তা কলকাতার গণ্ডি পেরিয়ে এখন পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছে। এত সংগ্রাম করার শক্তি তিনি পেলেন কোন জাদুবলে? সন্নিতির কথায়, “জীবনের সব প্রতিকূলতাই কাটিয়ে ওঠা যায় যদি নিজের উপরে বিশ্বাসটুকু অটুট থাকে।” নারী সমাজের গর্ব সন্নিতিকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন না জানিয়ে পারা যায়?
আরও অপরাজিতাদের গল্প জানতে ক্লিক করুন —অপরাজিতা ২০২৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy